Tuesday 1 August 2017

সম্পাদকীয় কলম



এই যখন এসব লিখতে বসছি জানালার বাইরে থেকে বৃষ্টির সুন্দর একটা শব্দ ভেসে আসছে সাথে একটা দারুন হাওয়া । ভাবি যদি এটা গ্রাম হতো তাহলে হয়তো এই শব্দের সাথে একটা গন্ধও পেতে পারতাম । কদিন আমার নিজের এলাকা মানে ঘাটাল বন্যার সাথে ক্রমাগত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে চলছে । কত মানুষের বাড়ি চলে গেছে কত মানুষ বড়ো রাস্তার ওপর এসে মাথা তুলেছে । এখান থেকেই ভাবি বৃষ্টি ,ভারী বৃষ্টি এসব শহুরে এলাকায় যথেষ্ট মনোরম।শহুরে কাঁচের অপর প্রান্ত থেকে হয়তো রোমান্টিক মনে হয় কিন্তু সামনে থেকে বন্যাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি বলে হয়তো এটা একটা অনুভূতির জায়গা থেকে বলতে পারি বন্যা কোনোদিনই রোমান্টিক ছিল না এবং আগামী সূর্যতেও রোমান্টিক হওয়ার দিকে যাবে না..।
     বেশি কথা বলতে মন করছে না । চারদিকে ভেসে যাওয়ার চিৎকার যেন কানে আসে । এর মধ্যে কাব্য নিয়ে চর্চা করা খুব কঠিন । তাই যাবতীয় এবারের ত্রুটি ও পত্রিকাকে ভালোভাবে না সাজাতে পারার কারণ আমি মাথা পেতে নিচ্ছি..। আমাদের অসুবিধার জন্য গত সংখ্যার আফজল আলির ধারাবাহিক গদ্যটি এবারের সংখ্যায় দিতে অপরাগ । সেই দায়ও মাথা পেতে নিচ্ছি...।
      অনেক লেখাই পেয়েছি প্রায় শতাধিক কিন্তু আমরা একটা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে চলার কথা মাথায় রেখে তার মধ্যে কিছু শতাংশ লেখাকেই স্থান দিতে পেরেছি । আমি দুঃখিত অনেকের লেখা রাখতে না পারার জন্য । আপনারা হয়তো ভালোই লেখেন কিন্তু আমাদের পত্রিকা দপ্তরে আসা সমস্ত লেখাকেই সুযোগ করে দেবে এমন জোড় করে ভেবে নেবেন না..। আমরা ভালো লেখাকেই সুযোগ দিই। আমরা লেখাকে মনোনীত করি ।
     এর পরের সংখ্যা শারদীয়া সংখ্যা করার একটা প্ল্যান আছে আপনাদের সকলের উৎসাহ এবং সাহায্য পাওয়ার আশায় রইলাম..।।


কৃতজ্ঞতা স্বীকার ::

অলংকরণ :  রুমা ঢ্যাং 

সহ-সম্পাদকীয়


প্রচণ্ড দাবদাহে আমরা যখন বর্ষাঋতুকে ভুলতে বসেছি তখনই সাগরের বুকে গভীর ক্ষত নিম্নচাপের। ভাসিয়ে নিয়ে গেল জেলা থেকে জেলা। আমরা তবুও থেমে নেই, জলের উপর তরী ভাসিয়ে এগিয়ে চলেছি দৈনন্দিন জীবনে। ব্যাঙের ডাক যেন ঘুমপাড়ানি গান। ঝিঁ ঝিঁ পোকার মতো অন্ধকারে 'কবিতা'পাশকাটিয়ে চলে যায় আবার ফিরেও আসে। রোজকার পরিবর্তনের মতো পরিবর্তন ঘটছে কবিতায়। এই যেমন GST ঢুকে গেল আমাদের সংসারে। হয়তো একদিন কবিতারও কর দিতে হবে টিকে থাকার জন্য। তবুও আমরা থেমে থাকবো না, কবিতাকে বিসর্জন দেবো না। লিখতে থাকবো আপন খেয়ালে, 'জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট 'কে কাঁধে করে। ২০-৫০ বছর পর হয়তো আবার বদলাবে  কবিতার ভাষা। নিয়ম করে যেমন শাসক পাল্টে যায়, ১৩ এর পর ১৪ এসে যেমন দেশের ভার কাঁধে তুলে নেয় তেমনই কোনো রাম নাথ কোবিন্দ কবিতাকে বহন করে নিয়ে চলে বিশ্ব দরবারে। আবিষ্কারই পৃথিবীকে পথ দেখিয়ে এসেছে, তাইতো আমরা আজও আবিষ্কারের উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে ভাসিয়ে দিই। এভাবেই কবিতারা যুগ যুগ বেঁচে থাকবে আমাদের অন্তরে। সমস্ত পরিবর্তনকে মাথায় নিয়ে আমরা কবিতাকে নতুন পোশাক পরাবো। তাইতো প্রতিমাসে নতুন ভাবনার দিগন্ত খুলতে হাজির হই 'অন্তহীন' নিয়ে। আসুন আমরা সবাই সামিল হই এই সাহিত্যচর্চা, কবিতার মেলায়। যেখানে আমরা সবাই পসার সাজিয়ে রাখবো কবিতার।





অয়ন মন্ডল
সহ-সম্পাদক ,
অন্তহীন পত্রিকা

রুমা ঢ্যাং







আবার আষাঢ় ঘনিয়েছে

(১)

যখন স্রোতস্বিনীর টানে
কচুরিপানার কুম্ভকর্নের ঘুম ভেঙে যায়
গতি পায় ছুতোরের ভ্রমিযন্ত্র
বস্তুও ভাসমান
কেননা এখন আবার আষাঢ় ঘনিয়েছে

ছুঁচোরকেত্তন করার জায়গা নেই
কুকিসের মধ্যে থেকে ফুলে উঠেছে নোনাজল
যে দূরত্ব শিরোধার্য হল তার জন্য
একবার আমার পালিয়ে যাবার সমূহ ভাবনাটাকে
                 সাময়িক পোশাক পরালাম
এই বিশ্বে ভাসাভাসা কথারা ফুলঝুরি ফোটায়
আর তারা সবসময়েই অ্যাপার্টমেন্ট বানায়
স্বল্প জলে
আজ আর আমার কোন রক নেই বসার

(২)

শহর ছুঁয়ে ঘরে ফিরছে এখন কলমিলতারা
পায়ের শব্দ কানে গেলে
নদীর খুব কাছ থেকে উড়ে যায় কালো পায়রা

উড়ছে স্বপ্নচ্যুত শাড়িও
উচ্ছিষ্ট মৃত ফুলকে আশ্রয় দিয়ে বসবাস
কাদামাটির
তার পাশেই বাড়ি বানাচ্ছি জীবন দৈত্যের জন্য

(৩)

রাস্তা থেকে ফাঁপা জেটি পর্যন্ত এগিয়ে
 পিঠে লাল ব্যাকপ্যাক নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম
আমার বিপরীত দিক থেকে আসার কথা ছিল ষ্টীমার
যেন একযুগ শেষের পরে
  আসা যাওয়া মিলে যাবার পয়েন্টে দেখলাম ভাঙা ক্রাচ
থামব কি!
নিঃশ্বাসে হাওয়া লাগিয়ে
          ফুলদানীর বদলে ছোট্ট মাছের বয়ামে বরঞ্চ সাজাই
ড্রেসিংটেবিল
লক্ষীপেঁচা ঘুমিয়ে পড়ুক শিকারকৃত কাজ সেরে
আমার এখন রাতজাগার পালা

তৈমুর খান






চারটি কবিতা 
         ১
        বাঁক
    ________
কত বাঁক আসে
নৌকারা ডুবতে ডুবতে জেগে ওঠে বাঁকে
দিন ও রাত্রিগুলি ঢেউ তোলে , হাসে
একে একে সব নৌকা নিরুদ্দেশে যায়
           ২
           নতুন রাস্তা 
        ___________
দু একটা নতুন রাস্তা
বিকেলের কলোনিতে রোজ খুঁজে ফিরি
দেখা হয় , প্রেমের সন্ন্যাসীরা ফিরে আসে ঘর
ঘরে ঘরে ভরে যায় প্রেমের বাগান
        ৩
       প্রস্তাব
   _________
গর্জন মুদ্রিত করি  চলো, বিদ্রোহ মুদ্রিত করি
বিবেকেরা চাবুক হাতে উঠে দাঁড়াক
বিবেকেরা সভ্যতা শাসন করুক
         ৪
         দীর্ঘ পথের শেষে 
       ________________
জলের দিকেই জল গড়িয়ে যেতে পারে
ইতিহাস শুধুই কঙ্কাল
দীর্ঘশ্বাস থেমে যায় মনীষীলোকের ক্লান্ত শিশুর
তবুও দাঁড়াই আমি তার অপেক্ষায়.... 

উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়




পকেটে চাঁদের টুকরো




মেঘের সাথে গল্প করি গভীর জঙ্গলে
মেঘও আমার পাশে শুয়ে পড়ে
                      ঘাসের ভেতর
একটি জলপায়রা উড়ে আসে
খানিকটা আদর খেয়ে উড়ে যায়
ভেসে আসে বাতিল রিংটোন
অসম্ভব পিছুটানে ছিঁড়ে গেছে                    
                 গিটারের তার
 সিক্রেট টেম্প্ টেশনের খুশবু
        এতদূর কিভাবে ছড়ালো ?

সে বার সন্ধ্যায় চাঁদ তোমার চিবুক ছুঁয়ে
টুকরো- টুকরো ঝরে পড়েছিল
তারই একখানা পকেটে রেখেছি

জানি জামা ছিঁড়ে যায়
তারও আগে খসে যায় সুগন্ধি বোতাম
আলোহীন মায়াহীন ধূসর পাথরের টুকরো
কেন যে  সযত্নে রাখি নিজেও জানিনা....





 নিউরোন


ঘুমানো সহজ
স্বপ্ন দেখা কঠিন

ঘুম ভাঙার সঙ্গেই কিছু স্বপ্ন ভেঙে গুঁড়ো
ফেলে দিই----এবং ফেলাই উচিত

যে স্বপ্নগুলো বিছানা থেকে লাফিয়ে
রান্নাঘরে বারান্দায় ফুটপাতে ঘুরে বেড়ায়
আর কিছু না হোক তাদের তো ছুঁতে পারি
তারা তো কাছাকাছিই থাকে

আজকাল ঘুমের মধ্যে
স্নায়ুতন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করে
জেগে গেলে নিউরোন, ইফেক্টর ,রিসেপ্টর
সবাই অচল

উদিত শর্মা




বৃষ্টি যখন



সকাল থেকেই শ্রাবন ধারা।
পুরোনো ছাতা টইটুম্বুর ভেজা জলে

টালীর ছাদ ফুঁরে টুপটাপ,
সারা ঘর ভেসে যায় ------
এখানে ওখানে ফেলে রাখা পাত্র থেকে
অপটু হাতে জল ছেঁকে চলি।

এতো বৃষ্টিতে আজ আর আসেনি কেউ
তবু দরজায় এ কার পদধ্বনি

সে আর কেউ নয়
হাজা হাতে বিশ্বজননী।

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়



ছোটো লেখা 



এই শান্ত ভাব
ঝরার বালাই নেই
আরেকটু লাই দিলে
ঝাঁপিয়ে নামবে বালক

২.
স্নান সারা পাতাদের গায়ে
অল্প রোদ
স্নিগ্ধ আলো
চোখ তোমাকে চাইছে

৩.
মেঘমল্লার শেষ হলে
ঠোঁটে রাগ ভাঁজতে ভাঁজতে
সরোদে
ডাক আসছে ,আকবর আকবর

৪.
উনুনের কাছে জল এলে
রান্না হয় না
টিনের চালের নীচে
ফুটো দেখছে স্মার্ট জীবন

৫.
নদী কাছে এলে
টের পায় শব্দ ভাঙনের
তোমার আমার দোষ নেই
এটাই প্রকৃতি

সিলভিয়া ঘোষ



প্রিজম বন্দী ইচ্ছেরা





প্রিজম বন্দী করেছিলাম
ইতি উতি উড়তে থাকা পাখির পালকের মতোন
কিছু ইচ্ছার ডানাদের

মোমবাতি হাতে নিয়ে লক্ষ্য করেছি
তার থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ
সব ইচ্ছেগুলো, যার গায়ে লেগে আছে ঝুলন, পুনম,
মৌমা, সিন্ধু, দীপা, বুলা, ছন্দার মতোন সোনার রঙের
সব পালক

আর কিছু ইচ্ছে পালকেরা লড়াই করে চলেছে
বেঁচে থাকার জন্য সেই আদি কাল থেকে সীতা, মাদ্রি,
 দ্রৌপদীরদের সাথে তাল মিলিয়ে, তাতে সামিল হয়েছে বাঘ নখের আঁচড়ে ঘায়েল সূচবিদ্ধ সাড়ে তিন

একটা একটা করে বেঁচে থাকা ইচ্ছা পালকদের
যুদ্ধ করতে শিখিয়ে দিচ্ছে, হেরে যাওয়া ইচ্ছেগুলো
জয় আসবেই, প্রিজম বন্দী সব ইচ্ছাদের রঙ হবে
সাত সুরে বাধা ধবধবে সাদা সেদিন......






প্রতিবিম্ব



প্রতিদিন নিয়ম করে তোমার সামনে
এসে দাঁড়াই, বারবার প্রশ্ন করি
কে বেশী বিজ্ঞানী....

প্রশ্ন শুনে তুমি খানিকটা হাসতে থাকো
তাসপর ঈশারা কর বুকেপ দিকে
যেন বলে দাও.....বুকে হাত রেখে বলতো
সাদা রঙ চেনো তো এখন!

তোমার আমার দেখা হওয়াটা
 রোজ জরুরী হয়ে উঠেছে
আরশির, তোমার উপর আমার
প্রতিবিম্ব কেমন যেন সাদা থেকে ধূসর হয়ে যাচ্ছে.....


শব্দরুপ ঃ রাহুল





আর কোনো ঝর্না নয়   অথবা জলপ্রপাত
এখনো রাস্তাগুলোর    পথিক নিয়ম বাকি
      হিসাবে যে সব অ্যালজেব্রার আঁচড়
  স্লেট পেন্সিলে দাগ মুছে গেলে
মৌ-বৃত্তের আঁতুড় কথা।কি হবে নীল লাল কবিতায়
ভোরের বর্ষা নামার আগেই
তুরীয় জ্যা-ক্লিপে    কেউকেউ স্বরবর্নীয় দহন
আবেদনের তুলিতে     কখনো দাবানল

তাই ভালো
ঘর পুড়ুক।মেঘ পুড়ুক।ফুল পুড়ুক।মোম পুড়ুক
আমরা বেশ প্রেমজনিত আতিথেতায়
ব্যর্থ নিকোটিনের চুমুক পরবর্তী

নয়নিকা।১-মুঠো ফলিত বনপলাশে
আকুল কাজলের টান  পারলে বন্যা দিও


বিশ্বজিৎ দাস




ভাঙনকথা





টেবিল অসমাপ্ত
কা
ঠে

ভি


ক্লোরোফিলের ডাক...


খুলির বোবা ইশারা
সাবানের ফেনায় ঝরে

চ্ছ
মৃ
ত্যু


কা

মোহমুগ্ধ বারান্দায় আলো!


বৈপরীত্য থাকে না অন্ধকারে
চামড়ার ওপরে ঢেউ খেলে

স্তি
ষ্ক


ঘোলা আর আঠালো ঘূণ
চেয়ে থাকো আক্রান্ত ঘুম


স্বপ্নে মৃত্যুর মুখোমুখি
বেঁচে আছি ভরদুপুরে কেন

দি

লি
প্রে

ধ্বংসের বুকেও আনন্দ
আর ভাবনামুক্ত খুলি কয়েক সেকেন্ডের জন্য...

বিশ্বজিৎ বাউনা


সহচরী


রোজ তুমি আমাকে যে শূন্যতা দাও
সেই হাঁ-মুখ প্রবণতায় ডুবে ডুবে যাই,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাই প্রেমিক কাঠামোয়...

জোগাড় আস্থার নেপথ্যে অগাধ ভুগে যাচ্ছে যেভাবে শিকড়

আমি কোনোদিন উগরাতে পারব না
      দোঁ-আঁশ স্বপ্নের নিহত লাভা

চড়াও হওয়া গিরগিটি শুয়ে থাকে আজ
               আমার একচিলতে থ রাতের ফালি জুড়ে


পতন-স্বভাবী 


সরে যায় জল , স্রোত মুঠি ভেঙে
চামচের নড়াচড়া নেই থিতিয়ে যাওয়া সম্পর্কে​...

নিভে যাওয়া আলোয় রেঙে
কে ছাই ওড়ায় আড়াআড়ি ফের শূন্যের আবর্তে

একা একা গুমরাই যতবার , পাই টের-

চোখ থেকে ভিজে যাওয়া একাকী দৃশ্যের​ ডগায়
            আমি তো পতন-স্বভাবী

শুধু প্রেম আঁকড়াই ধুনুরি মুগ্ধতায় ।

আদনানুর রশিদ

হ্যালুসিনেশন ৬


নির্বাসিত দেশে দোদুল্যমান আমরা
দেখুন ভগবান
বাসের হাতল কি ভীষণ আক্রোশে চেপে বাদুড়ঝোলা হয়ে আছি

সেক্টর এ সেক্টর বি
এস্কেলেটর-এ স্লোলি পা দিতেই
বুকের নিচে ডার্ক হাউস নিউরোলজি

হ্যাঙওভার কাটছে না
অফিস ডেস্কে ঝিমুচ্ছি

আবছা আবছা স্বপ্ন আসছে...
মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে ফসিলশব্দ--

শাট আপ... স্টপ দা নন্সেন্স...
আমি থোড়াই কেয়ার করি...
চা নাকি কফি
গো টু হেল... টেক লেফট দেন রাইট...

অরুণকুমার দাস


১।
প্রথম পাঠ





ঈশ্বরের হাতুড়িটা হারিয়ে যাবার পর
পুতুল বানানো ডাইসগুলো অযত্নে ইতিউতি ছড়ান

মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেনি শয়তান
শয়তান তার ডাইসগুলো ঈস্বরের ডাইসের সাথে
পালটে নিল

অটোডাইস, খুব দ্রুত পুতুল তৈরি হতে থাকল
হাতুড়ির আর প্রয়োজন হলনা

ক্লান্ত ঈস্বর যখন ঘুমোচ্ছিলেন তখন তার
সম্মুখে পুতুলগুলো ডাইকরে রাখা হল
ঈশ্বরের প্রশ্বাশে কোটি কোটি পুতুল প্রাণ  পায়

সেই থেকে পৃথিবীতে বর্ণ বৈশম্য আর বৈচিত্রের শুরু



২।
নকাউট পর্বের দর্শক আসনে আমি


বোতলের ভেতরের ঝড় উস্কে দিচ্ছে যে হাওয়া
শহর বিন্দাস,পারাপার নকাউট খেলছে
আমি তথাকথিত অক্ষরের ইতিহাস খুঁজি
পাবলিক বিকেল জলের ভঙ্গিতে  থৈ থৈ কথার কার্নিভাল
বারান্দার ওপারে মেঘ জমে চার পয়েন্ট হারালাম
স্ক্রিনে বিক্রিবাট্টার রঙ ফিকে যাসুস
বোতামের লম্বা দাঁড়িতে যে দুটো স্তন এখনো অদৃশ্য
তা আসলে ফ্যান্টাসি
আসল আয়নাটা বিক্রি হয়ে গেলে দ্বিতীয়
নকলে সংসার উপত্যকা
যে কোন ছাদে বসে ট্রাম করা যায়
জহুরীরা এভাবে ছাদ পাল্টালে খেলা জমে ক্ষীর

ধরো দুটো পরাবাস্তব ঘোড়া
একটাকে পকেটে ঢুকালে অন্যটা ছুটিপেয়ে
আকাশ বেড়াতে যাবে

অসীম মালিক

আঘাত

                 

গাছগুলো অস্থির হাওয়ায় দুলছে ,
একান্তই নিজস্বে ছন্দে ...

একটি গাছ অপর গাছকে জাপটে ধরে ,
আবার কখনও বা আঘাত করছে l
একে-অপরকে নিবিড় ভালবেসে l
              --রক্ত ঝরছে না l

সবুজ পাতায় অনুরণিত হয় ,
বৃষ্টি ও রোদ্দুরের কবিতা l
ঝড়ের কবিতা গাছের নিকট উপেক্ষিত l
মেঘের কবিতা গাছেরই লেখা l
                  একমাত্র মাটিই যার মর্মার্থ বোঝে ...

গাছের পাঠশালায় পড়তে আসা অগণিত মানুষ
মেঘপুঞ্জে ভেসে  বেড়ায় ,
                   কিন্তু বৃষ্টির অর্থ বোঝেনা l

কুঠারের পিছনে গাছের হাতল লাগিয়ে
শিকড় খুঁজে না পাওয়া মানুষগুলো
                  লিখছে রক্তের কবিতা l 

চয়ন দাশ


সিন্থেসাইসড শবনম





প্রতিটা প্রশ্নের কোণে শুন্যতা মিশে থাকে।
বরফজমা নদী গলে মুক্তি পাচ্ছে
শীতপ্রজন্মের পাখির দল।
আততায়ী বাক্যেরা বিসর্গজাতীয় গাছের ছায়ায়
জিরিয়ে নিচ্ছে ভাবিকাল। আমার আর তোমার
মৃতদেহের উপর বানিয়ে দিয়েছে বুকখোলা নারীর
গ্রানাইট স্কাল্পচার।
সর্বভুক পিঁপড়ের দল বিনা প্ররোচনায় ভিড় করে আসে।
ওদের সর্দার খোলাচিঠিয় জানিয়েছে,
আমাদের জারজ ঘিলুয় কোনো মৃগনাভির জীবাশ্ম নেই

 আমাদের দেহে নাকি কোনো , শ্বেতসার নেই

মৃণালিনী


তবুও তো  আছি বেঁচে


           ১
কত অভিনয় কত ছলনা
কত যে ধাক্কা কত যে হোঁচট
নীরব সংখ্যার শূন্য-
একের পিঠে বেড়েই চলেছে ক্রমশ
ক্লান্তিহীন তার পথ, চলা অন্তহীন।

একটুকরো আকাশে মাঝে যন্ত্রণার অসীম নীলাকাশে
একটি তারা চাঁদের আলোয় টিম টিম জ্বলছে
              সবকিছু আঁকড়ে তবুও তো আছি বেঁচে।

                  ২
গ্রীষ্মের দুপুরে ছাতা- সান্ত্বনা বাক্যের আড়ালে
লম্বা ছায়ার সঙ্গে কত যে পথ হেঁটেছি
       মরুচিকার উপদেশে নির্জন মরুভূমিতে।




অসাড় শরীরে  স্বপ্নের রঙ কালো হতে হতে
দেখেছি ধূসর রঙ
               তবুও তো  আছি বেঁচে ।


            ৩

শ্রাবণের বর্ষাধারায় প্রতিবেশীর মুখোশ
বর্ষাস্নাত রাগ রাগিনী সবুজ আবেশে
       প্রতিদ্বন্দ্বী পরকীয়া দাবার কোর্ট।

সমুদ্রের ঢেউ- তোলপাড় কিনারায়
লবণাক্ত বিন্দু বিন্দু ফোঁটা
দিশেহারা-
প্রতিক্রিয়ার কাঁটায় বিদ্ধ প্রিয়ের শব
কাঁধের ওপরে অনাথ শোক-
জলন্ত চিতার আগুনে ওঠে আসা ছাই...
সিঁদুরে সিঁথি সংসার  রূপক-সাঙ্কেতিক-উপমা ঘেরা
                               তবুও তো আছি বেঁচে।

         
              ৪
Top of Form
রোজের গঞ্জনায় উঠে আসা বঞ্চিত জীবনে
সন্দেহ সমালোচনার ফুসলানির নাগপাশ
খালি পেটে হাসি মুখে নিঃসঙ্গ ঘরের কোন।
কালো হরফে নীরব বন্ধু
অক্ষরের গায়ে দু’জোড়া কালো চোখের গড়িয়ে পড়া
বিন্দু বিন্দু জলের নিজস্ব শ্রাবণ নিয়ে
                             তবুও তো আছি বেঁচে।

                   ৫
কত না অবহেলা কত না অপমান
কত না প্রভোলন কত না স্বার্থের বাণ
ঘাসফুলের ভাগ্যরেখায় ফুলদানীহারা
এক কোনে মাথা উঁচু করে আছি ফুটে
কখনও পায়ের চাপে দীর্ঘশ্বাস আত্মহারা
                   তবুও তো আছি বেঁচে।

                                                          

প্রদীপ কুমার ঘোষ



▪ স্ক্র‍্যাপবুক

পেজ - ১

দেবগুপ্ত পৃথিবী। তার কেটে গোল।
ফোনিমে সরগম্। খাঁজ খোঁজে শিকারি।
তরকারিতে এঁটো নুন। সরবতে পাখির মল।
হৃষ্টপুষ্ট চুপচাপ : অখাদ্য নৈঃশব্দ্য ভোজে জিভে লাল…
টপ্-টপ্।

পেজ - ২
গোষ্ঠীগত ছক : উড়ন্ত পায়রার গা থেকে ঝরে পড়ে
ফেদারটাচ্ কোড ল্যাংগুয়েজ। বিশুদ্ধ বিশ্বাসে
গৃহীত হয় নামাবলির পাঁঠা।
নঙ্ তৎপুরুষ ঘাঁটলে সক্কাল সক্কাল : গুরু বলে সন্মান দেয়
স্যালাড টু স্লামডগ। সিদ্ধান্ত : স্লামবার।

পেজ - ৩
জারজ বংশোদগম্। ভোর ভেবে চুষছো
বিকেলতাপ লজেন্স। এভাবে ক্লিটোরিস চাটনি।
শ্বাসঠাঁপ। ক্রমাগত উষ্ণায়ন। ভার্বাল ব্লোজব।
পাঁ*ফাঁক : বিভেদচিহ্নের উদারিকরণ। সেল!সেল!সেল!

পেজ - ৪
হুরহুরে বাতাস। গায়ে লাগাও। আর
ডিভাইন সুখসাগরে বলো - বিসমিল্লাহ্‌।
ফাংগাস অ্যাটাকে কুটকুট। সত্য।
তবু শেষ সত্য বস্তিদেশের চকোলেট।

পেজ - ৫
হসন্তধর্মী জীবন। কাঁটায় কাঁটায় হাতঘড়ি।
অদরখ্ বিশ্বাস - কড়াই কড়াই পাঠশালা।
দ্বিপদী ---- মনোরেল অ্যাকসিডেন্ট।
স্যাচুরেটেড ফুল মাগ কফি। হাফবয়েল ভূগোল।


▪ ট্যারেন্টুলা'জ স্পিচ

১.

কলকবজা-হাতুড়ি আমার গান চুরি করে
পলাতক। উঁচু বাঁশের মাথায় গরিলার
আর্তনাদ। আস্তে আস্তে পরিস্ফুট হচ্ছে আমার
ভয়েস। কোনোদিক থেকে বয়ে যাচ্ছে মৌসুমি বায়ূ।

আরাম দিয়ে শুইয়ে দাও আমায়। উঠবো না আর
পুরো একবিংশ শতাব্দী। ভাঙা কাঁচ জুড়ে
আমার জন্য হোক এক মদপাত্র। আমিও তো
এভাবেই বাঁচতে চাই - সেলোটেপের ফাঁকে হুইস্কির গন্ধে।

২.

বাতপতাকা দুলিয়ে ভূমিকম্প। অড়হড়ের ডালে
ভেসে যাচ্ছে - বুক।পেট।     আঁচল: খসিয়ে দাও
বাল্মীকি হাওয়া। পত্ররন্ধ্র টেনে নিক নিকোটিন শ্বাস।
হুবহু টুকে দিক - সালোকসংশ্লেষ। কোষবিভাজন।

ম্যারিনেট করা মাছে - ডিম বাঁচে? অবয়ব?
কত হৃৎপিন্ড - খুঁড়ে আনা যায় কবর পিরামিড।
নক্সাস ভূ-বৈচিত্র‍্য ঘেঁটে স্পঞ্জ রসগোল্লা তুলতুলে -
স্প্রিংয়ের উপর : উপর-নিচ। উপর-নিচ। উপর-নিচ।

৩.

রঙ গুললে মিক্সড ফ্লেভার। চাই
গ্লুকোজ : সার। কীটনাশক। বীজ।
রুপোর থালায় কোকিলের ডিম।
খুন্তিচেটে পরিষ্কার করছি খুচরো পাপ।

চুল ঘেঁটে এলিয়েন জালক। মিথ্যা
সংসার : কাব্য। গদ্য। নাটক।
ভ্যাজাইনাল ড্রামায় ঘাম পরিষ্কার করে
উদ্ভট মেথর। বাণী ঝাড়ে : চিচিং ফাক্।

রিম্পা নাথ

শুধু তোমার কথা
                     

উদ্দেশ্যহীন ভাবে তাকিয়ে দেখো
আমার চোখে তুমি একটা সম্পূর্ণ তুমি দেখতে পাবে
ভালোবাসি।ভালোবাসো।
ও হ্যাঁ। মনে পড়েছে
সেদিন ফুল তুলতে গিয়ে অনুভব করেছিলাম
হঠাৎ ল লিখতে গিয়ে হাত ফসকে
                        ল
                        া
                        ঠ
                        ি
পুঁইশাকের মাচা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলো
আর আমি আগের মতো আবার তোমাকে
আলুপোস্ত ডালে গুলিয়ে ফেল্লাম...॥

শানু চৌধুরী

মেডিক্লেম



ক্যাশলেশ এই শুশ্রুষা
বাদামের খোসার মতন অসুস্থ
জ্বর লিখি দেওয়ালে দেওয়ালে

মাছের আঁশের মতন ব্যথা
বাসি আঁশের মতন আপরাগ মেহসুস চিহ্ন লিখি খতের
অবিবেচক শ্রুতির মস্তিষ্কে

মেডিক্লেম এখনও হলোনা
ওষুধের প্রকোপ বেড়ে ওঠা দিনে হাসপাতালের বিহ্বল সূচীপত্রে

জ্যোতির্ময় মুখার্জি

 শব্দরা এখানে কথা কয় 


হলুদ সন্ধ্যায় বায়বীয় অনুভূতিগুলো
সিলিং-এর ছোঁয়,
ভার্মিলিয়নে ভেজা মোটিফ গুলো ছিল যথাক্রমে এরকম -

১: ক্ষুধার্ত গ্লাস ।
২ : আধপোড়া সিগারেটে লিপস্টিকের দাগ ।
৩ : বাথটাবে গলন্ত শরীর ।

...... দৃশ্যগুলো দ্রুত সরে যেতে, নেশাতুর ঠোঁটে সর্পিল গতি।
মোটিফ গুলো তখন মায়োপিকে সুররিয়াল।

এখন তুমি পরস্পরের গায়ে হেলে থাকা তিনটে রেখা টানো, মোটিফ গুলো প্রতিস্থাপিত করো তিন বিন্দুতে,
তারপর ছেড়ে দাও কিছু শব্দ, শব্দরা এখন হাঁটুক... ছুটুক... ডিগবাজি খাক।


 ০ বাউন্ডারী



রেড সিগন্যাল, ট্রাফিক জ্যাম্, জেব্রা ক্রসিং তার পিঠের দাগটুকুও তুলে ফেলেছে ঘসে ঘসে... রাস্তায় টায়ারের দাগ দগদগে ঘায়ের মতো...

কিউ তে দাঁড়িয়ে সারি সারি মৃতদেহ, হয়তো দেখা যাচ্ছে না ওদের কিন্তু ওরা আছে, সীমা ছাড়ানোর অপেক্ষায় ....
পায়ে জড়িয়ে কাঁটাতার।

অয়ন মন্ডল

হতে পারে প্রেম! 


চশমা পরা যে মেয়েটা স্বপ্নে আমার
   কপালে হাত রেখেছিল

তাকে আমি ছুঁয়ে দেখিনি

এইভাবে রোজ তোতাপাখি আতাফলের সকাল নিয়ে আসে

আলিপুরদুয়ারে হোডিং জুড়ে যে মেয়েটা মিষ্টি হাসছে
হয়ত আমি তাকেই দেখেছি
      প্রজাপতি রঙে...

বৃষ্টি ভেজা শহর খালি পেটে বানভাসি হবার স্বপ্ন দেখল

অথচ রোজ কোথাও না কোথাও প্রেমের ফুল ফোটে

প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলো হারিয়ে যাওয়া প্রেমের খোঁজ রাখে

এতক্ষণে লাল নীল পোশাকে যে মেয়েটাকে দেখলাম

তাকে আমি শ্রদ্ধা বলে ডাকি