Wednesday 18 October 2017

সম্পাদকীয়

অন্তহীন -১৩


"...
 তোমার তরবারি যদি বিদ্ধ করে আমার শরীর ও মন
কী আসে যায় ! আমার তো রয়েছে কবিতা অমর
                         কবিতা ছুরির চেয়ে বেশি শক্তিমান ।
আমার দুঃখে যদি সমুদ্র শুকোয়―আকাশ নড়ে
                                    কী আসে যায় ―
দুঃখের পাখায় ভেসে কবিতার মধুর উড়ান হবে ঠিক..."

                   ― (কবি -হোসে মার্তি , অনুবাদ - সন্দীপ সেনগুপ্ত )


এটাই যে পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটে যাক যদি হাজারো আঘাত আমাদের শরীরকে ভয়ংকর থেকে আরো ভয়ংকর হতে শেখায় তবুও আমাদের সবচেয়ে বড় সম্বল আমাদের সম্পদ এই কবিতায়..। হাজার দুঃখ কষ্ট জীবনের উঁচু নিচু যাবতীয় পর্যায় পেরিয়ে আমরা কবিতার কাছে অন্য এক ব্যাক্তি হয়ে উঠি..। আমরা চাই নিজেদের সমস্ত ফেলে আসা খারাপ ভালোকে ভুলে গিয়ে বাকি জীবনের জ্বালানি খুঁজে নিতে..। আমরা পারি..। সত্যিই পারি..। আমরা যেই সময়ে দাঁড়িয়ে আছি প্রতি নিয়ত কিছু না কিছু অঘটন আমাদের নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে..। আজ এখানে তো কাল অন্য পাড়ায় , অন্য কোনো প্রদেশে..। তার মাঝেই আমরা ক্রমে নিজেদের শিল্প চর্চাকে আরো এগিয়ে নিয়ে চলেছি..। একটু অগোছালো ভাবেই শুরু করলাম এবারের সম্পাদকীয়..। আসলে কী লিখবো আর কেন লিখবো এটাই বুঝে উঠতে পারছি না..। হ্যাঁ এটাই বলতে চাই যে বা যারা ঠিক এই কারণ টা কখনো ভাবেননি যে কী লিখবো ,অথচ লিখেই চলেছেন আমি অন্তত তাদের কুয়াশায় হারিয়ে ফেলার ভয় পাই..। সত্যিই ভয় হয়..। শারদীয়ার পর পর বের হবে বলেও অন্তহীন বের করতে পারলাম না...। কিছুটা খারাপ লাগা থেকেই যায়..। আজ বসে যখন দেখছি এত ভালো ভালো লেখা আমি প্রকাশ করতে পারছি, সত্যিই খুব গর্বিত মনে হচ্ছে..। এত ভালো লেখাকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য..।
       কিছুদিন আগেই অন্তহীন অক্টোবর সংখ্যা প্রকাশের জন্য কোনো বিজ্ঞপ্তি না করায় তেমন কোনো লেখাই দপ্তরে জমা পড়েনি..। কিছুটা খারাপ লাগা থেকেই কী করবো ভেবে পাইনি..। তাই হঠাৎ সিদ্ধান্ত দীপাবলিতে বিশেষ সংখ্যার প্রকাশ..। এবার সত্যিই খুব ভালো লাগছে এত এত লেখা পেয়েছি যে সম্পাদকীয় বেশি লিখে কাকেও এখানে বেশিক্ষন ধীরে ধরে রাখবো না..। একটাই চাওয়া সবাই সবার লেখা পড়বেন...। আসা করি পড়বেন..। সবাই খুব ভালো থাকুন...। এবং এই কালীপূজো খুব আনন্দ করুন...। ।



বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার - ফারজানা মণি ( অলংকরণ )

সহসম্পাদকীয়



প্রতিবারই যখন সহসম্পাদকীয় লিখতে বসি, ভাবি কী লিখবো। কলম হাতে করতেই মনে পড়ে গেল দার্জিলিং-এ নিহত এস. আই অমিতাভ মালিকের কথা। কীভাবে চলে গেল এক তরতাজা প্রাণ, ডিউটি করতে করতে তিনি প্রাণ দিয়ে দিলেন আমাদের জন্য,এই দেশের জন্য। বিনিময়ে আমরা তাকে কী দিলাম? বরং কেড়ে নিলাম...জানি না এভাবে আর কতদিন চলবে। কবিতার ভাষাই বা কী হবে। নাকি কবিতাও গর্জে উঠবে ঠিক একজন সৎ কর্তব্যপরায়ণ অফিসারের মতো। একজন কবিতে প্রথমে তার কবিতার প্রতি যতটা সৎ থাকা উচিত আমরা কী তা পারছি ?সমস্ত টানা পোড়েনের মাঝে আমরা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি আর জীবনের গতিকে বহাল রাখতে কবিতার মতোই স্বচ্ছ ও সুন্দর রাখার চেষ্টা করছি নিজেদেরকে। তাই তো এই কবিতা যাপন,কবিতা তো জীবনব্যাপি।প্রতিবারের মতো এবারও কবিতার ডালি নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো, আমাদের এই ছোট্ট প্রচেষ্টায় আপনারাও যে সামিল হয়েছেন এটাই আমাদের পরম পাওয়া। যাই হোক কবিদের হৃদয় নিঃসৃত কবিতা নিয়েই আমাদের এই পথ চলা। দীপাবলির আনন্দে কবিতাকে মিশিয়ে আলোকিত করে তুলুন সমস্ত রকম খরা, দুঃখ,দুর্দশাকে। সকলেই ভালো থাকবেন,সৃজনে থাকবেন এবং সেই সাথে সাথে শুভ দীপাবলির বর্ণময় শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন----

রুমা ঢ্যাং

জোনাকিপোকা সম্বল ঘর 



খোলা পিঠে ধরে রাখছি পাখি ডানার হলুদ দাগ
 পুরনো ছায়ার ঘুম, অথচ 
ভাতের থেকে বেশি উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ছে রাতকামিনী
সেইটুকুই রাত ঘেঁটে লালনপালন শিখি 

গ্যালারির চৌকাঠ থেকে উত্থানপতনের পাঠ পড়ে
         তুমি যে নরম সূর্যের কথা বলো 
ভোরের বিন্দুর আড়ালে  
       পৃথিবীতে হেরফের হয়ে যায় সময়
সম্পর্কের খাতিরে, ছুঁচ থেকে ভয় ফোটে
       গোলার্ধের বিপরীতে ছড়িয়ে পড়ে কলাযাপন

কে তার পথে দেখেছে কুরুক্ষেত্র। আমাদের জোনাকিপোকা সম্বল ঘর
সার্চলাইটের প্রয়োজন যত কমেছে 
                    বিস্ময় বসেছে শৃঙ্গারভূষণে
মহিষের দুধে সবে ফূর্তিস্নান করিয়েছি
আমার কাছে
   এত এত খিদে স্নাতকোত্তর পায় না... 

জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি

অভ‍্যস্থ যাযাবর


জোরালো কিছু নারীর ঠোঁটে লেগে থাকে আরবীয় উদাসীনতা

ক্রমে ধ্বংসের দিকে
সংস্কারে বর্বর দাবানল
সৌভাগ্যক্রমে অস্থায়ী ঠিকানায় স্থাপিত হলো রমণীয় সাম্রাজ্য

সব শব্দই ওয়ানস্ আপন্ আ টাইম্
সব শব্দই একান্নবর্তীতার বৃত্ত ছিঁড়ে গুঁড়ো গুঁড়ো ঐকতানে শক্তি বৃদ্ধি করে

ঐক্য
স্রোতের ভিতর
তান
চোখ বেঁধে বহু দূরবর্তী হাড়ি ভাঙে

অতঃপর, স্মার্ট নাগরিক ধুলোর নিচে চাপা পড়ে থাকে অভ‍্যস্ত যাযাবর।





দাহ্য ধুলো


সুতরাং, প্রেম একটি ত্রিমাত্রিক দৃষ্টিকোণ ছাড়া কিছুই নয়

কিছু হিসেবী দিন আর
বেহিসেবি রাতের মধ‍্যবর্তীতে এক মহাকাশ শূন‍্যতা আসে যখন 
তা আসলে আসন পাততেই চায়

অতঃপর এক যাযাবর জোৎস্না
বিপর্যয়ে তার অবাধ আনাগোন

হাত বাড়িয়ে নিলাম
যদি এলোচুল নামিয়ে রাখো
পরম বিশ্বাসে
হয়তো থমকে যাবে
আঙুলের ফাঁকে জড়িয়ে
শাড়ির অবশিষ্ট খুঁট

এই হস্তশিল্পের সপক্ষে যুক্তি এমনই নিটোল যাতে সমৃদ্ধ হয়
কিছু আটপৌরে বিশেষণ 

তখন বেসরম্
তুমি শাড়ি খুললে
আমি ডুবিয়ে নিলাম
মেপে নিয়ে কিছু দাহ্য ধুলো

প্রদীপ কুমার ঘোষ


অতৃপ্ত আত্মা

সারারাত ঘরের ভিতর ধূপ জ্বালিয়ে পুড়েছি।
একতলা থেকে দোতলা অব্দি বাতাস ঝুঁকে আছে
                                 অধঃক্ষিপ্ত আত্মার কার্বনে।
দরজা এবং জানালার পাল্লাগুলো
চোয়াল শক্ত করে এঁটে আছে।
একটা ঘূর্ণির মতো পাক খেতে খেতে
ছটফট করছে অব্যক্ত আর্তনাদ : যেন পিপাসা।
যেন কতদিন সে মেঘ পুড়িয়েছে বৃষ্টির আশায়।
যেন আজও সে বালি পেয়েছে নিজেকে ছুঁয়ে।
কোনোদিন ঘর বোনেনি লোকটি
কোনোদিন শোনেনি বাবুই পাখির গান।
খিদেই তো এই। এইরকম একটা পা-আটকানো ফাটল।
আড়ষ্ট অন্ধকারে যখন লোকটি বেঁচে থাকার শেষ পিনটি খোঁজে
তখনই হয়তো তার কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতা হয়ে যায়।
 স্বরূপ

অবতারবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে
বোঝা যায় কার কব্জিতে কত ক্যারিশমা
নক্ষত্রের আলোয় গামছা চুবিয়ে
অনায়াসে একটা জ্যোৎস্না নির্মাণ করে
ম্লান করা যায় চাঁদের ঐশ্বর্য
গোপনে দু-চারটে আত্মতৃপ্তির ঢেকুরও তুলে
আবার মিহিন ধুলোয় মিশে যাওয়া যায়
কারণ আমরা কারোর না
আমরা নক্ষত্রের না
আমরা চাঁদের না
আমরা শুধু একটা ক্ষমতার অলিন্দে
কপাটিকার মতো খুলে যাই আর বন্ধ হই।
 আদ্যাশক্তি

অ্যালফাবেটগুলো একে একে নিদ্রা গেলে
পকেটে খুচরোর পরিমাণটা গুনে রেখে
আমি আগামীকালের বাজেটে একটা সূক্ষ্ম গোঁতানি মারি।
সামনে আঙুরের মত টসটসে ফলের পসরা সাজিয়ে
একটুকরো ডাগর শরীরের একটা মেদবহুল আর্দ্রতা
আমার শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথেই ওঠাপড়া করছে।
অন্ধকারে সন্ন্যাসী সাজতে গিয়ে আমার কাপড় খুলে যায়।
মাখোমাখো হয়ে দুধ আর কলা একটা সুন্দর সকাল দেয়।
আর সেইরকম একটি আলোর জন্যই ভিখিরি হয়
আদিদেব ও একজন আদিদেবী।

রাহুল গাঙ্গুলী



ম্যাগমা ও ০-প্রভাব



১) প্রকল্পিত __________
নীলাম্বরী শাড়ি।অদ্ভুত লাগছে।তুমি = ঘোর
অজানা সাম্পানে অচেনা পরিচয়
আকাশী ফল : উপহার।কালো কফির কাপ
ধূমায়িত এলোচুল : ঠোঁটে নামা রাত্রিকালীন ছাই


২) অপরিচিতা নাভিতরল ________
বড়ো বেশী নিশ্চুপ।পাশাপাশি এটাই
বেলুনওয়ালার দাবি অনুযায়ী : গোপন পালক
প্রেতযোনি খুজি।ওড়াই।মাখি।যাযাবর থান্
উলঙ্গ স্তনে : নদী খুড়ে বলছো নিষেক


৩) ভাঙা ণৌকার শ-পাটাতন ________
চিবুকে জড়াচ্ছ নিস্তব্ধতা।ফুলদানী 
কাচের ভিতরে বারুদ : কামড়ায়
সজোরে দরজা খুলি = অনবরত
দাবিহীন বিস্ফোরক : তুমিও ভালোবেসেছো ঝিনুক


৪) প্রতিবর্ত দাফন ________
আবরণে পিতল গলিয়েছি।দাও নাভিশ্বাস
দিকচক্র পোষ মানে না : সমাপ্তিকা মেঝে
অমসৃণে বেয়ে আনা হরফ = নিশানায় চাঁদপাহাড়
অশ্লীল সাপ : ১ম সর্বনাশের শরীর


৫) চুম্বকীয় মরিশাস _________
মরিয়ম্ হতেহতে মোমমেঘ।আকারহীন বৃষ্টি জমে
অ্যাসিডের শুকনো ক্ষয় (দোপাটি চোখ)
রোজআঙুলে মুঠোফোন দেওয়াল = পিয়ানো টুং
আস্পর্ধা : ছুয়ে ফেলি গোপন মরচেপড়া বালি


৬) প্যারাসেন্ট্রিক উড়োজাহাজ ______
ভয় (স্রেফ ভয়)।ভাসমান আপেক্ষিকতা
উফঃ।চূড়ান্ত জীবাশ্মচুরের খনিজ
লোভ ≠ কাম ≠ বিছানা ≠ খেয়াল ≠ আদর
লো কা বি - খে য়া = লুকানো খেয়াপার ≠

দেবার্ঘ সেন

সমকম্পিত


দু 'জনের সামনে মুশলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।
পেছনের সমস্ত পথ বন্ধ।
বৃষ্টিতে ভিজলে প্রত্যাখান করতে পারে দুটি পরিবার।

দশবছর তারা এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ।
সব কটা নৌকো কাটা গেছে অশান্ত ভুল চালে।
জলের বিশ্লেষন রিপোর্ট খুইয়ে গেছে স্রোতে।

বৃষ্টিও থেমে গেছে অপরিসীম ক্লান্তিতে।
দুটো পরিবার শব্দচ্ছকের পেছন পাতায় সেরা পাত্রের খোঁজে।

দুজনে এখন বুঝতে শিখছে বৃষ্টি থেমে গেলেও সবসময় যে
অাকাশ পরিস্কার হবেই , এমন কোনও কথা নেই । 


তুর্কি


শাঁখ , তুমি চুম্বন নিয়ে যেও
যত চুম্বন লাগে আওয়াজ তুলতে গেলে।
দূরবীন, তোমায় শিলাজিৎ দেবো
আহত প্রেমিক ঘরে ফিরে এলে।

মোমবাতি তুমি আগুন চেওয়া না আর
মিছিলে শুধুই জ্বলেছো অর্থহীন।
বদলে আসেনি কোনওই প্রতিকার
বেড়েছে উল্টে আজাদ ঘাতক হিন্দ।

প্রুসিয়ান আর ক্রিমসনের অনু-সঙ্গমে
কালো, তোমার পাওনা গিয়েছে বেড়ে,
যতটুকু থাকে প্রাপ্ত অধিকার;
শিখিয়ে দিও কিভাবে তা, নিয়ে নিতে হয় কেড়ে। 

শ্রদ্ধা চক্রবর্ত্তী

জীবন


এ যেন এক বন্দি জীবন,
ঘুমের আগে পোড়া রুটির স্বপ্ন
আমাকে মাখন চাঁদের লোভ
                       দেখায়---

যাকে ভালোবাসি সে আমার জন্য পাগল...

অথচ, আমার হলুদ শাড়িতে প্রজাপতির
     শাবক সংসার করছে---

সত্যিই কী তুমি আমার!

নাকি, দিনকে দিন নীল হতে হতে
ঝরে পড়বো অপরাজিতার মতন!

সৌম্যদীপ দাস



অনৈতিক স্বপ্ন-১



আমি বিষাক্ত পুরুষ হয়ে উঠবো
এমনটা কথা ছিলনা।
অনৈতিক স্বপ্নের কোলে মাথা রেখে
ঘুমন্ত সন্ধ্যের ঠোঁটে বিলিতি কারুকাজ।
এসবে আমার ঘুম আসেনা।
কখনো সময় আমায় ছুটি দিয়েছে
আবার কখনো আমি সময়কে।
আজকাল অসময়ের পাশে দাঁড়াতেও
আমার  হাঁটু কাঁপে।
মনে হয় তাদের হাতেও
কয়েকটা জ্যোস্না
নিরালায় আকাশ মেরামত করে।
বিকেল হলেই সন্দেহ হয় বুকের অসহ্য ব্যথাকেও
সেখানেই একদিন তোমার ঘর ছিল।
এখন সেসব অতীত।
মাঝরাতে পাঞ্জাবির বুকে একটা পকেট এঁটে রাখি
ঠিক তোমার মতো করে  আত্মবিশ্বাস পুরে রাখবো বলে।।

একরাম আজাদ

আলৌকিক অশ্ব 

অগ্রজ কবিগণ হঠাৎ অশ্ব নিয়ে মেতে উঠলেই আমার মনে পড়লো মা শৈশবে খুব ঘোড়ার গল্প শোনাতেন: কালো লাল শ্বেত ঘোড়ার গল্প। প্রায়ই তন্ময় হয়ে আমি শাদা ঘোড়ার পিটে অলৌকিক বিশ্বের দিকে রওনা হতাম। আপ্লুত হয়ে, ভয়ার্ত হয়ে, বিষণ্ণ হয়ে  নানান রঙের ঘোড়ার দেশে ঘুমিয়ে পরতাম রোজ।

যৌবনের দিকে এগিয়ে যেতেই আমার ঘোড়ার আকৃতি বদলে গেলো।  এখনো আমি ঘোড়া খুব পছন্দ করি: উজ্জ্বল সোনালী ঘোড়া। তীব্র যৌবনময়ী কোনো অশ্ব, যার চারটি খুঁরের পরিবর্তে থাকবে তুলতুলে বিশটি আঙুল আর মাংশল দুটি মাত্র পা এবং তার আরোহী হয়েই অলৌকিক স্বর্গের উদ্যানে পৌঁছে যাবো আমি।

এখন অশ্ব মানে বুঝি মৈথুনমত্ত কোনো সোনালী চুলের নারী, যে ঘোড়ার ভঙ্গিতে আসন নিতে জানে।



বীরেন্দ্রনাথ সপ্তসিন্ধু

লোকাল ট্রেনের মেয়ে
                   

 একটা মেয়ে সুখ বেচে খায়  দুরন্ত এক্সপ্রেসে,
 সেই মেয়েটাই দুঃখ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে
      বাড়ি ফেরে সে বনগাঁর লোকালে।
সেই মেয়েটাই সুখ বেচতে চড়েছে রাজধানী
তার কাছে আমরা প্রেমের সুর কিনে আনি,
শুনেছি সে সারঙ্গের সুর লুকিয়ে গায় ভোকালে।

সেই মেয়েটার ট্রেনের মাঝে ভিড় হয়না আর
সুপার ফাস্টে পালিয়েছে তার ডেলি প্যাসেঞ্জার
               কাকে মেয়ে বেচবে সুখ স্নেহ?
      মেয়ে বলে, এখন আমি যে স্টেশনে আছি-
রেল কোম্পানি ষ্টেশনের নাম রেখেছে সোনাগাছি।
   একদিন দেখি সেই মেয়েটার ট্রেনে কাটা দেহ।

দীপ মৈত্র

মোড়ক



বা‌‌‌‌কি যত কথা ‌ছিল, আশ্বিনের মোড়কে
চাপা থাক।
এই ভালো।
বাকি যত ছোঁয়াছুঁয়ি, 
অভদ্র অভিযোগ,
উপহারের পাতায়
রাখা থাক।

এই ভালো।

এভাবে সব বিকল্প শেষ হয়ে এলে
সন্ধের পাশে উদ্ভিদের মত সাজানো শরতে
ফেরার পথ কাটাকুটি হলে হঠাৎ দাঁড়াব।

ততদিন--

আর যত ব্যথা ছিল, আকন্ঠ শব্দে
ডুবে যাক,
সেই ভালো।


সাকিন




দিন ভাসে,
এখান থেকে 
পাঁচশো পঁয়ষট্টি কিলোমিটার দূরে, নিশ্চিন্ত স্কুটারে;
তাদের পথের পাশে।

তাদের কাছে জমা আছে, লতাগুল্মের ছাপ।
তাদের ঘরের ঘুলঘুলিতে পায়রার আশ্রয়।
তাদের প্রাচীন কাঁধে
নিয়ম করে সব উৎসব আসে প্রতিবার
এখনও।

এখানে বয়স বাড়ে শুধু ঠিকানা খুঁজে নিতে।

কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়

পি সি সেন-এর মাঠ

নীরব তারার মতো আজও জেগে আছে
অদূর পি সি সেন-এর মাঠ
কুড়ি বা পঁচিশবছর ব্যবধান
ব্রহ্মাণ্ডে অপরিমাপযোগ্য ---
এক জীবনে যা প্রতিক্রিয়াশীল
তা বারবার আঘাত করে ---
মন ও ধমনী বিকশিত হয়
স্রোত বয় অঝোর হৃদয়জলে
নীরব তারার মতো নিয়ত
পি সি সেন-এর মাঠ
আমার আকাশে আজও
শৈশব উজ্জ্বল করে তোলে

ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী

ইজেল 


তিরতিরে শীত এসে বাসা বাঁধে
হাতে পায়ে, পাখির ডানায়
অহল্যা কিশোরী চোখ মেলে,
বন্ধ্যা ডাঙায় সেচখাল আঁকা হলে
বেনামী ফুল আর জিরজিরে পোয়াতী কুকুর
পাশাপাশি শুয়ে থাকে হাড়হিম চাঁদডোবা রাতে....

তার সাথে কথা কি বা থাকে?
যে শুধু চেয়েছিল আদিগন্ত শস্যালু মাঠ
হাঁ-কপাট ভালবাসা, যতিহীন সংসারী গান!

এই বেশ নিশ্চুপে থাকা, দূরতম বাসনাবিলাস,
এই অবকাশ, 
এই মায়া আঁকা, আড়ালে আড়াল,
অন্যতর নক্ষত্রের দেশে, অন্যতর মানুষের বাস|

রুদ্র রায়হান


এক হতে গিয়ে


'এক' হতে গিয়ে বারবার একা হয়ে যাই
ছেড়া সুতোর দু প্রান্ত ধরে দুজনে অক্লান্ত
টেনেছি
এক হওয়ার জন্য;
স্রোতস্বিনীর দু পাড় হতে দুজনে কত সাঁতরিয়েছি
এক পাড়ে মিলিত হওয়ার তাড়নায়।
শুধু একটা পলক চোখের উপরে চোখ রাখার জন্য
কত পাহাড় ডিঙ্গিয়েছি!
কতবার সমুদ্র হতে চেয়েছি!
যদি উর্মি হয়ে ফিরে আসো কোনদিন।
কতবার কত অগ্নিকাণ্ড হতে চেয়েছি!
যদি কনকনে শীতে আগুনের পরশ পেতে চাও তুমি!
সেই পাহাড় ডুবে গেছে চোখের প্লাবনে!
সেই সমুদ্র ঝলসে গেছে বুকের দাবানলে!
আমরাও এক হতে পারিনি আর!!

মহাদেবাশা

@ঘুম-৬


তালকুর শিস দিতে দিতে পার হয়ে যাচ্ছ নদী

@ ৎ থেকে উঠে আসা শালিখ

@ ঘুম-৬

@ সাদা একটা লাল

কুয়োর ম 

আমাকে একটা একলা বাসি দিল

এই ঝুম ঝুম বটের সাঁড়াশি

ঞ করছে ছোলার  করপানি

পার্বতী রায়

রোশনাই 



চরিতার্থ হয়েছে সব অনুসন্ধান
পাতার ভারে হাসছে  প্রকৃতি
কিছু ঘুমের শব্দ পায়ের উন্মাদনা ...

হেঁটে চলেছি বহু পথ
কতটা ক্ষতের পর ক্ষয়ে যায় মন
দাঁড়িয়ে থাকা
হাঁটার শব্দ সব মিলে মিশে  একাকার
একটা হাওয়া আসে
শত  শত   রোশনাই পুড়ে ছাই  হয়ে যায়
চোখের মণিতে  চোখ ঠেকে
মানুষে মানুষে অবিকল মেঘ গাঁথা




 
অচল

অচল বেলায় উড়িয়ে দাও পক্ষীরাজ
আমার পরজন্ম ঠায় দাঁড়িয়ে
নিম্নোক্ত পরিধির মধ্যে সব চলাচল বন্ধ
ফাল্গুনী নক্ষত্রের চোখে
দু' এক ফোঁটা  জল সে আর এমন কি
বিষাদ বয়ে আনতে পারে
বায়ুকুল চুপচাপ
অন্তরের অন্যতম প্রকোষ্ঠ বলতে যা বোঝায় তা আমার নেই
আজকাল অবসাদ বাড়লে কবিতায়
ক্ষমা করবেন পাঠক কূল

সুদাম বেরা

দীপাবলি 

তুবড়ি জ্বালাবে না? 
আমার কাছে তুবড়ির মতো একটা পেট আছে - 
বারুদ নেই, খিদে আছে। 
দাউদাউ করে জ্বলে 
প্রত্যেক রাতে। 
এবারেও দীপাবলী হবে , 
প্রত্যেক রাতে যেমন হয়। 

রঙমশাল জ্বালাবে না? 
রঙ-বেরঙের শরীর আছে, 
মশাল তো আমাদের হাতে হাতে। 
মানুষ পেলেই জ্বালাবো। 
পুড়বে দাউদাউ করে - 
প্রতিদিন যেমন পুড়ে, 
আমার পাহাড়ে বা তোমার শহরে। 
এবারেও দীপাবলী হবে , 
প্রত্যেক দিন যেমন হয়। 
        

নীলপঙ্কজ


জৈব সার

ওদের মুখের মসৃনতায় ঝলসে যায় আলো
অন্ধকার চুইয়ে আমি দেখতে পাই সুখ
যন্ত্রনায় ক়ঁকিয়ে উঠেও বাঁচার সাধ জাগে
রাত্রির পাঁজর ফুঁড়ে 
ওরা বড় বড় গাছের শাখা প্রশাখা 
আমাদের ছায়া দেয় দয়া করে কিন্তু বড় হতে দেয়না 
আমরা যে ছোট গাছ লতা পাতা গুল্ম ঘাস 
হয়েই থাকি এতেই ওদের লাভ 
সবাই বড় হলে আকাশে জায়গা কোথায়
যদি বড় হয়েই যাই
ওদের ঘর সংসার পরিচ্ছন্ন পরিপাটি রাখবে কে
সবতো আমাদের ই করতে হয় 
আমরা মরে পচে জৈব সার হয়ে ওদের বড় করে তুলি পৃথিবী ভোগ করবার জন‍্য 
শ‍্যামনগর

কৃষ্ণ দাস


অল্প ভাঁজে চা-পেয়ালা
আর ঝুপ-ঘুপ



তোর চোখে আরেক-টা চোখের 
নিসপিস ইচ্ছার শ্রাবন,

ওই বুকের কাগজে আমার ফোর-
জি,ফোর-জি সিগনাল,
ঝিঙ্কু-ঝিঙ্কু-বোল
গোল খেয়ে টোল।

বুকের সংলাপের হুকে বৃন্দাবন-প্রেম  
ঝুপ-ঝুপ-ঘুফ।

ছুুটোপুটি      হুটোপুটু      ছটপটি

অভিমান নিবেদনের ফুল বলছে 
কি করে ভালবাসব তোকে বারান্দার ঝুল।

একান্ত নিশ্বাসের চোখে ঝড়ে পড়ছে তিন অঘ্রানের ঝুমঝুম।

চা প্লেটের শাড়ির ভাজে ঢুলে পড়ছে বেনোনির
               
                   চুল        ভুল      ফুল ৷



আঁতুর আ্যটিটিউড



বালিশ মৃত্যুতে মাও সেঁতুঙের 
ক্যাঁকোফনি

দিকচক্রবালে নতুন ওলের
প্রজাপতিতে মটরশুঁটি

ফু-ফা মাখছে


অথচ ছোলার ছাতুর বুঁদবুদ
লেগে যাচ্ছে বালিশে

এ সবেকারিতে কোনো
সুপ্রিম-ল আসবে না

একটা মিষ্টি সিসফাস
ল্যালপেলিয়ে আঁতুর
       মাখুক

অরিন্দম ভাদুড়ী

দধিচী

পাঁজরের একটা হাড় রেখে
বাকী তেইশটা তোমার জন্য রইলো,
আবার পাশা খেলো !
এবার,
একবাটি রক্ত ঝরছে,ধরে নাও,
তোমার স্নানের জন্য রেখেছি যত্ন করে |
আরেকটু হাত বাড়াও !
একটা মাংসপিন্ড আছে,
তোমার পায়ের তলায় পেষার অপেক্ষায়,
ওটাও তোমারই,,,
কয়েকটা ঠান্ডা রাত্তির,মেকি দুপুরও ছিল জানো ?
না জেনেই তোমায় দিয়েছি |
আরও চাই ?
বেশ,
নামটুকুও রইল
তোমার ঠোঁটে বদনাম হতে,,,

এবার আসি ?


সুদীপ ব্যানার্জী

স্থবির 


সকাল গড়িয়ে বিকেল।
সব ফাঁকা হয়ে গেলেই সবুজাভ সিগনাল... 
পেরিয়ো তখন দু'টো-পাঁচটার জীবন।

এ লগনসায় কাঁচা রোদ আবদারে দুলে দুলে, জামা,চশমায় ছিটিয়ে দিচ্ছে ফাগ...
ঘাসের বুক থেকে শিশিরের বোঁটা চুষে 
স্নেহময়ী তরল, আর্দ্রতা এনেছে
সমতল জিভের শুষ্কতায়...
এ ছবি প্রোফাইলে টাঙিয়ে, 
নেমে যেতে পারে সন্ধ্যাও।

অথচ ওখানে সব ট্রাফিক থেমে ছিল। 
পেরোতে পারিনি কতো কাল...

এপার থেকে ওপার...
যৌবন থেকে বার্ধক্যের ফারাকে
একে একে রাস্তার আলোর দখলে 
সব ফুটপাথ...

স্ট্যাচু হয়ে কিংবদন্তি সমাধি।
ক'টা ফুল রেখে গেছে...
নাছোড় গায়ক আর তার হার্মোনিয়াম। 
বড় মোলায়েম এক স্বর উঠছে বেজে...

এখনও সন্ধ্যার ঘোষণা হয়নি মঞ্চে...
সিগনাল শুধুই লাল...
আকাশ নড়ছে না...

সোনাই ব্যানার্জী

অনুভূতির সঞ্চয় থেকে


একটা বর্ষা শেষ হলো আবার...
আবার লালচে নদীর কোল বেয়ে নেমে এলো অস্তাচলের রোদ.
অজস্র না পাওয়া চিরসবুজ হয়ে থেকে যায়, আমারই ঘরে.
বলাই যখন ফিরে আসে...
মাটি ই শুধু কষতে পারে বিগত দিনগুলোর জমা -খরচ.
আমি আসি বন্ধু.
তুমি মনে করে একটা বিকেল ধার দিও আমায়...

সম্পর্ক মন্ডল

চক্রধর্ম


জাগ্রত হওউ হে চক্রধর্ম
আমাকে গড়িয়ে নামাও তোমাদের গ্রামে

পাহাড়ের সুদূর ঐ সানুতলে
                  এই বিস্তৃত
আমার ভালো লাগে
            গড়িয়ে গড়িয়ে

         অনেকদূরে ছড়িয়ে যেতে

যেখানে দুখুমনি সোরেনের ঘরে আমার
জন্ম হয়েছিলে গর্ভের ধান্যগন্ধ মেখে

সেই প্রাচীন গ্রামের মাঠে স্মৃতির মুলাকাত

আর ধুতরোর কাঁটা দিয়ে বদরক্তের মুখে
ফিনকি দিয়ে

আহ্বান করছি
হে চক্রধর্ম

এই বিষাক্ত শহুরে বাতাস থেকে

খুব জোরে গড়িয়ে নামাও

                  আমাকে

পারমিতা চক্রবর্ত্তী

আগুন

১)

শূন্যকে ব্যস্তানুপাতে রাখলে
একই উপাদান বারে বারে আসে
রোদ্দুরের কালিমুখে তার একটাই
পরিচয়
"আগুন "

২)
আলো
আরও অপরিচিত হও
একটু নিষেকের প্রয়োজন গুহার
 কালো মুখে'র
আকর্ষণ টেনে  টেনে নেয় যতটুকু
তার থেকে তীব্র অনীহার লেশমাত্র বিস্ফারিত হয় না

৩)
তুমি অনুভব করো পিটুইটারি
আর অভ্যন্তরে স্পষ্টবোধ্য উভগতি
পুনরায় " আগুন" জ্বলবে
আলোর বিপরীতে
প্রদীপের নীচে
৪)
 মরচের দাগে লেগে থাকাটাই
" অাগুন"র অসুখ

পৃথকদীপ

         পিপাসা 


মনখারাপ কথা বলে না 
হয়তো জানলা থেকে বৃষ্টির জীবন খুঁজতে চাই 
মনখারাপ কিছু টা ফুলের মতো, নিজের স্বভাবে 
ফুটে ওঠে 
মনখারাপ কথাও শোনে না 
                              গলা শুকিয়ে গেলেও না 
মনখারাপ চুপিচুপি চলে আসে
                                আর থেকে যায়            

ভীষণ বিশ্রী লাগে, কিছুতেই সারাতে পারি না 
যতক্ষণ তোমার কথারা জল হয়ে 
                               তৃষ্ণা মেটাতে না আসে। 

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

দেবীপক্ষ

 ১
জল ভিজিয়ে দিচ্ছে কাগজ । গজের কল্পনা পিষ্ট করে যায় মন ও দেহ । হয়
যোনি ভাঙা মেয়ে আর রক্তস্রোত
তমসার অসুর আস্ফালন করে । রেখে যায় পেশীশক্তির চিহ্ন দেবীর ছেঁড়া স্তনে । নেশার বোতল এখন টুকরো টুকরো কাচ
চমকে উঠেছে আকাশ । দেবী গর্জন নেই । ঈশ্বরও । ওখানে শুধু অসুরের
মুখ আর অট্টহাসি
শিকার পড়ে আছে নিস্তেজ আর মন্ত্রগুলি নিস্প্রাণ




দেবীর তৃতীয় নয়ন আঁকা হলো বর্ষা
শেষের বিকেলের গৌরী আকাশে । শেষের টান পড়ছে তুলির ও রঙ
রাজরাজেশ্বরী হয়ে উঠেছে ক্রমশ চন্ডীমন্ডপ । পড়ে আছে ক্ষুধার্ত আদিবাসী মেয়ে একধারে । লক্ষ্মী নাম
নিয়েও সে ঐশ্বর্যহীনা
নাকের নথ পরাতে পরাতে কারিগর
মৃত মেয়ের মনোমোহিণীতে ডুবে যায় । বিসর্জনের আগুন জ্বলে ওঠে । চোখে সে দেবী ছিল তবে
বেদখল হয়ে যাওয়া তার সে জমি আর ফেরত আসে  নি দৈবমহিমায়




রাতের কৌশিকী কেটে একরক্ত ভোর
জানালার চোখ খুলে দিলে পাখি সব
রবে রবে নীরবতা পালনে ইতি টানে
নেয়ে ওঠা শিউলি কুমারীর গায়ে প্রথম বালক ছোঁয়া দুঃখেও জানা হয়ে যায় । অপর্ণার তপস্যা সেই তো
ভোলে
লেখাপত্রটি স্পষ্ট হয় স্ত্রী আচারে । চারাটি মাযত্নে জোড়া । আলোকের
স্পর্শ আর জল শক্তি রূপে বৃক্ষটি জাগায় পল্লবে পল্লবে
বেরঙ থেকে সপরিবারে নতুন বেরিয়ে এলে উৎসব সব পেয়েছির দেশে




অপরাজিতার ফুটে ওঠা অ্যাসিড বৃষ্টির পর বিস্ময় । ময়লা সাফ হলে দেবী কল্যাণী । নিহত ক্রোধাসুর । সুরসব অহং বিসর্জন দিলে প্রকৃত সুর
রঙ্গ পায় রৌদ্রার ছোঁয়া । আশাগাছে
তোতাপাখিরা মুখর । খরা কেটে গেলে সিদ্ধি বৌ সংসারের ঘট উপচে । চেতাবনি থেকে ফিরি দুর্গপারায়
পারা নেমে গেলে জ্বরের শান্তি পারাবার । বারবার সে শর্বরী রূপে আসে । সে চলে গেলে দেখি এক বৈষ্ণবী হরি হরি বলে হরণ করেছে তার চোখে
খেলা মহামায়ার আর ঘুঁটি আমরা চালে চালে ক্রমশ অস্থির চালচিত্র আঁকি




বনদুর্গার বেশে গাছটি দাঁড়িয়ে । এখন তাকে কুঠারের মন্ত্র শিখিয়ে উচ্ছেদের কাছে নিয়ে যাবে । অসুরের হাতে নতুন উন্নতমানের অস্ত্র ও উন্নয়ন জপ
পদতল থেকে মাথায় উঠে যায় । যাওয়ার পর লক্ষ্মী তার হাতে । তেতে উঠেছে ধরিত্রী সবুজ বিদায়ে ও নবউষ্ণায়ণে । নেহাত কারো কারো হাতে এখনও চারা
রাতভূষণা দেবী চামুন্ডা হেসে ওঠে বাউল চোখের সরলে । লেলিহান শিখা থেকে নগ্নিকা বেরিয়ে এলে তাকে দেশমা দেশমা লাগে
লাগন হারিয়ে গেলে কোনো রাত্রি আর নবরাত্রি না




কাশফুল তোমার জমিকে অনুর্বর সুন্দরী করে অ্যালবাম । বামা জেগে ওঠা অপেক্ষার । ক্ষার দিয়ে রোধ করা যায় না ক্ষয়
ক্ষয়া মেয়েটি বরফ শীতল । তল কিছুতেই  না পেয়ে  অভয়মুদ্রা খুঁজে দেখি সর্বমঙ্গলার যার নিজের মঙ্গলের সময় নেই
ঈশ্বরী পাটনী আর অন্নপূর্ণার সে দিন
আর নেই আচ্ছে দিনের কোপে । পেয়ে হারানোর সে শ্মশানে  ভীষণা কালিকার অট্টহাসি
শিকল হারিয়ে শিকল পরে বলে যাচ্ছি মা, বন্ধন মুক্ত করো



 ৭


বৃষ্টি সপ্তমী মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলে সে টের পায় ভেজার বয়স । স্তন ছুঁয়ে যায় মেয়েলি হাত । তপ্ত ঠোঁটে প্রথম  মন্ত্র
তুমি দেবী হলে ভান্ডারঘর উপুড় করে দিত নক্ষত্রের দেশ । শাকম্ভরী হয়ে উঠতে তুমি । মিথ্যার সবটুকু আড়াল
সে তো কলাবউ এর ঘোমটা
টাকা উড়ে যাচ্ছে বাজারে চিন্ময়ী কিনে নিতে আর জলের গভীর তল টেনে নিচ্ছে মৃন্ময়ী । ঈশ্বরীর রক্তমাংস খুঁটে দেখছে মর্গের ডোম
মন্দির আসলে এ পোড়া দেহ সে বোঝার আগে পুড়ে গেল গৌরী মেয়ে

 ৮


মায়ার কোনো মহা বসে নি আগে তবুও আগ লেগে যায় পাড়ায় সে
হেঁটে গেলে ৷ লেক থেকে পাখিরা
উঠে ডানা খুলে তাকে দেয়

অসুর সময় আড় চোখে দেখে সেই
মহাসন্ধিস্থান বলির আগে ও পরে 
সতিচ্ছেদ । দক্ষিণ দিক থেকে গড়িয়ে নামছে রক্ত

তমসার ভিতর ভীমা হাহাকার করে
ওঠে ৷ ঠেকের আলোচনা চা এর পেয়ালায় শেষ উপচে তোলে নর্দমার জল ৷ জলীয় জীবনের আশ্রয় অবশেষে মেঘ

ঘন অন্ধকারের খড়্গ কেটে কেটে
সেই জলেই লিখে নেয় দেবীজন্মের ইতিহাস






আগুনের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছেন দেবী৷
বিশোকের পর পড়ে আছে ভস্মাধার মৃত চাঁদের আলোয়
লয়ের পর সৃষ্টি চারা গাছের হাত
ধরে শীতল ছায়াকে চারিয়ে দেয়
আর একশো আট পদ্মের ভিতর
জেগে কুমারী
মারি ও মহামারীর পর এই যে ভিড় আমিকে আমাদের করে নেয়
শরণাগতদিনার্ত পরিত্রাণপরায়নী
কিন্তু ছুঁয়ে যায় শরনার্থী বেদনা
নাম হারিয়ে যায় নবমী নিশি ফুরানোর পর ভোটার তালিকায়


১০


জলের মুখে প্রতিমা মা থাকে না । না জানা সাঁতারে ডুবে শেষে হয় ভিজে
কাঠামো । মোচড় দিলেও এ এক শাশ্বত কলা মোচা ছাড়ানোর পর
রব নিভে গেলে নীরবতার চন্দ্রমুখী পার্বতী খুঁজে হয়রান । রান আছে
চতুর্দিকে । কে রাখে ধরে যে আনন্দ হারিয়ে যায় জলে
লেখে নোলক হারানোর কথা সেই চলে গেলে অনুভবে হার হার লাগে ।
গেল বছরের নাক মুখ চোখ চোখে বসে আছে তবুও হৃদয়
দয়া ভুলে নির্দয় দয়াময়ীর শরীর নদীতে ভাসিয়ে আওয়াজ তোলে
আসছে বছর

পরান জহির

মনাই দ্বীপ 



জেগে থাকা সেই দ্বীপ
মনাই দ্বীপ।
বোবাচোখে দেখে যায় জোয়ার ভাঁটার খেলা
অশান্ত সমুদ্রের তর্জন গর্জন
শান্ত সমুদ্রের মৃন্ময়ী জল...
আর কাল থেকে কালান্তরে ভেসে যাওয়া ভেলা.....
জনহীন প্রান্তরে একা নিশ্চুপ দাড়িয়ে
চারপাশে সমুদ্রের থৈ থৈ জল....

তুষারকান্তি রায়

আভোগ



একটা অস্থায়ী আভোগ বয়ে যাচ্ছে সেতারী আঙ্গুলে।
শতাব্দী প্রাচীন অথচ বহমান,
     যেন টিনের বাক্সে পড়ে থাকা কবেকার আলাদিন,
                          অক্ষরের জাদুকাঠি।
ক্লোজ- সার্কিড ক্যামেরায় আবছা বেথেলহেমের রাত্রি,
ক্রুশিফাইডের শব্দ!মেগাপিক্সেল মাখানো ছবি ,
  আহা !মিহি শাসাঘাতে ঢাকা
                    পুরনো অসুখ,
নাগচাঁপা বনে শৃঙ্গার মুদ্রায় ফুটিয়েছে মহাভৃঙ্গরাজ!

ব্যাকগ্রাউন্ডে চাবুক, ঘোড়ার চিঁ হিঁ হিঁ …

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

নীল জার্নাল
পাতার শরীরে মিশ্র নাগিনী
যতটা যুগান্তর বুকে নিয়ে
কাঁপছিল হৃদয়, পাখি আসবার পর
আজকের জার্নালে অফুরন্ত ঢেউ
সমবেত কোরাসের মাঝে একটি পদ্ম
তার দধীচি হবার মাটি থেকে
শূন্য ছুঁয়ে থাকা দূরত্বে আমি, নীল
সুর ও বিছানায় আমের বোল
আবার উত্তাপ বাড়ে মাটির উঠোনে
কালো দেহের জল কালো হয়ে যায়
সেই স্বরে ইথার আর বাস্পময় চাঁদ
     মরতে থাকে প্রজাপতির বারান্দা--


বিরাগ

নদী  ভাঙ্গনে বাতাসের কোন নির্দিষ্ট দিক থাকে না
অঝোর বর্ষার মাঝে দাঁড়িয়ে পাতারা আটকে থাকতে  চায়
প্রশাখায়, অস্থিরতার দ্রাঘিমায় সাদা পালকের ভয় -
একটা শঙ্খচিল নিয়ে খেলতে খেলতে জানু পেতে বসেছি
আকন্দ গাছের শিবরাত্রির ভেতর, প্রতিবেশী খোড়োচালে
ভাঙ্গা রাস্তার নির্ভেজাল ; এই পথে কেউ আসেনা আর -
বাতাসের আত্মরতি আর ক্ষয়িষ্ণু অঙ্গীকারে ফুল ওড়ে
পরাগহীন --

বিশ্বজিৎ সাহু


ঋতুযাপন 



দীর্ঘ বিরহের শৈত্যিক প্রবাহ বাসন্তিক হলে
দক্ষিণের বারান্দা পেতে ঋতু নতজানু

যা কিছু অপ্রাপ্তি তারও বেশি ক্ষয় , ভুল বোঝাবুঝি যত
বসন্তের পেলব ছোঁয়ায় দিক দিশা পেলে , সংকেত
ছুঁয়ে ফ্যালে প্রত্যয় , আনাচে কানাচে তাকিয়ে দেখি
কচি লাল গোলাপি কিশলয় কিংবা সবুজ আভায়

মিষ্ট কুহুগানে নববধূ সাজে ঋতু সেজে ওঠে প্রকৃতি
আর বসন্ত হয়ে ওঠে নিশ্চিত ঋতুরাজ

বিশ্বজিৎ বাউনা

দীপাবলী-সঙ্গী


যে আলো আর ফিরবে না , ফিরবে না কখনো
সেই স্মৃতি দিগন্তে কে ওড়ায় অচ্ছুৎ পাখি ?
সে ধারালো ক্ষণে কাটাকুটি হওয়া মনও
আজ তবে কোন ভ্রষ্ট-নীড়ে ছুঁড়ে ফেলে রাখি ?

পাথর থেকে মুগ্ধ জল নেমে যাওয়া স্রোতে
রোদ ভেঙে ভেঙে চলে গেছে দূরে , বাধ্য হয়ে ।
আজ আদর-ভাঙা আলোয় বাঁচি কোনোমতে
আর স্নায়ু-খরায় প্রত্যহ যাই ক্ষয়ে ক্ষয়ে ...

কাছে আসা অনাকাঙ্ক্ষিত দমকা হাওয়ায়
তছনছ উড়ে উড়ে জমে দু'বেলা এ বুকে ;
ভাগ্যের ছুরি আজ অদৃশ্যে খুব চমকায়
ক্রমশ তার নেমে আসা দিতে পারি না রুখে ।

দিন রাত আজ সহ্য করি আঁধারের ভঙ্গি ।
অপ্রেমে ভুগি । খুইয়েছি সে দীপাবলী-সঙ্গী ।



আলো-বিন্যাসে


ফেরৎ আঙুলে এখন দু'বেলা ঢুকে যাচ্ছে
দু'হাতে ঠেলে রাখা মোচড়ানো সকাল

পাখি-পাখি পঙক্তির ধারনায়
এখন রূপকথা-ভাঙা ছন্নছাড়া মেঘের প্রহর
                                 নুন-ছোঁয়া জোঁকের মতো..

না-ওড়া বালি কাঁধে থিতিয়ে সময়  ।

আমি তারপর সেই সন্ধিক্ষণে যা ভেবেছিলাম
তার বিপরীতে তরল তালুজুড়ে
                         মায়াবী ফাতনা হাসে ...


তবু , ক্রমশ আঁধারে তলিয়ে যাওয়া
 দিনরাত খুঁটে খুঁটে
  
 জীবন সাজাই এ আপেক্ষিক আলো-বিন্যাসে।

তনিমা হাজরা

অলক্ষীগাথা


ভোর হোলো যে,
ও মেয়েটি জাগো, 
লক্ষী হয়ে অনেক বছর ঘুমিয়েছিলে,
এবার অবাধ্য হও,
 কিংবা একটু অলক্ষীও,
জোর গলাতে নিজের প্রাপ্য মাগো
হে কালিকা, উন্মাদিনী। 

অসম্মানে 
একাই রুখে দাঁড়াও,
আঘাতে দাও প্রতিঘাতের শেল, 
মেয়েলি জীবনের খোলস খুলে
এখন থেকে নারী হয়ে ওঠো।।