Thursday 7 June 2018

সুজিত মান্না

গুঞ্জন

১।

অনায়াসে কাছের বাগানফুল মুখ নামিয়ে নিচ্ছে । গাছেরা নামিয়ে রাখছে ডানা । দেখতে দেখতে বাগানমাটির একদম কাছে পৌঁছে যাই । বাগানে কি কোনোদিন আয়না পাওয়া যায় ! কিন্তু প্রতিবারই যখন মাটি ছুঁই , চোখের মধ্যে হাজারো ধুলো ঢুকে যায় ।

ঘরের মধ্যে আসি । জামারা হাত নামিয়ে রাখে । সমস্ত দেওয়াল মুখ সরিয়ে নেয় । ঠিক উল্টোদিকে ঘুরে যেন আমায় বিদায় জানাবে । আমি হয়তো এতটাই অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছি !

আমি তারপর আর মানুষমুখো হইনি । মানুষের মুখ ফিরিয়ে রাখা আমার কাছে ঝরে যাওয়া গাছের জীবনপ্রীতির মতো । আমিও দিনদিন কেমন ঝরে যাচ্ছি । এই হাঁটাপথে কোনো সূর্যজোনাক নেই । এই রাস্তা শুধু মুখ ঘুরিয়ে আমায় চোখ বুজিয়ে নিতে বলে । নীরবতা তাহলে কি এতটাই আমার প্রয়োজন হয়ে পড়লো !

২।

কোনোদিনই বৃষ্টি একা আসে না । আমাদের খেয়াল করতে হয় কোথায় না জানি কীভাবে রোজ ঘটে চলেছে হাজারো ঘরে ফেরা । তুলে রাখি সমস্ত সুখের পায়রাদানা । কাকতলীয় মুহূর্তদের ঘাঁটতে ঘাঁটতে পৌঁছে যায় আমার শেষপ্রান্তে । হয়তো এভাবেই আমিও শুধু নীরবে শ্বাস নেওয়ার জন্য একাধিক শব্দ করে যাবো ।
     
                  আমার ডুবে যাওয়া হয়তো একটা ধর্ম লেখা আছে । প্রতিবার ডুবে যাই আর বালি খুঁজে খুঁজে তুলে আনি জীবনপাথর ।

অন্যমনস্ক রাত বলে কিছু নেই । যেগুলো আমায় দেখে রোজ লোকে চোখ বন্ধ করে , সবই মর্মান্তিক কোনো এক বজ্রপাতের নৈঃশব্দ্য পালন । খুঁজে চলি হাত , ঠিক যেভাবে শেষমুখ একটু জল চেয়ে খায় ।

৩।

ভিজতে থাকা মনের গভীর দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে তার প্রান্তে দাঁড়িয়ে একদিন জোর করে চিৎকার করেছিলাম ― কেন এত চলাফেরা , কেনই বা এত নিজেকে খাদমুখী করে তোলা । কেউ উত্তর দেওয়ার মতো ছিল না । কেবল হেঁটে যাওয়াই যে মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত , খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবিষ্কার করেছিলাম ।
 
                      এক শিশুমুখ রাস্তা পেরিয়ে বসে যায় ফুটপাথ জুড়ে , আমি কান বন্ধ করে হাঁটার চেষ্টা করি । এই দুনিয়ায় শুধুমাত্র শুনে শুনে কোনো পাহাড়জয় হয় না ।

হাঁটতে হাঁটতে সেদিন এতটাই এগিয়ে গেছিলাম , লাল হলুদ সবুজ রঙ মিশে গিয়ে যেন আমায় আহবান করতে থাকে । আমি হাত বাড়িয়ে দিই , ক্রমশ সেই মুখ আমায় ভেতরে টেনে নেয় । তারপর আর ফেরা হয়নি বহুকাল ।