Wednesday 18 October 2017

বিশ্বজিৎ দাস

মিনি মহাকাব্য
দেশলাই বাক্স


প্রথম সর্গ

গাম্ভীর্য প্রকাশ্যে না এনে ঘুমিয়ে থাকে বারুদ
ঘরের চারিদিকে রয়েছে সংসার ছাড়ার ডাক
ওগো আগুন, মনে মনে পুষেছি রাগ তোমারই
স্পর্শ পাওয়ার জন্য! বলো ভীমরতি হলে কেউ
বলে না এক সাথে শুয়েও চুপ করে কেটে যায় বেলা...
কাঠের অবসন্ন দেহে আছি বল্টুর মতো ছড়িয়ে
কাকভোরে চায়ের দোকানে, নিষিদ্ধ চিন্তার আড়ালে
রেখে দিই গোপন বেহায়াপনা! এই তো ছিল একদিন
হুস করে জ্বলে উঠে আবার থেমে যাওয়া...

দ্বিতীয় সর্গ

প্রোমোশন চেয়েছিলে অফিসের জন্মে
বারুদ রেডি ছিল না তাই ফিরে এলে
শুধু শুধু কাঠ হলে; বুকে ভর দিয়ে হাঁটলে
কোনো আগুনেরও রসায়ন নেই বুঝে
দু-একটা খড়ের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে
লোভ করেছ ঝাপিয়ে পড়ার! বৃদ্ধের হাঁটু ভেঙে
মুখে সোহাগ দেখে পিছিয়ে গেলে; নষ্ট তামাকের
আজ শুভজন্মদিন! জানো কি কিউরিসিটির
সামনেও বুড়ো তখন হাসছিল বাংলার মানচিত্র...

তৃতীয় সর্গ

ধান নেই, চাল নেই, জমিজমা হেঁজে গেছে
দুমড়ানো মুখে বসে থাকে দেশলাই বাক্স
গোটা গ্রাম ক্ষোভ কিনে চালায় সংসার-সংস্কার!
গডফাদার তেলেভাজা খেতে ব্যস্ত! নিম গাছে সেই
কোকিলের দেখা নেই; সে জানে না ক্ষরণ কাকে বলে?
বাতাসি বাতাসি বলে চিৎকার করেও
আসে কি প্রেম ফিরে?
ছেঁড়া কাপড়ে জবা গাছের আড়ালে
লাল হয়ে ওঠে রসহীন কাঠের টুপি...

চতুর্থ সর্গ

ডাইনিং আর ডাইনোসরের মাঝে কিছু স্পেস দিলে
তুমি হয়ে ওঠো লাবণ্যময়ী! পাশাপাশি বেড জুড়ে
পাশাখেলা মন্দ লাগে না...
বিকালে টোটো ভ্রমণ রেস্টুরেন্টে বুকে আলো
ফেরা আর হয় না...
অনিন্দ্যসুন্দর ফ্ল্যাটেও লাগে পোকামাকড়ের দৃষ্টি!
কোনো মুনিঋষি ছাড়াই তাপ বাড়ে
গভীর শীতে পুড়ে যায় সম্পর্ক
দেশলাইয়ে কাছে ঋণী আমিও-তুমি...

পঞ্চম সর্গ

খাটে ওঠার আগে অনেক মুখ উপচে পড়ে
নিজের মুখ ঢেকে যায়, দেশলাই বাক্স অপেক্ষা করে
পুত্র কিংবা আরও কাছের কেউ ছুঁয়ে দিক; যেন
মাতালে না ছোঁয়!
সাদা কাপড়ে চুমু খেতে কি যে ভালো লাগে
কি করে বোঝাই
আদর্শ শ্মশানে আমি
বেড়ে উঠি নিজস্ব প্যাটার্নে
নিভিয়ে দেব এবার অযথা জটিলতা...

ষষ্ঠ সর্গ

এতো বড়ো বিপ্লবের কাছে ইতিহাস বুনি
গ্যাসলাইটার এলো, এলো ফায়ারিং স্কোয়াড
নিপুণ হাতের তুলিতে
অস্ত্রবিদ্যা ভুলিতে
সময় নুয়ে পড়ে; দেখি
আমারই মৃত শালিখের গায়ে
রেখেছে মায়ামন্ত্রমুগ্ধ দূত!
কোথায় নিয়েছ ঘাতকদের আস্থা?
বধ হল নিজ বলশালী আত্মা...

সপ্তম সর্গ

জ্বলছে ফাটছে
শামিয়ানা তুলে
দেখছে নিমাই
বালতির জলেও
জ্বর বেড়েছে যে
কেন করো এই
ভুল ভাই যদি
মাদুরে ভাদরে যত্ন করে বসো
দেখো ভালোবাসা!

অষ্টম সর্গ

বৃষ্টির বাপের চরিত্র বুঝে নেমেছিল আর্য
কি ক্ষতি করেছে সে
কি বুঝেছে সন্দেহ
রগচটা মাথামোটা সংখ্যা চুলে আসন
পেতে আয়না খুলে
প্রাপ্তি পোশাক ভুলে
ফেলেছে কোনো বিপর্যস্ত মোম; সর্বস্বান্ত হলে!
কে বলেছিল, লাগতে পেছনে
কে দিয়েছিল, উস্কানি?...

নবম সর্গ

সমস্ত মাতাল, মস্তান, ডার্টি রাজনীতিবিদ্
আপনাদের চরণে স্নিকারে ঠুকি পেন্নাম
বলি, আজো আছ হে সুযোগ সন্ধানী
নই মাংসহরণকারী, আমি কবি
আদিকবি বাল্মীকি আর আদি সাহিত্যিক মধু
সিগারেটসহ স্তুতি জানাই, ব্যালকনিতে দাঁড়াই
অথঃ মিনি-মহাকাব্য সারি; ছন্দপতন ঘটিয়ে!
দাঁত কেলিয়ে হাসি; দেশি পান ভালোবাসি
চিবিয়ে চিবিয়ে নির্যাস দিই রসমূলে...

No comments:

Post a Comment