Saturday 1 July 2017

সম্পাদকীয়

বর্ষার প্রতিলিপি


দেখা দিল অন্তহীন আরো একবার
মাতৃফসল হিসেবে সবুজের ডানায় রোদ্দুর পেলো বর্ষা

এভাবেই যুগে যুগে আত্মহারা হবে এইযুগের কবিদের দল
আসলে কবি নয় , 
                              ইচ্ছেদের সাজানো যন্ত্রনা 


যাইহোক যেখানে শেষ করেছিলাম গত সংখ্যা।এই জগতে বাইরে থেকে যতটা শান্ত স্থিতিশীল মনে হয় আসলে সেটা যে কতটা জটিল সেটা বোধহয় কয়েকদিন কাটানো যেকোনো তরুণ কবি/লেখকও বলে দিতে পারবে..। এইখানে আমি আঘাত আনতে চাইছি..। কেন আমরা এত নির্মম হতে যাবো..। আমরা কি কিছু একটা পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এখানে পা রাখছি? জানিনা কজনের ক্ষেত্রে এর উত্তর সঠিক আসবে এবং শুনবো ,না কিছু পাওয়ার জন্য না কিছু দেওয়ার জন্য জন্ম নিয়েছি কিছু দিতে চাই..। 
                     যাইহোক এর মধ্যে বলে রাখি শহর জুড়ে বর্ষা বেশ উলুধ্বনি দিয়ে ঢুকে পড়েছে আমাদের জানালায়।এই জাগতিক সমস্ত দিনগুলো দেখছি কেমন যেন একটা বর্ষা বর্ষা ভাব নিয়ে রোমান্টিক হয়ে উঠছে।কেউ কেউ এই রোমান্টিক সুরের মাধুর্যে বেছে নিচ্ছে "ধূসর পাণ্ডুলিপি" আবার কেউ সমস্ত রসটুকু আত্মসাৎ করে চলে যাচ্ছে কোনো সত্যের জগতে , কোনো কবিতার জগতে।আর তার কিছু ছায়া এসে পড়ছে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। হাওয়া এক এক কান থেকে আরো ঘুরতে ঘুরতে ছড়িয়ে পড়ছে এদিক ওদিক।রঙিন হচ্ছে যাবতীয় relationship।প্রেম ফিরে পাচ্ছে কিছু প্রেমিক আবার কিছু জংলীর দল। ছোটবেলায় খুব মনে পড়ে এই বর্ষার দিনে তখন ইলেক্ট্রিক আসেনি কিংবা এলেও বর্ষা হলেই গ্রামে ইলেক্ট্রিক থেকেও নেই কিংবা আমি আছি তুমি আমায় কাজে লাগাতে পারবে না এমন অবস্থা।যাইহোক সেইসব দিনে সন্ধ্যার পর বৃষ্টিতে পুকুরগুলো সুন্দর ডাক তুলতো।আসলে আমি জানি ওগুলো ব্যাঙ।কিন্তু এই ব্যাংকেই পুকুর মনে হয় আজ।হ্যাঁ অবশ্যই কবিতার জন্য। নস্টালজিয়া..। এখনকার বর্ষা আবার অন্যভাবে উপলব্ধির ব্যাপার একটা..। আসলে এখানেও এসে যায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার..। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে নতুনের প্রসঙ্গে পাল্টে নেওয়ার ব্যাপার..। 
                   এই বর্ষার দিনে জানিনা কে কেমন ভাবে কবিতাকে উপলব্ধি করেন । সত্যিই জানিনা..। আমার তো ভালো লাগে কেউ যদি সামনে কবিতা পড়ে আমি দুটো চোখকে তৃতীয় নয়নের সাথে পরিচিতি ঘটিয়ে চুপ করে বর্ষার নিঝুম টুপটুপ শব্দের সাথে কবিতার শব্দের সমাবেশ ঘটিয়ে শুনতেই পছন্দ করবো..। নিছক হৃদয় দিয়ে শুনলেই মনে হয় ঢুকতে পারবো প্রতিটা কবিতার অন্তর্বতী প্রতিটা আবেগে প্রতিটা ইন্দ্রিয়চেতনায়।এই প্রসঙ্গে কবি অমিয় চক্রবর্তী-র একটি কবিতা খুব মনে আসছে - 
     
" অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।
বৃষ্টি ঝরে রুক্ষ মাঠে,দিগন্তপিয়াসী মাঠে,স্তব্ধ মাঠে ,
মরুময় দীর্ঘ তিয়াষার মাঠে , ঝরে বনতলে ,
ঘনশ্যমরোমাঞ্চিত মাটির গভীর গূঢ় প্রাণে
শিরায় শিরায় স্নানে , বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে। "

            এই কবিতার বর্ণনা করতে গিয়ে একসময় বুদ্ধদেব বসুও উচ্চারণ করেছিলেন এমন ভাবে যে -" এইসব পংক্তিগুলি অন্ধকার মধ্যদিনে গুনগুন করে আবৃত্তি করার যোগ্য , কারণ এর ছন্দ বৃষ্টিরই ছন্দ। " 
        এমনই কিছু কবিতা হবে আর সাথে বৃষ্টির মরসুম..। আহা!!! কবি জীবন না এভাবেই পাঠক হয়ে বেঁচে থাকা যায়..। এখন যখন লিখতে বসেছি এখন জুন এর শেষদিক..। কবিদের মধ্যে বছরের যাবতীয় ব্যস্ততা মোড়া একটা দিন..। মাত্র তিনমাস আছে শারদীয়াকে..। আর শারদীয়া মানেই কবিদের বিচরণের এক অন্য মাধ্যম..। যাক সেকথা পরের কোনো এক সংখ্যাই বিস্তারিত আলোকপাত করার চেষ্টা রাখছি..। 
         ইতিমধ্যে বলে রাখি গত মাসের অর্থাৎ ৯ম সংখ্যা ৩০০০ হাজার বার পড়া হয়েছে..। যেটা আমার মতো একজন নির্বাক নির্জন কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সম্পাদকের জন্য অনেকটাই..। সম্পাদক না..। আপনারা লেখা পড়ুন..। লেখার প্রচার করুন..। আপনি নিজেরটা পড়ুন..। আরো অন্যের পড়ুন..। পারলে কারো কারো লেখা শেয়ারও করুন..। সত্য যে লেখা সুন্দর সে লেখা কেন আমরা ছড়িয়ে দেব না? তাই ছড়িয়ে তো দেওয়াই যায় কারো লেখা...। হোক না সেটা আমার পছন্দের লোক না..। আরো একটা প্রসঙ্গ..। গত সংখ্যায় রুমাদি ও রাহুলদার নিয়মিত কমেন্ট পেয়েছি অনেক লেখায়..। এতে লেখকদের উৎসাহ বাড়বে..। শুধু নিজেরটা পড়ে চলে যাবেন না এটুকু অনুরোধ..। আসুন না একটা পরিবার হয়ে ছড়িয়ে দিই যে কিছু ভালো...। কিংবা অন্তত উৎসাহ দিই..। এটুকুই আশা রইলো..। ভাবছি পরেরবার থেকে আলাদা একটা কলাম রাখবো "অন্তহীন মতামত কলাম" যেখানে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত রাখতে পারবো..। আপনারা বলবেন আমরা পত্রিকা কতৃপক্ষ ভেবে দেখবো যদি ঠিক বা ভালো বলে মনে হয় মেনেও নেব এবং সেটাকে নিয়ে এগিয়ে যাবো...। আসুন আমরা পালা বদল না লাইন বদল না..। আমরা কবিতায় বদল হয়ে উঠি...। 



কৃতজ্ঞতা স্বীকার : - 

শুভদীপ সেনশর্মা - অলংকরণ 




নমস্কার
-সুজিত মান্না

সহ-সম্পাদকীয় কলম

বর্ষার প্রেমে যখন ফুটবল পায়ে কচিকচি মুখগুলো মাঠে নেমে পড়ে, আমি তখনও কদমফুলের মায়া কাটাতে পারিনা। প্রতিটা বর্ষার মুখ তাকিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে তাই সে যদি হয় তার মেয়ে বা ঋতু। বিশ্বউষ্নায়নের দোর গোড়ায় দাঁড়িয়ে একফোঁটা বৃষ্টি পড়লে কবিদের খাতায় কবিতা চাষ হয়। জানালায় হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয়া কিংবা রঙবেরঙের কাগজের নৌকা ভাসানোর মধ্যেও যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে কবিতা। কল্পনার জাল বিস্তার করে আমে, দুধে কবিতা যাপন করি সবাই। কবিতাকে জীবনের অঙ্গ করে তুলতে পারলে বোধহয় অনেক দুঃখ সুখ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেবে রথ কিংবা ঈদের মেলায়। কবিতাই পারে মানুষের মনের কথা বলতে, তাইতো প্রতিমাসে "অন্তহীন"নিয়ে পৌঁছে যাই আপনাদের কাছে। আর আবদার করি ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির মতো শব্দ সাজাতে। কবিতা যাপনের উপযুক্ত পরিবেশ যদি গড়ে তুলতে পারি তাহলে আগামী দিনে আমরা আরও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে পারব। আসুন আমরা সকলেই এক টুকরো কাগজ একটা কলম তুলে নেই আর মনের আঙিনায় একটার পর একটা কবিতার বীজ বপন করি।

আফজল আলি




কবিতায় শব্দের জাড্য ধর্ম ও নিউটনের গতিসূত্রের প্রয়োগ










নিউটনের গতিসূত্র অনুযায়ী আমরা জানি কোনো বস্তুকে বাইরে থেকে বলপ্রয়োগ না করলে স্থিতিশীল বস্তু চিরকাল স্থিতিশীল এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল একই বেগে থাকবে।এখন বাইরে থেকে বাইরে থেকে বলপ্রয়োগ একটা ফ্যাক্টর।শব্দ নিয়ে ঘাঁটতে ঘাঁটতে নিউটনের এই সূত্রটাই কবিতার ক্ষেত্রে খুব প্রযোজ্য বলে মনে হয়েছে।শব্দ-বাতাস উড়ে বেড়ায় অথবা অভিধানে ধরা থাকে।কোনো শব্দ যখন শুধু শব্দ হিসেবে থাকে তার কার্যকারিতা আমরা সেভাবে বুঝতে পারিনা।কিন্তু সেই শব্দ যখন কোনো কিছুর দ্বারা আকড়ে আবদ্ধ হয় ,তখন সেই শব্দ শক্তিশালী হতে আরম্ভ করে।সেই শব্দের মধ্যে বস্তুগুন কার্যকরী হয় । গীতা কোরান বাইবেল ত্রিপিটক জিন্দাবেস্তা ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ , বিভিন্ন মন্ত্র ,কবিতা,এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে গদ্য ,এসবের মধ্যে আমরা সংঘবদ্ধ শব্দের রুপ প্রবল থেকে প্রবলতর দেখতে পাই।পূজাপাঠ বা নামাজে ঠাকুর দেবতা বা আল্লাকে সন্তুষ্ট বা স্মরণ করার জন্য যা উচ্চারিত হয় পদ্ধতিগত সমাহারের মাধ্যমে তা তো নিশ্চয় সংঘবদ্ধ শব্দ ,শব্দমালা ।বিভিন্ন ভাবে গ্রন্থিত ।আমরা জানি যে বিশ্বের প্রথম উচ্চারিত শব্দ "ওং" ধ্বনি।মন্ত্র এবং ধর্মগ্রন্থে উচ্চারিত শব্দের শক্তি বা ক্ষমতা দেখে আমাদের পূর্বপুরুষরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে শব্দই "ব্রহ্ম"।এখন শব্দের উপর ব্রহ্মাত্ব আরোপ এমনি এমনি আসে না । সব মানুষের মধ্যে ঈশ্বর থাকেন কিন্তু সব মানুষই ঈশ্বরের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ দেখাতে পারেন না বা কার্যকরী হয় না।তা মহাপুরুষই পেরেছেন ।Prophet, রসুলরাই পেরেছেন।শব্দের মধ্যে যে নিহিত শক্তি থাকে তা কার্যকরী করতে গেলে বাইরে থেকে শক্তি দ্বারা প্রভাবিত করতে হয়।আর তখনই আমরা দেখতে পাবো শব্দের বস্তুগুন ।শব্দ হলো বস্তু ভাব বা কার্যকরণের প্রতিনিধিত্ব রুপ। কাজেই বস্তুর দ্বারা কার্যকরণের অনুভব ধরা থাকে শব্দরন্ধে।
                   নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের apllication কবিতার ক্ষেত্রে বলতে গিয়ে যে প্রসঙ্গগুলো উঠে আসছে তা তো এড়াতে পারিনা।কবিতার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই থাকলেও আমরা জানি কবিতা হলো একপ্রকার reflection যেখানে শব্দ সমাহৃত হয়।বিভিন্ন tuning এ বিভিন্ন frequency তে। Reflection বলতে যা বুঝি তা হলো কিছু ভাব বা কথন কবিতার দ্বারা reflect হতে থাকে।আমরা বাইরে থেকে tuning বা frequency দেখতে পাই না,বুঝতে পারি না;কিন্তু একজন নির্দিষ্ট দীক্ষিত পাঠক বা কবি ঠিক ধরতে পারেন সেই reflectionএর তীব্রতা ।ঠিক এই জায়গাটিতে বাইরে থেকে শক্তি প্রযোগ হয় এবং শব্দের মধ্যে বস্তুগুন আরোপিত হয়।বাতাসে শব্দ ওড়াউড়ি করে।কবি তার কল্পনা এবং মানসিক শক্তি দিয়ে সেই শব্দকে নামিয়ে আনেন এবং নির্দিষ্ট শব্দ সজ্জা তৈরি করে কবিতার রুপ দেন।সেই শক্তি প্রয়োগ করে শব্দকে কতটা সচল বা কার্যকরী বা বেগবান বা শক্তিশালী করতে পারব সেটা নির্ভর করছে কবিকৃত শব্দের ওপর তার মধ্যস্থ শক্তি কত কার্যকর হচ্ছে।এই কার্যকারীতার উপরেই কবিতার থেকে অপর একটি কবিতা ফারাক হতে আরম্ভ করে; এখানে শব্দের বেগবান হওয়াটা বাইরে থেকে বুঝতে পারি না,কিন্তু তৈরি হওয়া reflection বা কম্পনের তীব্রতা থেকে কবিতার গভীরতা ও মান নির্ণয় করা যায়।এই জায়গাটিতেই কবিতার ক্ষেত্রে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের প্রয়োগ দেখা যায়।এবং শব্দের জাড্যধর্ম কার্যকর হয়।
                    এই বাহ্যিক শক্তি (শব্দকে বস্তু ধরে) আবার অনেকগুলো শক্তির সমাহারে নিবিষ্ট।যেমন কবির জন্মগত প্রতিভা কল্পনাশক্তি, আহোরিত অভিজ্ঞতা , ভাবদর্শন ,মেধা,পরিবেশ এবং কবিত্ব শক্তি ।এই বাহ্যিক শক্তির দ্বারা কবিকৃত কবিতার তীব্রতা ভাবের প্রকাশ এবং কবিতার হয়ে ওঠার ডিগ্রি/ ঘাত নির্ভর করে।
                     একজন নতুন লিখতে আসা যে কেউ কবিতাকে কিভাবে দাঁড় করাবেন তা নির্ভর করে তার ভিতরের তৈরি হওয়া শক্তি দিয়ে শব্দকে কতটা তীব্রতায় সচল করতে পারবেন বা কম্পন সৃষ্টি করতে পারবেন ।এই তীব্রতা বা কম্পন তৈরি হয় শব্দ প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে।কিভাবে প্রয়োগ করেছেন , কিভাবে ব্যবহার করেছেন । অর্থাৎ বাহ্যিক শক্তি দ্বারা কবি কতটা বল প্রয়োগ করতে পারলেন শব্দের উপর- এখানেই তার লেখনী শক্তির সার্থকতা ।-এর উপরেই কবিতা হয়ে ওঠে কাঁচা দুর্বল ও rediation হীন।শক্তিশালী কবি শব্দটা এভাবেই এসেছে কারন তিনি শব্দের উপর তীব্রশক্তি প্রয়োগ করতে পারেন,তাই শক্তিশালী কবির কবিতা শক্তিশালী হয় ।শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে ভাবার প্রকাশ,জটিলতা বা সরলতা নির্ভরশীল নয়। যা নির্ভরশীল তা হলো প্রতীয়মানতা। একটি শক্তিশালী কবিতা তার ওপর আরোপিত শক্তির গুনে তীব্র হয়ে ওঠে, তৈরি করে communicating power এবং তা আলাদা হতে আরম্ভ করে এবং সেই তীব্রতা এসে পৌঁছায় পাঠকের কাছে, পাঠককে ধাক্কা দেয় , আন্দোলিত করে এবং গোদা বাংলায় আমরা বলি পাঠক তৈরি হয়।একটি কবিতা সময় উত্তীর্ণ হবে কিনা তা কবিতার মধ্যে নিহিত শক্তির উপর নির্ভরশীল।
                           অভিজ্ঞতা শব্দটি কবিতার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযোজ্য।দর্শনে অভিজ্ঞতা বলতে শুধু বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনার কথা বলা নেই,বরং বলা আছে পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভবের মধ্য দিয়ে এক বয়ে চলা।চোখ দিয়ে দেখা কানে শোনা ,পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ক্রিয়াশীলতা মন ও মননের উপর ।
          কাজেই কবি শক্তির মধ্যে আমি যে  অভিজ্ঞতার কথা বলেছি তা শুধু কবির পড়াশুনার উপর নির্ভরশীল নয়।
দার্শনিক হাইডেগার বলেছেন- ' কবি এবং সৃজনশীল মানুষেরাই পারেন তাদের মধ্যে নিহিত শক্তি দ্বারা ভাষার পরিবর্তন ঘটাতে এবং সমাজে সেই প্রভাব ক্রিয়াশীল হয়।' আমরা বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে দেখতে পাই আমাদের হাজার বছরের কাব্যভাষা কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে শক্তিশালী কবিদের দ্বারা ।এবং সমাজ ও পাঠকও আন্দোলিত হয়েছে সেইভাবে।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের হাত ধরে তা পরিচিত হয়েছে আবার কারো কারো হাতে খুব তীব্রভাবে যেমন মাইকেল মধুসূদন , রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ । এর বাইরে অনেক কবি আছেন যাদের দ্বারা বাংলা কাব্য ভাষা পরিবর্তিত হয়েছে বা আন্দোলিত হয়েছে বিভিন্ন যুগ বা সময়ের প্রেক্ষিতে ।তা আমি আলোচনা করছি না কারণ আমরা তো সবাই জানি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস।
বরং পরের সংখ্যায় দেখাই কবিতার ক্ষেত্রে বাহ্যিক শক্তি কিভাবে কার্যকরী হয়।


                                                                *** ক্রমশ ***

মুরারি সিংহ




হিজলপাতা থেকে কিছু অনুবাদ 

১.
তালশাঁস সাঁতলানোর নাচ-ফোড়নে
কৃষ্ণপক্ষে নড়ে ওঠে জলগুচ্ছ
ডার্করুমের পিছনে হুবহু
এসেছি মানুষ সেজে চলে যাব
এইমাত্র যে পাতাটি খসে পড়ল
তার আড়ালে কিছুটা বয়সও
পুকুরের জলে কেউ ঢিল ছুড়েছে
ঢেউ ভেঙে যাচ্ছে জলজ কিছু মুহূর্ত
মিনার-বিজলি-ছবিঘরের জলবায়ুতে
আমি কি ঠিকঠাক
নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম
কী জানি ভূমিকম্পের হিপ-পকেট থেকে
এখন কিছু পুরোন বাদামভাজা বের করে
কুট কুট করে দাঁতে কাটছি আর ভাবছি
সিলিংফ্যানের সাঁতারের নীচে
নিজেকে আরেকবার গুছিয়ে নিতে হবে
নিজেকে আরেকবার গুলে নিতে হবে
ঘুড়ি-ওড়ানো শহরতলির অচেনায়
নিভু-নিভু উলুধ্বনি থেকে
পুরোন জং ছাড়াতে গিয়ে
আমার এই নাকানিচোবানি দেখে
বাড়ি ফিরে ছেঁড়া মন
কেন যে ফিক করে হেসে ওঠে

২.
গরম বাড়ছে তাহলে এবার
ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডাপানি খাই
আচ্ছা বলুন তো মহাশয়
ফ্রি-ল্যান্স শুভদৃষ্টির মন রাখতে
পাখিদের কক্ষপথে আর কতবার
এই-আমি নিজেকে কপি-পেস্ট করব
বনতুলসির আত্মজন ভেবে নাহয় গতরে
ব্যঞ্জনবর্ণ পালন করব আরো কিছুকাল
নাহয় এত সব রোদ-বৃষ্টির
গণপিটুনিতে ভাঙতে ভাঙতে
টুটাফুটা বিবাহবার্ষিকী দিয়েই
নিজস্ব বেঁচে-থাকাটিকে সেলাই করে নেব
আর চুইংগামের মৌলবাদকে ডেকে বলব
আরবসাগরের ঢেউয়ের যদি টায়ার-পাংচার হয়
রাবার-স্ট্যামের পাকস্থলি থেকে দু-চামচ ঈশ্বর
                       নেমে এসে
এই ধর্মান্ধ গ্রীষ্মকালের স্টেপনি বদলে দেবে

৩.
কুয়াশা-মাখা কলেজ-ক্যাম্পাস থেকে
পিছলে পড়া ঝুমচাষে
এ-নগর আলোকিত হয়েছে বড়ো দীর্ঘকাল
আমার যে-ঘর এখন বিষের ছোবলে জরজর
সুধার কবলে পড়লে
এতদিনে সেও হয়ে যেত সৌধ
ওই কারো শবযাত্রার পিছু পিছু
সাদাকালো দিনগুলি চলে যাচ্ছে ঢ্যাং ঢ্যাং
আমি কিন্তু কোথাও যাচ্ছি না বাপু
একা একা বসে আছি ছাদে
সামনের টেবিলে ফাঁকা কফিকাপ
পোড়া সিগারেট
একটা দীর্ঘশ্বাস ক্রমশই
হয়ে উঠছে গায়ে-গতরে


৪.
স্লেজ-গাড়ির মিছিল থেকে কবে যে দলছুট হলাম
তীর্থভ্রমণ থেকে খসে পড়া যে-সব ঠোঁট
তাদের শোবারঘরের ফোটোস্ট্যান্ডে
আমাকে বাঁধিয়ে রাখতে চেয়েছে
আমি তাদের মাটিতে লাঙল চালিয়েছি
উষ্ণতা বপন করেছি বার বার
বলেছি হে ভোলামন গয়না পরো
               আর আয়না দেখো
প্রেম ও বিরহের ধ্বনিতত্ত্বে
আমার ক্ষতচিহ্নগুলির লাফালাফি দেখে
বিশুদ্ধ কদমতলা থেকে কে যেন বলল
পরের পুকুরে ছিপ ফেললে
যে কোনো মিনারেল-ওয়াটারও
অবৈধ হয়ে যায়
চিঙড়িমাছেদের ডাকা শিল্প-ধর্মঘটে
কে বলল একথা
পাখি রোদ শিউলিফুল ও শীতকাতরতা
আমি তো সবার কাছ থেকেই
ঝাল ঝাল আলুপোস্তর
        কিছু অনুবাদ ভিক্ষা করেছি

ভজন দত্ত



সংসারীকথা

                     
১.      

খারাপের রা নেই

রাখি
থাকে থাকে মন

এস্পার ওস্পার
কোথাও তো ভরোসা নেই
রাম বা রহিম

চাঁদ খোয়া গেল মাঝপথে
বড়শিতে মাছ লাগে কই

ফাৎনায় কার
আনুভূমিক বাসনায়
অক্ষর পুড়ে যায়...

২.

ভাঁজে বিন্দুর নাম রাখি হীরা

আদরের পিপাসিত জিহ্বা
শিককাবাবের ঝালমশলায়

হায়
তৃণবৎ পুড়ে যায় সংসার

আরবসাগর থেকে জমা জল
এনে ঢাল বানাই
কিছু নষ্ট অক্ষর লিখি ছুটন্ত ঘোড়ায়...

৩.

পোশাকের শোক নেই
শুধু জড়ানো মায়ায় গায়
" এবার মরলে সুতো "

উত্তম অভিমান রেখে
কেউ সাহসী নির্বাসন খোঁজে
জগন্মোহনীতে
মজেছে এবিশ্ব এসংসার

পথের বাঁকে বাঁকে
ভালোবাসার
বিধিসম্মত সতর্কীকরণ লেখে কে... 

বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

প্রোথিত  শিল্পভাবনা


যেভাবে ভাবনা আসে
চলে যায়  ধীরে ধীরে      বিস্মৃতির   ধুলোমুঠি   উড়ে
বাড়ির পুরানো  খিলানগুলি
ম্লান  হয়ে  শুষে নেয়  স্তব
আমার দরজা খোলা
চারণভূমির  অসীম  দিগন্ত  জানালার পাশে

সারাদিন  ঝরাপাতা
সারাদিন  রূপান্তরকামী  স্বর  বদলে বদলে যায়

তবু  ভাবনা ভাবনাগুলি গাছ হয়ে  বেঁচে  থাকে
মাটির গভীরে  ।

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়




পাহাড়ের দিনলিপি ১

ঠান্ডা অন্ধকারে ইঁদুরের গল্প
কুয়াশা বিকেলের ঘরে
দুধচা পেরিয়ে সেইসব দেখা না দেখা পাহাড়ি পথের ভাঙাচোরা ভালোবাসা সুমোর চাকায়
নষ্ট দিনের লমহে শুধু লতায় লতায়

পাহাড়ের দিনলিপি ২

পা পা করে পাহাড় চূড়ার ভোর
চিত্রকরের কাছে খুলে দিচ্ছে
তার অনাবৃত চূড়া আর চোখের
গভীরে  মগ্ন বাজার তুলে নেয়
জ্যান্ত মাছের চোখ তারিফে
গাছের গন্ধ বেশ ইঙ্গিত দিচ্ছে
রোমান্সের আড়মোড়া ভাঙার

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়





গলির মানুষ







অলিগলি পেরিয়ে দিনান্তে যখন বাড়ি ফিরি
উঠোনে এসে দাঁড়াতেই টমি গা শোঁকে
মা বলে ----- তোকে এরকম দেখাচ্ছে কেন
যেন কোথাও থেকে হেরে বাড়ি ফিরছিস
অহনা বলে ----- অনেকক্ষণ তো বেরিয়েছ
তোমার তো আরও আগে ফেরা উচিত ছিল
মেয়ে অর্চি বলে ----- স্কুল ব্যাগের সরলতা
তোমার মুখে আর খুঁজে পাই না বাপি
গলি আমার থেকে এত কিছু নিয়ে নিয়েছে !








মুখোমুখি






একটা সময় মুখোমুখি নিজের সাথে
নিজের কথা নিজের মতো নিজের সাথে
একটা সময় আলোর সাথে
একটা সময় অন্ধকারে
একটা সময় আমার মতো
                    আমায় দেখা হৃদয়ঘরে
একটা সময় কষ্ট-কথা, একলা হয়ে নিজের ঘরে
নিজেই নিজের বন্ধু যখন
কষ্ট কেন একলা ঘরে ?



              

অমল বসু





দেহাতি আলাপ



এক সারি হাঁস ভাসে থমথমে পুকুরের জলে
শাপলা পাতার ভিড়ে জড়িয়ে গেছে শব্দের ছবি
চোখের আলোয় খুঁজে আনি কিছু, বাকি সব হারায়
রমনতৃপ্ত ক্লান্ত সুখে চেয়ে আছে কালো জল
তালপুকুরের আকাশে কয়েকটা চিল পাহারায়
তবু দূরের মাঠে সন্ধ্যা নামে
চাঁদের সে দিন ছুটি  
একটা নিরেট ঘুমের পরে
চোখ বুজে জাবড় কাটে উট, ফেনা তোলে মুখে
সকালে ভুলে যাই গল্পগুলো- স্বপ্ন বলে লোকে
কিছু অলস নক্ষত্র তখনো বসে থাকে
নৌকোর পাটাতনে হাত ধরে তুলে নেবে বলে





ডুরে শাড়ি কিশোরী শরীরে জড়িয়ে
উঠোন পেরিয়ে উঠে এসে ছিল বারান্দায়
সেই পানপাতার আদল জল রঙে স্থির


শীতের লাউ মাচায় শাদা ফুল
আমি চিনতে পারিনি
উঠোনের ছায়ায় মনে আছে অলস আঁচল
কোন চোখে তাকাই, কোন খানে রাখি?





সে দিন সুজন পাহান চৈত্রের রোদ ছেনে ছুঁয়ে
তুলে নিয়ে গেল শীতের জঞ্জাল
ক-দিনের বৃষ্টিতেই ফের সবুজ- ন্যাংটো বাগান
রোদ পায়ে দিনগুলো লুকোয় অন্ধকারে
রাতের ওপার থেকে ফিরে আসে খুশির খবর
সবুজ বিস্তারে জুড়ায় দু-চোখ
প্রাণের আড়ালে কখন ফণা তোলে ভয়?
আর বাড়তে দেয়া যায় না
কোদাল কাঁধে সুজন পাহান আসে
মা বলে, বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে সাত পুরুষের মাটি
থাক আর ক-দিন ঘাসের আশ্রয়ে





উঠোনের কোণে আতা গাছে ফুল এসেছে
অলৌকিক সবুজ আভা ঘেরা প্রাণের আশ্রয়
কত আর বয়স, নিতান্ত নাবালিকা
ঘিয়ে রঙের অজস্র দুল গুঁজেছে পাতার ফাঁকে
দেখি আহ্লাদী সুখ গড়ায়-তাকিয়েই থাকি
চুপ চাপ বৃষ্টিতে ভিজছে সে
এক পায়ে তাল ঠুকে হাত নেড়ে নাচছে কেমন!





ঝড় এসে ছিল
ভেঙে চুড়ে দিয়ে গেছে যা কিছু নাগালে ছিল

এখন সব-ভোলানো হাসি হাসছে আকাশ
তারা জ্বেলে ভুলিয়ে দিতে চায় নষ্ট সময়

ঝড়ের অবশেষ গুছিয়ে রাখি
কাল সকালে নতুন দিন আসবেই
রাতের সাথে গল্প করি
শরীর থেকে খুলে রাখি ঝড়ের ডানার ঝাপট
ঝড়ের পালক গুঁজে রাখি চালের বাতায়

উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়

থার্মোমিটার (দুই)

       
পাপড়ি খুলে যায় জ্বরে
কে যেন থার্মোমিটার
পারদের অভিমানে ঠোঁট ফোলে
       
'ও' গ্রুপের রক্ত হয়ে বেঁচে আছি
         
প্যারাসিটামল ভোরে ইলেক্ ট্রন প্রীতি দেখে ঈশ্বরও হাঁটু মোড়েন
ডায়েরির ছেঁড়া পাতা--- হোক, তবুতো কবিতা
           
নিষেকের পর উই-এর হামলা থেকে
জাইগোট বাঁচাই




ডিজিট্যাল বিরহ


সিগারেট আর পেনসিল পাশাপাশি শেষ
                                                       হয়
তার ছবিগুলি শূন্যে পোড়ায়
               
আমাদের প্যারাসিটামল রাতের কবিতাগুলি মেঘভাঙা রাতের কার্নিভ্যালে
                                                   যায়
চুমুর জেরক্সগুলি পরস্ব ডাস্টবিন খোঁজে
ডিজিট্যাল বিরহ টি টেবিলের দখল নেয়
                     
ভাববাচ্যে কিছু এক্সপায়ার্ড ঝুমকোলতা
      আশ্রয় নেয় জানালার রডে

দিশারী মুখোপাধ্যায়

খাঁটি



আমি এখন বেশ সাফসুরত
এখন প্রতিটি রাত্রিদিন আমার আজ্ঞাবহ
আমি এখন বেশ আমি-আমি

নিজের ইচ্ছে মত কাজ করি
ইচ্ছে মত পেঁতে ভরে সংগ্রহ করি নিজের সুনাম
আর দিনরাত মান্য করি খড়ির গন্ডির বিবেক
কেউ আর আমাকে বলার সুযোগ পায়না
সে অভুক্ত ,সে অনিদ্রিত , সে দিশাহারা
এখন আমি কেবল নিজের ফোড়নেই রাঁধি
নিজের ব্যাঞ্জন
ব্যাঞ্জনের ব্যাঞ্জনা নিয়ে মিথ্যে মাথা ঘামাই না

আমি এখন ক্যামেরায় ক্লিক করা হাসি
রেখা নিয়ে রঙ নিয়ে ভাবার সুযোগ দিইনা কাউকে
আমি এখন কেবল আমি
নিংড়ালেও পাবে না কেউ তুমির ছিটেফোঁটাও

এখন আমার চাকরি-জীবন
শুধু চাকরি দিয়েই ভরা


 করমর্দন




সকালে উঠেই দেখি একটি পূর্ণচ্ছেদ দাঁড়াতে চাইছে সামনে
অথচ রাতের দেখা স্বপ্ন গুলোতো এমন কোন ফোর্কাস্ট করেনি
তাই তোমার নামের বানান , রস , গন্ধ সব একসঙ্গে নিয়ে একটা পানীয় তৈরি করি
তারপর পৃথিবীর সব পূর্ণচ্ছেদকে কোলন-ড্যাসে পরিবর্তিত ক'রে নিই

তুমি মাটির কথা বলেছিলে , বলেছিলে আগাছার কথা
কে গাছা আর কে আগাছা এই নিয়ে তুমি আমি কেন আমাদের বুকের সুগন্ধ নষ্ট করবো
আর জন্মসূত্রে কেউ গন্ধরাজ বা রজনীগন্ধা হয় না
প্রত্যেকের গন্ধ থাকে তার সেরিবেলামে

তারচেয়ে চল তুমি আমি মিলে কয়েকটা ছাঙ্গু কিম্বা টাইগারহিল বানাই
কয়েকটা মিসিসিপি কিম্বা তোর্সা
আচ্ছা , তুমি যা বলবে তাই হবে , কারন আমি তো জানবো আমি আছি মনের সাথে
নিজের হাতে বানিয়ে নেওয়া ছোট্ট টিলাকেও মাউন্টএভারেস্ট ভাবতে বা তাকে
স্যালুট জানানোর মত উঁচু মাথার অধিকারি হ'তে আমার কোন সীমাবদ্ধতা নেই

তাই সকালে উঠেই যে পূর্ণচ্ছেদকে সামনে আসতে সাহসী দেখেছিলাম
সে এখন স'রে গিয়ে রাস্তাকে অনন্তের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে
মনের সাথে একটা গবেষণাগারে গিয়ে ঢুকেছে

মঞ্জু ব্যানার্জি রায়

সাটার



অনেকটা পথ  হেঁটে  এসেছি
ল্যাম্পপোস্টের ক্ষিণ আলোয়
আবছা  আলাপ অগোছালো প্রেম
ঘেও কুত্তার  কু ডাক

বেআইনি  আবাসনে যে বুলডোজার টি চলছে
তার শব্দে জানিয়ে দিচ্ছে
আর কতখানি বাকি পুরোপুরি গুঁড়োতে
ওঃ  রাবিশ !
বহুতলে  মিক্সচার মেশিনে আদা জিরে ধোনে  গুঁড়াচ্ছে
কংক্রিটের দেয়ালে ঠেস দেয়া ইজিচেয়ার
জংধরা  কমোড়ে আরাম  যাচ্ছে গুঁড়িয়ে ।

সামনে এগোতে যে হাত দুটো লাগে
খোলা পিঠে আঁচলে  নিয়েছে আশ্রয় ।

পথপাশে জোৎস্নামাখা  রাবিশ
জলে ভিজছে রঙচটা একটা সাটার ...

সৈকত ঘোষ

মেঘরং বান্ধবীরা - ৭

আমার ইতিহাস থেকে বিন্দু বিন্দু তোমাকে ধার করি।
তুমি অনায়াসে ঢুকে যাও স্লিভলেস শরীরে। প্রাপ্তবয়স্ক রাত
আমার চোখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিল। আমার হিসেবের খাতায়
সূর্য জন্মের কথা লিখে রাখো দেবী। নিঃসঙ্গতার শতবর্ষে
তরল থেকে বায়োবীও হয় আত্মবিশ্বাস। এভাবেই ওঠানামা চলে,
চায়ের লিকারে ডুবিয়ে খাই আধখাপচা প্রেম। তোমার কি
তেষ্টা পেতে নেই? সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণ করবে বলে সেই কবে
বাড়ি থেকে বেরিয়েছো। তোমার শরীরে কোনো ড্রেসকোড ছিল না।
কেবল ভালোবাসারা তিনভাগ জল একভাগ স্থল খুঁজে নিয়েছে
ওদিকে আমার খিদে কোনো এক দুরারোগ্য সফটওয়্যারের মতো
যতবার আপডেট করি কোষে কোষে ছড়িয়ে যায় কবিতা নামক
নাছোড় ব্যাধি।

চারুলতা থেকে আজকের বেফিকরে হয়ে এস,
                                মাদমোয়াজেল তোমাকে উদযাপন করি...

রুমা ঢ্যাং

বরাভয় অথবা নয়

 কুশণ্ডিকার আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বরাভয়...
অজগরের পিঠ বেয়ে এগিয়ে আসছে
কালো গাড়ির মিছিল

পুড়ানো শাদা কাগজমণ্ড রেখে
চলো, খাটের ঘুন ধরা পায়ার ওপর দাঁড়িয়ে
দীর্ঘ করি আমাদের আলজিব

রাস্তা পারাপারের জায়গায় স্লিপ খেয়ে
সময়ে অসময়ে মেঘফুল হয়ে ঘুড়ে বেড়াই
আমার পাশে উড়ে বেড়ায়
কর্কশ চিল

আলুশাক-কাটা জমি ঘিরে
ঘোষেদের বাড়ি
সেইখান থেকে তোমার উঠে যাওয়া কালাপাহাড়ে
আমার ঠোঁটে তখনও দুধেল শব্দ
ভঙ্গিমায় এক আকাশ ঝুঁকে পড়ে...

পৃথিবীর মানচিত্রে
আমি এক ধ্রুপদী ঝংকার তোলা আরোহী মাত্র
তুমি ফাঁকি দিলে মুষড়ে পড়ে ভাঙা নোঙর
বিষ বাঁওড় জলে
তুমি প্রতিদিন কথা ভাঙার খেলায়
সরবত জল ছোঁও
আর আমি
মৃত্যুকে জলস্পর্শ করিয়ে
রোজ সকালে নিজের গণ্ডূষ ভরি

আমার দেবতা এখানে মুখ্য
তার পায়ে ফুল রেখেই আমাকে সংকীর্ণতা শিখে নিতে হয়
ওভেনের পাশেই দুধ জমে গেলে
আমাকে দৈরাজ্যে থেকেই ক্যালসিয়াম খুঁজে নিতে হয়

রোজকার হোমওয়ার্কে
কাঠের সাঁকোভাঙার কোন উল্লেখ ছিল না
তবু সেই পাটাতনে পা দিলে
লোহার কাঠারির ঘা লাগে আমার ছোট্ট জলবাড়িতে
তরোয়াল নিয়ে দেখো, বিশ্বামিত্র
সেই কবে থেকেই গলা ঝুলিয়ে রেখেছি হাঁড়িকাঠে
তবুও গলা কাটেনি আমার!

সাতডিঙ্গা পেড়িয়ে
কমলালেবুর খোসা কুড়িয়ে এসেছি
এখন আমার আলমারি জুড়ে শুধুই কল্পতরু উৎসব

জাফরিকাটা জানলা ধরে
শিখে নিয়েছিলাম যাবতীয় পাখি সংলাপ
বালির সাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের কথোপকথন জানতাম না
তোমাকে সম্বল করেই
 সড়কপথে আমার বৃত্তকলার দেখা
সেই থেকে পাঁচফোড়নে মিশিয়ে চলেছি প্রকৃত পরিচয়

ও করবী, এবার অন্তত বারান্দা থেকে
নামিয়ে দাও রাতের ব্যাপ্তি
বাক্সের ভেতর রাখা থাক মৃতচিঠির মমি
এখন আমি প্রত্নতাত্ত্বিক না হয়ে
সূর্যাস্তের পোর্ট্রেট আঁকি!

 জিটি রোডের ধারে আমার বাড়ির সরু করিডোর
সেখানে থমকে থাকে দূর্বল বিকেলের নিঃশ্বাস
আদুরে হাবভাবে কেটে গেল ছয়মাস
দেখতে দেখতে থেমে গেল কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি ওড়ার সিন
অন্যবাড়িটার নেমপ্লেটে বটের চারা
অবিস্মৃতিচারণে ঝুরি নামবে...

বৃষ্টি নামলে গতি স্তব্ধ হয় ঝড়ের
না-পাওয়াকেই টবের মাটিতে রোপণ করেছি
পাগলামি দিয়ে সাঁতলাতে হবে পদ
ফুলগুলো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে
কোথায় যাব!

পার্বতী রায়

লেভেল ক্রসিং 

আজ সকালে রোদের পাড়ায়
উটকো যে তোর লেভেল ক্রসিং
যে-যেখানে রথের মেলায়
কেমনই তোর হুটোপুটি !

যখন আমি ক্লান্ত ছবি
মুখ মুছিয়ে দড়ির টানে

সকাল আমার রবির ছবি
আপনজনে বইবে কি দিন !

আজকে শুধু হাসির ছলে
তোর সঙ্গেই  কথা বলা

একটু খানি নদীর ধারে
পাগল পাগল পাগলা হাওয়া ...

যখন তখন ঠোঁটের বালিশ
সাত সকালে মেঘের নালিশ

যা যেখানে মনের পাড়া
হৃদয় যদি দিচ্ছে নাড়া


   

বিনায়ক দত্ত

কবিতা ও আইসক্রিম


আমরা যারা কেন্দ্র আঁকিনা
সরলরেখায় বেড়া টানি
ঘামে ভিজলে দশটা দশে
কার্মার পিছনে লাথি মেরে
ফুলের বাগানে ঢুকে পড়ি
এখানে প্রতিটা অক্ষরে
লাটাক লাটাককে মৌমাছি
                             প্রজাপতি
টিনের ওপর ভেজা খড়

অমিয়কুমার সেনগুপ্ত

গাছ 

গাছটা মানুষের মতো নাকি মানুষটা গাছের মতো
বোঝা ভার !
দুটোই কিন্তু দাঁড়িয়ে পাশাপাশি
কথা বলছে  এ-ওর সঙ্গে

মাংসহীন দুপুরে গান শোনে
যে শালিখ, সে কিন্তু জানে
কে কার মতন

আসলে, শালিখ নিজেকে খুব
হীন ভাবে । তাই মানুষের সঙ্গে নয়, গাছের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করতে চায় 

রিম্পা নাথ

এমন ভাবেই


এমন ভাবেই আমি নদী হয়ে যাবো
তবুও দেখো গায়ে । মাথায় আকাশের ছাপ
মাটি থেকে অনেক প্রজাপতি বেরোচ্ছে
পাতায় পাতায় মধুর গন্ধ ছোঁয়া
কেন আসছে তার বৃষ্টি কথা
সে তো কবে শুষ্ক লতায় মন লিখেছে
আমিই শুধু একা ঘুলঘুলিতে আঁটকে আছি
আজই হবে বোধয় নাটরের বনলতা সেন
                   শেষ পড়া  ।

রনজিত্ পান্ডে

জারজ স্বীকার 


অতিক্রান্ত যৌবন পথে
        সংকোচহীন জারজ স্বীকার
কখন কখন অসংযত শিশ্নই ঘিলু

আর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় থাকে
        আঘাত করার অধিকার

মুর্তি বা ভাবমুর্তির-
             খাঁটি আর ভেজাল বিরোধ

বস্তুকে পিছনে ফেলে
             ছায়া ধরার আপ্রাণ চেষ্টা

যা ঘুমাতে দেয় না; ভেংচি কাটে


পবন বর্মণ

একটা পাখি
         

সহসা একটা পাখি ধরতে চেয়েছি
বিয়ে করবো সংসার পাতবো
কিন্তু হাতে যে কলম গুঁজে নিয়েছি
হয়তো পাখি কলমকে লাঠি ভেবে উড়েই যাবে

কলমের দাগটাতেই কত মায়া হয়
কত শব্দ লুকিয়ে আছে তাতে
যদি এই শব্দকে বোমা বারুদ ভেবে নেয়
হয়তো পাখি গাছ থেকেই হারিয়ে যাবে

কিন্তু একটি কথা মজবুত করে গেঁথে রেখো
যেদিন লাঠি শক্ত ভাবে গুঁজে যাবে
সেদিন নানা পাখি বসে যাবে দাপট দেখিয়ে
শব্দগুলোতে চুমু করবে বারবার
আয়  .....  আয়   .....  আয়   .....

আজ নিশ্চিত নয় বলে কোন পাখিই নেই
পড়ে আছে আকাশ ভরতি ফোকলা হাসি

সৈকত কুন্ডু

বিরক্তকরবী


লাইনে পাথর ছুঁড়তে ছুঁড়তে
ছেলেটা ছুটছিল
মাথার উপর ঝুলছে হাইভোল্টেজ তার।
ঈশ্বর  দেখছে
বুলেটের মতো একটা বিন্দু
নিউক্লিয়াসের পাড় ভেঙে
তেপান্তরে পক্ষীরাজ ,
অথবা ওই
ঘামে ভিজে কলির অবতার।

ট্রেনটা দাপিয়ে চলে গেল।
ঝাঁকড়া চুল উড়ছে। পাথর থেকে আগুন।
ঈশ্বর দেখছে
বিরক্তকরবী। 

দেবযানী বসু

চিকিৎসা




পিরামিড গড়িয়ে নামে চাঁদ
মুখে ফেলি লেসার রশ্মি ... পি.সি.চন্দ্রার... ভেড়ার আসল
লোমওয়ালা সোয়েটারে বসাই সোনার দাঁত
টাকাপয়সা নিয়ে বনজঙ্গল খুব বিব্রত.
বনপরি 'ফ্রি' তে ঝরাদাঁত কুড়োয় বনে.
লিঙ্গরাজার বুকনিতে সভার জলপাত্ররা হাততালি মুদ্রা ঘোরায়
জলের জটিলতায় ব্যাকরণে সন্ধি যা ছিল সব বিচ্ছেদে আচ্ছাদিত.

উদিত শর্মা

নামৃত


একটা গোটা রাস্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে চলে দোতলা বাসের কামরা। একই মন্থনে দুটি হাত উঠে এলো --- তুমি বিষ পান করে নীলকণ্ঠ কিংবা রাহু হয়ে আকণ্ঠ তৃষ্ণার্ত হতে পার। নারীর মোহিনী রূপে মুগ্ধ হয়ে অমৃত সমর্পণ করে ফেলেছো। এখন সুধারস শুধুই প্রজাপালকের।

সুদাম বেরা

ছায়াগাছ

ছায়াগাছ হব তোমাদের জন্যে।

শতাব্দীর জমানো ঘৃণা নিয়ে
তোমরা আঘাত হানবে নির্বিচার-
আমার শাখা প্রশাখায়।
হাজার শীত হেলায় পেরিয়ে
আমি থাকবো একটা বসন্তের অপেক্ষায়,
                                            নির্বিকার!

ঝরা পাতারা সাক্ষী হবে আমার অভিমানে।

ফিরবই ছায়া দিতে-
আমি মহীরুহ তোমাদের মরূদ্যানে।

রুদ্র বোস

একমুঠো নিটোল গল্প

সেই কবে থেকে--- কবে থেকে যেন---
খুঁজেই চলেছি চলেছি চলেছি--

পাচ্ছি না, পাচ্ছি না -- কিছুতেই---কেন যে--

একটা চাবি---
একটা সবখোল চাবি

চাবিটা ঢুকিয়ে চোখ বন্ধ করে
একটু এধার ওধার করলেই---
--খুট--- চিচিং ফাঁক----
তারপরই---

লাল হলুদ নীল সবুজ গেরুয়া পাটকিলে---
আলোর রোশনাই---

মানুষের বুকের চোরকুঠুরিতে
গল্প আছে জানো---

নিটোল একমুঠো গল্প---

সৌম্যদীপ দাস

কণি---আরো একটি প্রেমিকা
         

আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কণি।
তোমার খনির ভেতর এতো অন্ধকার কিসের?
এত নির্মম হতে পারে তোমার জ্বালামুখ?
প্রেম ও তুচ্ছ যন্ত্রণা পেরিয়ে আমি তো একটা প্রাসাদ বানাবো ভাবছি,
তোমার যোনির গহ্বরে।
আলো ঝালর বিদ্যুৎ দিয়ে গড়ে তুলবো রাজমহল।
কিন্তু এতো অন্ধকার কিসের কণি?

আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে  কণি।
তোমার যোনির ভেতর আকাশ কোথায়?
খোলা আকাশ, ফালা ফালা হওয়া মেঘ
পড়ন্ত রোদ কোথায়?
কোথায় তোমার নাভির ভেতর গাছ? কোথায় শিকড়?

আমায় মুক্তি দাও কণি।
কোন মোহে এনে ফেলেছো এমন অন্ধকূপে?

তুমি ভুল করছো কণি
অরগাসমের লোভে আমি ঢুকে পড়িনি তোমার গহীনে,
আমি ঘর চেয়েছি, বাগান চেয়েছি, একটুকরো আকাশ চেয়েছি।
এমন ঘন অন্ধকার থেকে তুমি মুক্তি দাও কণি।
আমার দম আটকে আসছে
আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।।।।।

আনিস আহমেদ



বেদবাক্য

দু'হাতে লম্বা চওড়া মোটা মাথার লোকজন যত রোদ্দুরের গুড়ো মেখে যেন দূরদৃষ্টি চশমার ফাকে পড়ে থাকা ফাকা মাঠে শুকোচ্ছে সোডার বোতল ছেড়ে ডানা মেলে উড়তে থাকা জল থেকে একগাদা রঙিন হাতি হাত থেকে জাম্প মারে চোখকানা পাখি পাখা মেলে আরও একগাদা শিমুল পলাশ ফুল ফুলবিবিদের ঘোমটার মত ঝরে পড়ে ধুলোর শরীরে রিনরিন শব্দে বেদবাক্য আর যত রামায়ন মা আমি আর পড়তে চাইনে সীতার ভরাট স্তন কারুকার্যের মত নিতম্ব আমি কম্বলে দেখো আমার হাত পা লুকিয়ে ফেলেছি ...



উনুন

রোজ রোজ পাখিদের গান শুনে সোনা মেয়ে ড্রিঙ্ক করে রক্ত কালো করে ফ্যালে কয়লা হয়ে কালসাপ উঠে আসে উনুনের আগুনে গুনগুন গায় ফড়িং ও শালিকেরা শ্যালিকাকে সঙ্গে করে শপিংয়ের বাহানায় সাপ দেখে ফ্যালে ফালতু ছেলেদের কান্না মেশে শাড়ির আচলে অতএব চ্যালা বাশ ঢুকে যায় তাহাদের পিছনে পিচকিরি দিয়ে ওঠে কাঁদা দাদাদের আড্ডায় বেশ হইচই চিড়ে ভাজে ভজহরি পাল পালকের ঝাপটায় উনুন নিভে গেলে আশাহত বুড়োটা বিড়িতে টান মেরে সুখ চুষে খায় আর খানখান করে ফ্যালে আদরের সংসারে বুড়িটার হাল ফেরে জোয়ান ছেলের পোঁদ ধরে ধরে ধড়াস করে পড়ে একদিন হাত পা ভাঙে কিনা কিনারায় বসে দ্যাখে স্বয়ং ভগবান বানের মুখে ভেসে যাচ্ছে...

প্রদীপকুমার ঘোষ


ঝোড়ো টেক্সট

#১
ব্রা-এর স্ট্র‍্যাপ ছিঁড়ে গেলেই
কোন্দল করে ভাগ করতে চাও
শারীরিক মানচিত্র থেকে : বুক/পেট/পিঠ/যোনী।
টুকরোগুলো লাশকাটা ঘরে বস্তাসেলাই হয়ে
দেখাচ্ছে ইনক্রেডিবল।

#২
আমাকে দেখিয়ো না কুলেখাড়া পাতিব্রত্য।
শ্যাম্পেনের ফোয়ারায় খুলে দাও
ব্লাউজের দক্ষিণ দুয়ার।
বাম স্তন, ডান স্তনের স্তুপ পর্বতের
পয়েন্ট মিডিলে ক্লিভেজ
গ্রস্ত উপত্যকায় গড়িয়ে যাক ২-ফোঁটা ফেনা
নর্মদায় নর্দমা এনে।

অতনু গঙ্গোপাধ্যায়

নেভিগেশন সিরিজ – ( প্রথম পর্য্যায় )      
- ১-  
ওয়াই ফাই স্টেশনের কাছে বুড়ো বটতলা
তার বিষন্ন বিকাল জুড়ে গল্পকথায় মাঠ ফুরায়
এ শহরে
বাড়ো রুপকথা  ঃ বাড়ো চুপকথা
হা-ঘর ব্যথা, ডেনিম স্পর্ধায়
লি
লি
চুম্বন
ধুপকাঠি সন্ধ্যায়
ফেরো বিগ্রহ ঃ ফেরো কুলগুরু
ঢেউ আসে , পাশ ফেরে
কোচকানো শয্যায়
ছিপছিপে বৃস্টি, ভেজা বেলফুল
স্টেনগান জলপাই
দিন আনি দিন খাই
খেয়াতুর গল্পেরা
হাই তোল
মজ্জায় ।
২ ।
শব্দগহ্বরে বসে
ঠোঁট নড়া দেখেনি কতকাল
কথকতা
ঢেউ আসে,মুঠো ফসফরাস
মিনারেল ডাবখোল
চকমকি
ট্রলার,ট্রলার
স্কুপ উহ্য রাখে ভাবীকাল ঢেউ
স্পাইন্যাল একতারা মৃদু-মন্দ সুর
ধুয়ে মুছে
ফুরুত
ফুরুত
উড়ুক চড়াই।
৩।
যা ছিল,আড়াল হয়েছে
বায়ুভুক
যা ছিল না,উত্তাল
নিরালম্ব
জায়মান আছে কৈশিক ।

রাহুল গাঙ্গুলী

নৈর্ব্যক্তিক



(১)

ফিরে যাচ্ছি আমি।ফিরছো তুমিও
তারও বেশি কয়েকটা শব্দঋণ
কবিতা মাখামাখি
বেশ হতো।বেশ ছিলো
কালো চোখ - মৌনতায়
ফিরে গেল ক্ষমাহীন জল



(২)

ঘুম দাও।ঘুম দাও।ঘুমঘুম।ঘুম নাও
ঘোড়েল সময়কণায় বুদবুদানো বাড়ি
নেশাকারী অবশ হাত।রিমঝিম ঝিম

এপারে নাভিশাঁখ।ওপারে মুঠোখই



(৩)

বাতিলায়ানা পোস্টকার্ডে গোপন সংকেত
সংকেতে : চকিত গুহা।গুহামুখ।হইহই
ভুল করে ভুলে যাই।স্মৃতিভ্রংশ প্রেমিকের মতো
গোপনগোপনে স্মৃতি চুরি



(৪)

ভাঙা আয়নায় সুখ দাও
ভরা সুতো গা থেকে খুলে।জমি বৃষ্টির টান দাও
ভাসতেভাসতে শরীর জুড়ে।শরীর জুড়ে
জাগতীয়া সামুদ্রিক খেলা।তেজস্ক্রিয়তা উধাও
থেমে যাওয়া শিকারির মতোন



(৫)

পলিমাটি জমানো ছেঁড়াখোঁড়া শিলালিপিতে
যুধিষ্ঠিরের হাতমারা মৈথুন
বড়বাজার।মাসকাবারি।ক্লার্ক।সুদখোর।চাষি
এমনকি পাকা বেগুনের মতো
মালিক।শ্রমিক।বা ইউনিয়ন লিডার
চলো হে যুধিষ্ঠির : সকালের সাইরেনে চড়ুইভাতি

ধান ভুলে জটিল চন্দ্রমল্লিকা।বিষুব উপহারে



(৬)

যে তরুণী সুইসাইডাল নোটে অক্ষর ছেঁড়ে নি
তার জন্যই কবিতা শরীরের পাতাল
এরকম কিছু নিষ্ঠুরতায় সাবেক বেদেনী ঠোঁট

তদন্তকারীর চোখে : কৃষ্ণগর্তের বিষাক্ত নুন



(৭)

কথা ছিল : রবিনহুডের সাথে আজ পিকনিক যাবো
কুউউউ ঝিকঝিকঝিক।ঝিকমিক বারান্দা খুলে
সমস্ত দুর্ঘটনা যখোন ডায়রিঘটিত
সফেদ টুপিতে থাকা কালোকাকের পালক

মুন্ডু গেল।পেট গেল।তল কাটা তল।তারপর!!!!!


(৮)

নিজস্ব বিভ্রান্তির মাঝখানে
আত্মনদে ডুব দাও।ডুবুরি অভিনয়ের পর
রাম তেরি গঙ্গা মইলি।ও।মন্দাকিনীর স্বচ্ছতা
পোষাকি পোষাক পোষাকীয়।ঘন সিঁদুর এফোঁড়ে
মসজিদ - মন্দির - গির্জাগুরু সত্যি নয়
রাতেলু সঙ্গম ছাড়া।বকবাস্ মরুমরু ঝড়



(৯)

বয়স বাড়ছে।পালকি থেকে বাইক।যুদ্ধবিমান
মৃত ফুসফুস জোগাচ্ছে ফসফরাসি ভাতের খবর
পৃথিবী ঘটবার জন্যই।ঘটছে।ঘটনা।ভারি কথা
অটোমেশিনে সাইবার মেলানকলিকা ছিলিম
ঢেউ কাটছে।ঢেউ মরছে।ঢেউ চুষছে

যাবতীয় দরকারি হার।যৌনার্ত তারার সীমাকলম




সুকান্ত ঘোষাল

তিন বছরের ঊর্দ্ধে পুরা ভাড়া লাগিবে


(০১)
কোন যন্ত্রে সোজা হয়ে থাকি!পয়সা ফুটো করে কোমরে ঝুলিয়ে নেওয়ার চেয়েও স্বাভাবিক।যেমন চিনির লোভে চিমনির কালি জামায় লেগেছে।কেবল পকেটমার থেকে সাবধান হতে শিখিনি এখনো।

(০২)
বয়স্ক ব্যাক্তির জন্য বরাদ্দ। আমি তার পাশে
বসি। হাঁড়িতে জল থাবড়ে বাঁচিয়ে রাখি ছানা।
ছয়টি পা। ছয়টি সরু সরু পায়ের উপর দাগ লেগেছে। তেমন কোন ক্ষরণ নেই এক্সট্রা লার্জ হাত দেখালেই থামে।

(০৩)
নিজের জিনিস এবং বিজ্ঞপ্তির কাঁচাহাত কোন দিকে দুরন্ত ছাতার-বাটের ফিতে । অবশেষে পোস্টার ছাড়াই বাস থামল।একটা ক্ষুদ্র শরীর নিয়ে যাচ্ছে পরবর্তী। ফাটা দিয়ে ঝরঝরিয়ে তোমার দৃষ্টান্ত। ঠিক মাঝখানে ছটা দিয়েছো তাতিয়ে দিতে। খোলার আগে কপালে ঠেকাই।

ফারজানা মণি

আয়রন পাওয়ার 


১.
গুলাবি চুরটে পুড়ে গেছে আংটার মুখ
ছাই ছাই স্কিনটোন।ধূসর প্রভাতের আলোয় ঝলসানো শরীরটি আজ সিম্ফনি-

২.
কুয়াশায় সব ঝাপসা লাগে,মধ্যরাতের কামাসক্তির কাছে হেরে যাই - কখনো...
মুখ থুবড়ে তোমার সাত ইঞ্চি ফিতায় নিজেকে মেপে নিই... জড়িয়ে থাকা অর্গান টিস্যুতে মাতাল হতে খুব বেশি সময় ব্যয় করিনি.....

৩.
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস আমার এডিকশন।শহর ঘুমিয়ে গেলে আমরা মেতে উঠি নিষিদ্ধ প্রলাপের বলয়ে।ডুবে যাই,ভার্জিনিটি ভঙ্গের উৎসবে....
প্রতিটি সঙ্গমের পর
আমরা আবার ভার্জিন হয়ে যাই
পরবর্তী নষ্টের অপেক্ষায়...

৪.
শীৎকার গুলো কেবল ফোনের ওপাশ থেকেই তুমি শোন....ইচ্ছেগুলো মেঘের মতো উড়তে থাকে- আমিও চাই দুজনে মিলে তৈরী হোক
নগ্নতার অভিধান....


৫. ফ্রেঞ্চ স্টাইলে ব্যাখ্যাহীন চুমু...যেখানে জিভের স্পর্শে আমরা পবিত্র হই প্রতিদিন......

অয়ন মন্ডল

আমার কথা


আমার না বলা কথাগুলো
কবিতা হতে চায় রাত্রে

আমি বোবার পাঠ করি

হাততালি
হাততালি
হাততালি

স্টেজ থেকে নেমে দেখি

আমার কথাগুলো কে
মাইক্রোফোনে নকল
                  করছে---