Saturday 1 July 2017

সম্পাদকীয়

বর্ষার প্রতিলিপি


দেখা দিল অন্তহীন আরো একবার
মাতৃফসল হিসেবে সবুজের ডানায় রোদ্দুর পেলো বর্ষা

এভাবেই যুগে যুগে আত্মহারা হবে এইযুগের কবিদের দল
আসলে কবি নয় , 
                              ইচ্ছেদের সাজানো যন্ত্রনা 


যাইহোক যেখানে শেষ করেছিলাম গত সংখ্যা।এই জগতে বাইরে থেকে যতটা শান্ত স্থিতিশীল মনে হয় আসলে সেটা যে কতটা জটিল সেটা বোধহয় কয়েকদিন কাটানো যেকোনো তরুণ কবি/লেখকও বলে দিতে পারবে..। এইখানে আমি আঘাত আনতে চাইছি..। কেন আমরা এত নির্মম হতে যাবো..। আমরা কি কিছু একটা পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েই এখানে পা রাখছি? জানিনা কজনের ক্ষেত্রে এর উত্তর সঠিক আসবে এবং শুনবো ,না কিছু পাওয়ার জন্য না কিছু দেওয়ার জন্য জন্ম নিয়েছি কিছু দিতে চাই..। 
                     যাইহোক এর মধ্যে বলে রাখি শহর জুড়ে বর্ষা বেশ উলুধ্বনি দিয়ে ঢুকে পড়েছে আমাদের জানালায়।এই জাগতিক সমস্ত দিনগুলো দেখছি কেমন যেন একটা বর্ষা বর্ষা ভাব নিয়ে রোমান্টিক হয়ে উঠছে।কেউ কেউ এই রোমান্টিক সুরের মাধুর্যে বেছে নিচ্ছে "ধূসর পাণ্ডুলিপি" আবার কেউ সমস্ত রসটুকু আত্মসাৎ করে চলে যাচ্ছে কোনো সত্যের জগতে , কোনো কবিতার জগতে।আর তার কিছু ছায়া এসে পড়ছে আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়। হাওয়া এক এক কান থেকে আরো ঘুরতে ঘুরতে ছড়িয়ে পড়ছে এদিক ওদিক।রঙিন হচ্ছে যাবতীয় relationship।প্রেম ফিরে পাচ্ছে কিছু প্রেমিক আবার কিছু জংলীর দল। ছোটবেলায় খুব মনে পড়ে এই বর্ষার দিনে তখন ইলেক্ট্রিক আসেনি কিংবা এলেও বর্ষা হলেই গ্রামে ইলেক্ট্রিক থেকেও নেই কিংবা আমি আছি তুমি আমায় কাজে লাগাতে পারবে না এমন অবস্থা।যাইহোক সেইসব দিনে সন্ধ্যার পর বৃষ্টিতে পুকুরগুলো সুন্দর ডাক তুলতো।আসলে আমি জানি ওগুলো ব্যাঙ।কিন্তু এই ব্যাংকেই পুকুর মনে হয় আজ।হ্যাঁ অবশ্যই কবিতার জন্য। নস্টালজিয়া..। এখনকার বর্ষা আবার অন্যভাবে উপলব্ধির ব্যাপার একটা..। আসলে এখানেও এসে যায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার..। সময়ের সাথে সাথে নিজেকে নতুনের প্রসঙ্গে পাল্টে নেওয়ার ব্যাপার..। 
                   এই বর্ষার দিনে জানিনা কে কেমন ভাবে কবিতাকে উপলব্ধি করেন । সত্যিই জানিনা..। আমার তো ভালো লাগে কেউ যদি সামনে কবিতা পড়ে আমি দুটো চোখকে তৃতীয় নয়নের সাথে পরিচিতি ঘটিয়ে চুপ করে বর্ষার নিঝুম টুপটুপ শব্দের সাথে কবিতার শব্দের সমাবেশ ঘটিয়ে শুনতেই পছন্দ করবো..। নিছক হৃদয় দিয়ে শুনলেই মনে হয় ঢুকতে পারবো প্রতিটা কবিতার অন্তর্বতী প্রতিটা আবেগে প্রতিটা ইন্দ্রিয়চেতনায়।এই প্রসঙ্গে কবি অমিয় চক্রবর্তী-র একটি কবিতা খুব মনে আসছে - 
     
" অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।
বৃষ্টি ঝরে রুক্ষ মাঠে,দিগন্তপিয়াসী মাঠে,স্তব্ধ মাঠে ,
মরুময় দীর্ঘ তিয়াষার মাঠে , ঝরে বনতলে ,
ঘনশ্যমরোমাঞ্চিত মাটির গভীর গূঢ় প্রাণে
শিরায় শিরায় স্নানে , বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে। "

            এই কবিতার বর্ণনা করতে গিয়ে একসময় বুদ্ধদেব বসুও উচ্চারণ করেছিলেন এমন ভাবে যে -" এইসব পংক্তিগুলি অন্ধকার মধ্যদিনে গুনগুন করে আবৃত্তি করার যোগ্য , কারণ এর ছন্দ বৃষ্টিরই ছন্দ। " 
        এমনই কিছু কবিতা হবে আর সাথে বৃষ্টির মরসুম..। আহা!!! কবি জীবন না এভাবেই পাঠক হয়ে বেঁচে থাকা যায়..। এখন যখন লিখতে বসেছি এখন জুন এর শেষদিক..। কবিদের মধ্যে বছরের যাবতীয় ব্যস্ততা মোড়া একটা দিন..। মাত্র তিনমাস আছে শারদীয়াকে..। আর শারদীয়া মানেই কবিদের বিচরণের এক অন্য মাধ্যম..। যাক সেকথা পরের কোনো এক সংখ্যাই বিস্তারিত আলোকপাত করার চেষ্টা রাখছি..। 
         ইতিমধ্যে বলে রাখি গত মাসের অর্থাৎ ৯ম সংখ্যা ৩০০০ হাজার বার পড়া হয়েছে..। যেটা আমার মতো একজন নির্বাক নির্জন কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সম্পাদকের জন্য অনেকটাই..। সম্পাদক না..। আপনারা লেখা পড়ুন..। লেখার প্রচার করুন..। আপনি নিজেরটা পড়ুন..। আরো অন্যের পড়ুন..। পারলে কারো কারো লেখা শেয়ারও করুন..। সত্য যে লেখা সুন্দর সে লেখা কেন আমরা ছড়িয়ে দেব না? তাই ছড়িয়ে তো দেওয়াই যায় কারো লেখা...। হোক না সেটা আমার পছন্দের লোক না..। আরো একটা প্রসঙ্গ..। গত সংখ্যায় রুমাদি ও রাহুলদার নিয়মিত কমেন্ট পেয়েছি অনেক লেখায়..। এতে লেখকদের উৎসাহ বাড়বে..। শুধু নিজেরটা পড়ে চলে যাবেন না এটুকু অনুরোধ..। আসুন না একটা পরিবার হয়ে ছড়িয়ে দিই যে কিছু ভালো...। কিংবা অন্তত উৎসাহ দিই..। এটুকুই আশা রইলো..। ভাবছি পরেরবার থেকে আলাদা একটা কলাম রাখবো "অন্তহীন মতামত কলাম" যেখানে আপনাদের সুচিন্তিত মতামত রাখতে পারবো..। আপনারা বলবেন আমরা পত্রিকা কতৃপক্ষ ভেবে দেখবো যদি ঠিক বা ভালো বলে মনে হয় মেনেও নেব এবং সেটাকে নিয়ে এগিয়ে যাবো...। আসুন আমরা পালা বদল না লাইন বদল না..। আমরা কবিতায় বদল হয়ে উঠি...। 



কৃতজ্ঞতা স্বীকার : - 

শুভদীপ সেনশর্মা - অলংকরণ 




নমস্কার
-সুজিত মান্না

2 comments:

  1. দারুণ সম্পাদকীয়

    ReplyDelete
  2. ঠিক বলেছিস। ভাল লেখা কেন ছড়িয়ে দেব না! এভাবেই এগিয়ে যাক অন্তহীন ছোট ছোট পদক্ষেপে। খুব ভাল সংখ্যা হয়েছে। জানি ভবিষ্যতে আরও ভাল সংখ্যা হবে এই আশা রাখি। যেকোন সাহায্যে পাশে ছিলাম পাশে আছি থাকবও।

    ReplyDelete