Thursday 1 June 2017

সম্পাদকীয় কলম


সত্যিকথা বলতে বাংলা কবিতায় এখন মানে বর্তমান সময়ে একটা সূক্ষ বিপ্লব চলছে..। এটা কবি থেকে কবির মধ্যে আবার কবিতা থেকে কবিতার মধ্যে..।কেন জানিনা মনে হচ্ছে এর দুটো দিক বেশ স্পষ্ট ভাবে চিনতে পারছি..। ভালো দিক অবশ্যই কবির বিপ্লব কবিতার বিপ্লব সর্বোপরি সাহিত্যের বিপ্লব..।খারাপ দিক এই হলো যে এক কবি থেকে আর এক কবির একটা সূক্ষ দূরত্ব কাজ করছে সেটা শারীরিক কিংবা মানসিক।আমার মনে হয় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং খারাপ একটা দিক..।হ্যাঁ কিছু ভালো কাজ হলে সেখানে ভালো খারাপ দুটো দিকই থাকবে এটা চিরন্তন সত্য কথা।কিন্তু যেটা বলতে চাইছি সেটা যদি একটু সাহস নিয়ে খুলেই বলি বাংলা কবিতায় এখন আমি যতটুকু দেখছি বা যতটুকু অনুভব করতে পারছি সেখান থেকে বললে এমন দাঁড়াই যে - বাংলা কবিতাকে নিয়ে একটা কাদা ঘাঁটাঘাঁটি ব্যাপার শুরু হয়েছে ইদানিং । জানিনা এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই কিনা।কিছু মানুষ এমন দিনদিন হয়ে পড়ছে যে তারা ধীরে কিছু মানুষের মধ্যে হিংসার বীজটাকে এমন ভাবে ঢুকিয়ে যাচ্ছে যে নতুনরা এটাকে প্রথমে দেখে অবশ্যই ভাববে এটা নতুন একটা ট্রেন্ড।কিন্তু একটা কথা , আমি নতুন যতটুকু দেখছি সবটাই যদি অন্ধবিশ্বাসের মতো মেনে নিই সেটা আখেরে আমার নিজের ক্ষতি হবে..। আর এই ধরণের মানুষগুলো এই নতুনদেরকে নিয়ে নিজেদের স্বার্থটাকে গুছিয়ে চলেছে..।এখানে একটা কথা বলার আছে ওইসব মানুষগুলোর ডেডিক্যাশনটাকে সম্মান করি কিন্তু নতুনদের যখন এটা বলেন যে আমরা নতুন কিছু করতে চাই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হয়ে , তখনই মনে হয় সমস্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার মাপকাঠিটা ভেঙে যায়..। আসলে কবিতা লিখতে এসে প্রতিষ্ঠান বলে সত্যিই যদি কিছু হয় সেটা হলো এমন যে- বাংলা কবিতায় একটাই প্রতিষ্ঠান সেটা রবীন্দ্রনাথ..।আর আমরা সেই প্রতিষ্ঠানের এক একটা বাহক মাত্র..। আমাদের তাহলে কাজ কী? না আমাদের কাজ হলো তার লেখাকে আমাদের নিজেদের লেখার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা।
        তাই সেখান থেকে বলি যারা প্রতিষ্ঠান বিরোধী বিরোধী বলে রোজ রোজ চিৎকার করেন তাদের যথেষ্ট সম্মান দিয়েই বলি আমরা সবাই একটা গাছের তলায় লিখতে বসেছি আর সেখানে এভাবে কাদা ছুঁড়ে কোনো লাভ আছে কি? সত্যিই কি কোনো উপকার হচ্ছে এভাবে রেষারেষি করে?বুঝতে পারছি কোন অর্থে প্রতিষ্ঠান বলছেন।ওটা একটা ভ্রান্ত ধারণা..। ওটা থেকে বেরিয়ে এসে দেখুন পৃথিবীটা কত রঙিন..। আসলে সত্যি কথা বলতে একটা জিনিস বলুন তো কবিতা লেখার সময় কি এত বিষয় মাথায় নিয়ে আমরা কেউই লিখতে বসি?তাহলে লেখার পর এত ভেদাভেদ কেন? আমরা যেটা চাই সেটা পাইনা বলে?নাকি আমাদের এরকম মনোভাব যে আমিই একমাত্র যে কবিতা লিখুক আর কেউ লিখুক না?? 
          যাইহোক যেগুলো লিখলাম এগুলোকে কেউই সিরিয়াসলি নেবেন না।কারণ এবিষয়ে আবার আমার বেশি তর্ক করতে ভালো লাগে না।আগেও রেষারেষি হয়তো ছিল এখনো আছে আগামীতেও থাকবে..। আমি বললেও জানি কিছুই হবে না..। শুধু বার্তা এই যে আসুন সবাই মিলেমিশে ভাবি ব্যাপারগুলো..। গোষ্ঠী অবশ্যই করবেন কিন্তু চিন্তাভাবনাটা এমন রাখলে হয়না যে আমরা আমাদের মতো অন্যরা অন্যদের মতো ডেডিক্যাশন করছে করুক কিন্তু আমরা তাদের গালাগালি কিংবা বিরূপ প্রচার দেবো না..।

        যাইহোক অন্তহীন আবার ফিরলো ৯ম সংখ্যা দিয়ে..। এর আগে ৮টি সংখ্যা বেরিয়েছিল..। অন্তহীন কী চায় কী চায়না একটু পত্রিকাটি দেখলেই বুঝতে পারবেন..। সবাই সাথে আছেন তাই আবার পথচলা শুরু করেছি..। এভাবেই পাশে থাকবেন আশা করি..।এখানে অন্তহীন একটা পরিবার একটা ট্রেন..। এই ট্রেনে আবার অনেক নতুন সদস্যকে আনতে পেরেছি..।অনেকে আছেন জীবনে অভিজ্ঞ এবং আমাদের প্রশ্রয় দিয়েছেন আবার অনেকেই আছেন আমার বন্ধু সাহিত্য সেবক..।সবাইকে নিয়ে পথ চলা শুরু করলাম..। বাকিটা যারা পড়বেন আপনারাই বলবেন..।লেখা পড়বেন মতামত দেবেন মন খুলে।পারলে কারো লেখা ভালো লাগলে শেয়ার ও করবেন..। 
                আবার দেখা হবে কিছু কথা ও কিছু বক্তব্য নিয়ে পরের মাসে।এবার তাহলে এটুকুই থাক।


▪ কিছু কৃতজ্ঞতা স্বীকার -

বিভিন্ন অলংকরণ দিয়ে যারা সাহায্য করেছেন তারা হলেন 

পাইলট সেকশন ও সম্পাদকীয় বিভাগের অলংকরণ- রুমা ঢ্যাং
মিক্সড কম্পার্টমেন্ট - সুকান্ত ঘোষাল
কম্পার্টমেন্ট - ১ , ২ এবং ইঞ্জিন বগির অলংকরণ - শুভদীপ সেনশর্মা
এবং যারা সবাই লেখা দিয়ে সাহায্য করেছেন আমায় সবাইকে ধন্যবাদ..। ভালো থাকুন...।।







                                              - সুজিত মান্না

সহ-সম্পাদকীয় কলম

জীবনের অনেক ঋণই শোধ করা যায় না;শুধু স্বীকার করা যায় মাত্র। সেই সব অপরিশোধনীয় ঋণের স্বীকৃতিস্বরূপ আমার এই কলম ধরা। যে পত্রিকার হাত ধরে আমার কবিতার আত্মপ্রকাশ সেই পত্রিকার হয়ে সহসম্পাদকীয় কলাম লিখতে পেরে নিজেকে কী বলে সম্বোধন করব নিজেই জানি না। অষ্টম সংখ্যার পর নবম সংখ্যা প্রকাশের পথে "অন্তহীনের"কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে এবং এর প্রথম কারণ অবশ্যই কবি বন্ধু সুজিতের চেষ্টা এবং আপনাদের ভালোবাসা ও ভরসা। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা যেভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাব এবং হিংসার লক্ষ্যে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে আমরা ভবিষ্যতে ধ্বংসের সম্মুখীন হব না কে বলতে পারে! দু'দন্ড জিরিয়ে নিয়ে আমরা যদি একটা কবিতা লিখতে পারি, শান্তির বার্তা হিসাবে সকলের মাঝে তুলে ধরতে পারি তাহলে ক্ষতি কোথায়? জানি না ডারউইনের সূত্র মেনে আমরা আর কতদিন টিকে থাকতে পারবো, তার আগে হয়ত ছারখার হয়ে যাবে ছাপাখানা। তবুও সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা আজও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছি। বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ তথা কবিগুরুর ছায়ায় আমরা যে যার মতো সৃষ্টি কর্মে মেতে আছি আর এই"অন্তহীন"পত্রিকা সামান্য চেষ্টা করছে আমাদের সৃষ্টিকে সকলের মাঝে তুলে ধরার। রেষারেষি, হানাহানি, খ্যাতির মোহে আমরা অনেকেই আমাদের সৃজনধর্মীকে বিসর্জন দিচ্ছি। আসুন আমরা সকলেই সৃষ্টির উল্লাসে মেতে আর আমাদের সেরা লেখা পাঠিয়ে সমৃদ্ধ করি "অন্তহীনকে"।সকলেই ভালো থাকবেন,সৃজনে থাকবেন, বাংলা কবিতাকে ভেঙেচুরে নতুন পথ দেখান আর আপনিও হয়ে যান সেই পথের পথিক।




                                                ―     অয়ন মন্ডল       

অয়ন মন্ডল

ভাড়াবাড়ি 


বাড়ি ছেড়ে এসেছি বহুদিন। 

মনে পড়ে,
আসা যাওয়ার মাঝে খোঁসা উঠে উঠে 
     পথঘাট সব নতুন 

আমার বাড়ির মালিক আছে 
কলতলা থেকে বাথরুমের জানলায় 
          বোলতা ওড়ে
আমার ঘরের বাঁদিকের কোণটায়
             কম্পিউটার 
ডানদিকে আমার বিছানা
তার উপর সাজানো সম্পদ 
     বই, খাতা, মোবাইল 
                         চার্জার--
কোনো বৈঠকখানা ছিলনা
কবিরাও আসত না

আমার ঘরটার বাইরে প্রতিদিন সূর্য উঠত
    চাঁদও উঠত
দুটি পাখি এসে তাদের প্রেমের গল্প শোনাত

আসলে আমার ভাড়াবাড়িটায় আমার
      মা-বাবা ছিলনা!

বিশ্বজিৎ দাস

সকালে লেখা কবিতা



পিচুটি মুছে ভারতবর্ষে
মেডিকেল পড়া ছাত্রীটি সটান প্রেমে পড়ে

রঙের বাঁশি নিয়ে
রোগ নির্ণয়ে কখনও ইনটার্নশিপ ছাড়েনি

ওকে ক্ষমা করলে এ বছর আজন্মা হবে!


ভাতের ফ্যান ঝাড়তে গিয়ে
শূন্য দৃষ্টি হলে মহাপুরুষ শুধুই নাড়ি টেপেন

জালিয়াতি ডুবেছে একমাত্র চুলে
অন্যান্য পাশের বাড়ি বুকের ডগায় নাচে

সন্দেহ-বেলায় উঁচু স্বর ক্রমশ বয়স মেনে নেয়!

সাগর চক্রবর্তী

বিকল্প


কেজি দরে বিক্রি করছ নিজের শরীর,
অতৃপ্ত ইচ্ছেদের কল্পরূপ।
যা কোনোদিনও করবে না,
সেটাই প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাততালি কুড়িয়ে, পোষাক খুলছ।

তোমাকে দেবী বলে  ভন্ডামী করি।
আসলে আমিও নগ্ন হতে চাই,
তোমার শব্দে আগুনের আঁচ,
স্পর্শের লোভে উত্তেজনা।

তুমি আর যেই হও...
বিষাদকন্যা হতে পারবে না।

মঞ্জু ব্যানার্জী রায়

খুঁটে বাঁধা  সংসার

        

হাওয়া কোনদিকে বইছে বোঝার জন্যে
আমার এক গাছ চুলই যথেষ্ট ।

কেওকারপিনের গন্ধে দুচোখে উথলে পরে একটা সাহারা 
ভিজে চুলে বেজে ওঠে মেঘমল্লার।

রিভার্সে পৌঁছে যাই ইছামতি রিভারে
গামছার দোলানি ঈশারা জাগায়
এপার ওপারে চলাচলে চলে বার্তা
বন্দুকধারীর কাঁধে আন্ডারস্টান্ডিং
কারো আসে কারো যায় ।

পালের হওয়ায় ভেসে যায় সঙ্গম
বিড়ি মুখে ভাটিয়ালি সুর
শেষবেলায় তুমি জানলে না
বুকপকেটে কিভাবে সামলাতে হয়।

পার্বতী রায়



অপেক্ষা 

আজও কি বলে দিতে হবে 
 কতোখানি জুড়ে আছো 

এই বাতাস  , পাখির ডাক  মাঝখানে সতত তোমার যাওয়া - আসা 

লক্ষ্যভেদের সময় হলে কেন নিভে যায় সূর্য!
কপটতা ভরা দুটো চোখ 
 পাহারা দেয় জানালায় !

যেখানে পাহাড় অন্য কথা বলে 
নদী বদলে দেয় গতিপথ 
গোলাপের পাপড়ি তুলে ধরে সৌন্দর্য 

একোন প্রাদেশিক রক্তক্ষরণ 
শুষে নেয় জীবনীশক্তি , প্রাণবায়ু !

অপেক্ষা অপেক্ষা অপেক্ষা  
      অহর্নিশি ।

      
মূর্ত প্রতীক 


দূরে যেতে যেতে নিজের ছায়াটায় ছোটো হয়ে গেছে কখন 
জানালা দিয়ে তির্যক আলো  ভেসে আসে 
তোমার ভেতরে ধূমায়িত যা কিছু 
আজ প্রচ্ছদের আকারে প্রথম দেখলাম 

শোনার পরেও কিছু 
না - শোনা থেকেই যায়  
বিহ্বলতা পথিকের ধর্ম  

প্রকাশ্যে আসে যা কিছু তা সবই সত্য নয় ...

কিছু কিছু মুখের আদল দানবীয় হলেও 
গভীরে লুকিয়ে থাকে প্রেম 

আসলে প্রেম ছাড়া শিল্প হয়না 
শিল্পী নিজেই প্রেমের মূর্ত প্রতীক 

        

রিম্পা নাথ

২২ বছর
           


প্রায় ২২ বছর আগে কোনো একদিন
এই গাছেদের থেকে একটু অক্সিজেন ধার নিয়ে
      বিশ্বাস রেখেছিলাম
আজও কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে দেনা মেটানোয় জীবন বিকোচ্ছি
পৃথিবীর থেকে একটু আলো নিয়েছিলাম পা ফেলব বলে
তবে সমস্ত আলোর অধিকারী সূর্যের সাথে আমার সদ্ভাব নেই
এই যে ২২×৩৬৫ দিন কাটালাম
এটা কালই বুঝলাম একমুখী,কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই
চিরকাল কথা ব্যয় করেছি এতে ওতে
কোনোদিন একটা গাছও নিজের জন্য রাখিনি
শেষ ফালি নিঃশ্বাস এই পৃথিবীটার জন্যই রাখবো  ।

তনিমা হাজরা

বিবর্তন


আমার কপালে  ভালো কিছু দেখলে                                       যাদের চোখের ভিতর অহরহ লঙ্কাগুঁড়ো পড়ে 
                   তাদের আমি অক্লেশে                         মাতৃরূপিনী হয়ে             
                                  ঘটিশুদ্ধু জল এগিয়ে দিই,
কারণ আমি তো দেখেছি।।।।                                     আমার বেদনার দিনে সেইসব কুমীরদের চোখে।।।।

                  কতো সাগরের চোরাবালি  ছিল।।।। আমি কতোবার ডুবতে ডুবতে বেঁচে ফিরেছি সেই অবোধ হাতছানি মায়া টান সেরে।।।আর, আর, আমি তাদের এখন রুমাল এগিয়ে দিই।।।।।
                        
আমার কান্নার রঙ এখন বেগুনী।।।।                           আর আমার অভিজ্ঞতার রঙ এখন  হলুদ।।।।। আমার ভালোবাসার রঙ এখন ধূসর।।।।।আমাকে মাখাবে বলে যারা মুঠোমুঠো অন্ধকার এনেছিল পকেটে আমি তাদের মুখে রামধনু মাখিয়ে দিয়েছি।।।।।।

 আমার স্বপ্নের এখন আর কোনো পরিমিতি নেই।।। আমাকে মাপতে গিয়েছিল যারা, তারা এখন  খেই হারিয়ে ফেলেছে 
                  সেইসব গ্লোবট্রটারদের কাছে আমি এখন এক মূর্তিমান লাভা জমাট সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।।।।।।। 

আমার ঠোঁটের ভেতর এখন এক দূর্ভেদ্য ব্ল্যাক হোল।।।।।।।                    গ্রাস করে নিতে চায় অনেক উল্কার।।।।।।।                         আগুন।।।।।এখন আমি পান করে নিতে পারি 
                                          হাজার গ্যালন  দু:খের পিপে।।।।।।।।নিজের এই বিবর্তন এখন আমাকে 
                     এক নিরুত্তাপ, লড়াকু  ক্যাকটাস বানিয়ে ফেলেছে।।।।।।

ফারজানা মণি

অনেক কাজ বাকি
    
এসেছি অগণিত কাহিনী নিয়ে
উল্টোপাল্টা কিসব 
    সম্প্রতি যে গোলাকার বলয়ে ডুবে মরছি
মাঝ রাত বলতে আমি দু'টো কেই বুঝি।

দরোজায় শেকল না দিলে 
চোর আসার ভয় থাকে
শেকল দিলে তুমি ফিরে যাও।
চাপা ফুলের শাড়ি তখন আপনিতেই
ভিজে একাকার হয়।

স্টেশন রোডের দোকানিকে ১০টাকায় সিগারেট দিতে বলেছিলাম
মেয়ে বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলো, 
আমি তখন পেছন ফিরে এক দাঁত মুখে হাসি দেখেছি।
        
        এই পৃথিবী শকুনেরা ছিড়ে খায়
আফসোস তাদের জন্য আমি টেস্টিং সল্ট বা বিট লবণ
         কোনটাই দিতে পারিনি।

মেয়ে বলে সেবার 
উন্মুক্ত শহরে তোমায় চুমু খাওয়া হয় নি।
আসছে মাসে তুমি আসবে বলেছিলে।
নতুন একটা সেন্টের বোতল কিনেছি।
নামকরা ব্র‍্যান্ড
তুমি এলে গায়ে মেখে নেবো।
              
      আজ ঘরে আমি একা
ঘড়ির কাটার হিসাব আমি রাখি না।সেদিন ছুড়ে মেরেছি।
ভাঙা স্প্রিং দিয়ে হাতের রগ কাটার প্রস্তুতি নেবার সময় মনে পড়লো

     আমার এখনো অনেক কাজ বাকি।

দীপ্তি চক্রবর্তী

তবুও অজানায়

ললিপপ যখন তোমার কৌতুকে মেশে
আমি তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখি

সোনালী রোদ্দুরে ভেজা আউশের ক্ষেত 
বহুদূর সীমার দিগন্ত আর কৃষ্ণবর্ণ চোখের তারা

মাটির সাথে পৃথিবীর নিবিড়তা মেপে
কেটেছে কতো বিনিদ্র রাত

দিনের শেষে চিবুক জড়ানো ঘুম নামে
স্তব্ধ হয় শহুরে কোলাহল

অচেনার গন্ধ মেখে খুঁজে যাই
নতুন ঠিকানার জমে থাকা রহস্যকথা

শৈলেন চৌনী

অন্তরালের রক্তহোলী

এতোটা অন্তরালে রক্তহোলি খেলে গেলে
নুয়ে পড়ি অপ্রকৃতিস্থ বৃক্ষের নিচে
আলাদা হতেই পারি না, অগ্নিচক্ষু অচ্ছেদ্য লেগে আছে তুমুল
কোমল বুকে আজ কে যেনো পাথর মারে
তারেই খুঁজি প্রতিবার নিদারুণ আবেগে
এ কী বন্ধন! বলো, বড় বেশি অধিকারে?
কুহকের মুখে চেঁচিয়ে বলি, ধুকেপুকে বেঁচে আছি
ভালোবাসার নামে ধ্বংসময় জীবনের কথকতা
শুনে যাও, দুঃখ আর শোকের অক্ষরে অক্ষরে লুটেরার গান
পুড়ে যায় আশার সোনালী ধান, নাভিশ্বাস বাড়ছে
টিকে আছে প্রাণ
রক্তহোলি উৎসবে দারুণ উথালপাতাল
ক্ষরণে ক্ষরণে মাতাল এ অন্তরাল...





পৃথকদীপ ঘোষ

রোজ মনে পড়ে 
             

প্রতিটি চিন্তার ফাঁকে ফাঁকেই তোমার সেই মুখ ভেসে ওঠে
মনে পড়ে যায় একাকী দুপুর কিম্বা সন্ধেবেলা গুলো 
খুব গল্প বলতে তুমি আর মনের সাথে মিলিয়ে নিতে মন 
তারপর অনেক কথার উত্তর দিতে না , 'পরে বলব ' ব'লে । 

খুব জানতে ইচ্ছে করে এখন কিভাবে বিকেল কাটাও তুমি 
জানো , বিকেলবেলা নদীর ধারে বসে কুচো কুচো স্মৃতিগুলো 
কাগজের নৌকা বানিয়ে নদীতে ছুঁড়ে দিই । তবু নিস্তার নেই 
রোজ মনে পড়ে , আমি তাই বুকের মাটিতে ইঁদুর পুষেছি ...

দেবব্রত তাঁতী

অসহমর্মিতাঃ


উৎস থেকে বিতাড়িত ঢেউ
আর উড়ন্ত মেঘ 
বিষন্ন রাতের ফাঁকা মাঠের মতো একাকী

দুই পথ দুমুখো 
এক পা অপর পা কে পেছনে ফেলার আশায়
যে পারছে প্রতারণা করে ফিরছে

আসলে সহমর্মিতা  বলে বাস্তবিক কোন শব্দ নেই ।  

নিজেই এক প্রশ্নঃ
দেবব্রত তাঁতী

তুমি কথার ওপর কথা সাজিয়ে 
ভেঙ্গে দাও পূর্বের আলাপন

জানোনা ! মনটা আমার কবেই বন্দী হয়ে গেছে
তোমার গভীরতার কাছে , 
উড়েছে যত শিমূল তুলো
নেমেছে যত রাতের মায়া
ততই বিভোর থেকেছি একাকিত্বকে জড়িয়ে।  

তোমার প্রেমে ডুবতে চাই গভীর থেকে গভীরতর

সত্যিই আমি নিজের কাছে নিজে এক প্রশ্ন
আকাশটা রাঙিয়ে ছিলো ,নিজেকে জানতে 
আর তোমাকে একটু দেখার আশায় ।

জগন্নাথদেব মন্ডল

বর্ষাকালীন ট্রেন



জুনের মাঝামাঝি বৃষ্টি এলে ট্রেন জানালায় মেঘ জমে যায়
মানুষের মন ভিজে এল শ্রাবনদিনের মতো
নক্সা রুমাল,হলদে ছাতাও জল আটকাতে পারে না
ষ্টেশন চত্বরের ভেজা গুলমোহর হাসে
টিমটিমে চা দোকানে লতাজীর গান
আমি শেডের নীচের শালিখভেজা দেখি
কামরায় গান ওঠে অন্ধ বাউলের সাথে
সময় গেলে সাধন হবে না...
গানের সাথে চলতে শুরু করি
ট্রেন কাটোয়া,দাঁইহাট, সাহেবতলা,অগ্রদ্বীপ পেরিয়ে পেরিয়ে যায়...

রশ্মি মজুমদার

মুহূর্তরাঃ


মুহূর্তরা একবার উড়ে যেতে চাইলে
ডানা জুড়ে দিই চিন্তায়
আরও কিছু পথ এগিয়ে যাক ওরা
যতদূর সম্ভব নতুন অতীতদের থেকে,
বিকিরিত হোক ডেস্ক মনিটর রিভলভিং চেয়ার কিবোর্ড প্রতিটা আসবাব থেকে
দূরে উড়ে বদ্ধ ঘরের কোণায় কোণায় জমে থাকুক।

মুহূর্তরা একবার চলে গেলে, ফিকে হয়ে গেলে
ফেলে আসা থেকে নাম কাটায়
বুক বরাবর হালকা পাখির দেহ
নামতে নামতে কাটাকুটি খেলায় জিতে যাই
প্রতিদিন সময়ের থেকে বড় হয়ে উঠি
মুহূর্তহীন মুহূর্তরা সদলবলে বাসা খুঁজতে বেরোয় অন্য নামে অন্য চেহারা নিয়ে
মেলে দিই সমস্ত বুক... ওরা ওদের কাজটুকু করে যাক।

নদেরচাঁদ হাজরা

আলো


হৃদয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে 
নিজেকে প্রশ্ন করিনি কোনোদিন
কেমন আছে আমার মন ?

সবসময় শুধু চেয়েছি
আর চেয়েছি
পাওয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে থেকেছি

ভাবিনি কোনোদিন
দেওয়ার অভ্যাসও থাকতে হয়

আলো দিতে পারে উজ্বলতা
কিন্তু নিঃশেষ হলে কী হবে ?

ভাবা দরকার
তবুও ভাবিনি
অনভ্যাস গ্রাস করে রেখেছে সব

তবে এবার আলোকেও দাও কিছু
অন্ততঃ হৃদয়টুকু ৷


বীরেন্দ্রনাথ সপ্তসিন্ধু

অবগাহন
             

বহুকাল আমাদের স্নান করা হয়নি।
শরীরে পাপের গাঢ় কালিমা আলকাতরার প্রলেপের মত চিটিয়ে বসে।
চলো দেবী,স্নান করে আসি।
আজ যে যুগের অবসান ঘটিয়ে পুণ্যস্নানের নির্ঘণ্ট এসেছে ।
পাপ মেখে ভীড় করেছে শত মানুষের দল,ওরা সকলে তোমার অপেক্ষায়।
স্নানপূর্বে খুলে ফ্যালো তোমার শৃঙ্খলাবদ্ধ অলঙ্কার।
ছিঁড়ে টুকরো-টুকরো করো পুরাতন জরাজীর্ণ বস্ত্র ।
দেবী,মুক্তি দাও নিজেকে ঐ চিরাচরিত বেশভূষা থেকে।
পুণ্যস্নানের জন্য প্রয়োজন নেই গঙ্গা-যমুনা-গোদাবরীর ।
জলভরা মেঘের শুদ্ধ বৃষ্টিতে ভিজব আমরা।
স্নান শেষে তোমার ভিজে আঁচলে মুছবো সারা শরীর ।
দেহকে মুক্তি দেব কালিমা থেকে।
অগুন্তি শতক জুড়ে পাপ মেখে এ শরীর ভারাক্রান্ত ।
আজ অবগাহনের সময় এসেছে :
চলো দেবী,আমরা স্নানে যাই।

বিশ্বজিৎ বাউনা।

হৃত ঈশ্বরী 


পঙক্তি থেকে
খুলে ফেলছি নিকেল রোদ

আড়াআড়ি চিবুকে ওড়ানো দৃশ্যের​
গৃহস্থ আদরে রাখি যে যার শিশির-স্নাত ছুরি ,

অসহায় মেরিলিন বোধ
জড়িয়ে জড়িয়ে অনাহুত সন্ধ্যায়​

সমকালীন সব টোকাটুকি ভেঙে নিজের ভিতর খুঁজি
                         হৃত ঈশ্বরী

মহাদেবাশা

রেক্সোনা আর সালোকসংশ্লেষের রেসিপি
             

মেঘা তোমার চুলে এখনও আমার রেক্সোনা লেগে
কেন এমন জিলেপির প্যাচে ফাটিয়ে ফেলছো আকাশ

তুমি কি জানো না এই সমুদ্রের ঢেউ 
তোমার নামাবলি গায়
এই সমস্ত চাঁদের শেয়াল খসে পড়ুক
গেয়ে উঠুক তোমার অন্তস্বত্ত্বার ভেলপুরি

এই ফুচকা ফুচকা সকালে তোমাকে ভীষণ
দেখতে ইচ্ছে করে
আমার ফড়িং ফড়িং  ছাদে আরেকবার গোলাপ ফোটাও 

ফিরে এসো ঐ জঞ্জালের ফগ ফেলে
স্নিগ্ধ নরম হাওয়ায় গেয়ে যাই তোমার বুকলাঙ

এই দীঘার সৈকতে তুমি ফেলে দিও রক্তের
ব্যারোমিটার
জাহাজ ভর্তি ফুলের নাইট্রেট থেকে তুলে নিচ্ছি
চেয়ারের সালোকসংশ্লেষ

শানু চৌধুরী

মুখোশ


বেডকভারের প্রান্তে ছাপা মমির শহর। প্রতিটি তন্তুর ভিতরে নালভাঙা সুতো-

অবক্ষয় নীচু হয়ে আসে জড়তার কাছাকাছি।

এসব জ্যামিতিক গুণে হাইপোটেনিউস শ্যাডোরা অবিকল কুয়োর ভিতর  ফেলে দেয় অঙ্ক মুখোশ

অহেতুক প্রতারক এই মায়াময় স্বপ্ন ঝালরবিন্দু পড়ে থাকে টিয়ার ড্রপের মণিকোঠার পদতলে

ফরমান

দরজার ছবি আঁকি আর
প্রজাপতির ডানা ছিঁড়ে খায়-
'আমার আমি'

শতাব্দীর অনন্তদাস পড়ে থাকে লেলিহান শব্দের কুহকে

 মশারির ছায়ায় নেমে আসে ঘুম মুখে-ঠোঁটে মথেদের উড়ে যাওয়া

 রোপন করে ঋষভের খেত
বুকের দলিল ছিঁড়ে চাষের ফরমান

জয়শ্রী ঘোষ

সোডিয়াম স্টিয়ারেট


সান বাঁধানো ঘাটে আজ ও অপেক্ষায়
ওই মানুষ টি, ধীরস্থির কেউ কেউ  
তার স্ট্যাচুর মতো দেহকে কাপুরুষ বলে থাকে
শরীরে ছাতিমের  উগ্রতা মেখে ছলাৎ ভর্তি 
কানে নিজ মনে বিরবিরিয়ে বলে বুরা মাত্ শুনো 
সাবানের সাথে সহবাস করে ফেনা সহযোগে 
টি-টোয়েন্টি খেলায় হৈচৈ পাড়ার ড্রয়িং রুম গুলি 
বিজ্ঞাপনে কান পাতলে শরীর বলে প্রেম
              সুরভিত  আন্টি সেপ্টিক ক্রিমে
সমস্ত লাভার্স পয়েন্টে হেঁটে যায় 
                      আমি নামক ক্রীতদাস  
নেশাতুর চোখে শরীর মাএই সুন্দর  
   প্রয়োজন বরোলীনের
গাছেদের ও সংসার আছে শেখর বহু দূরে



শক্ত বরফে একট্টা করেছিলাম ইচ্ছে গুলোকে
রাত্রি অ্যাকটা পাঁচ যাকে আমরা সকাল ভাবলে
ভুল হবেনা, বাফারিং হচ্ছে তো হচ্ছেই 
আঙুলে ঝিঁঝি তার পরেই পায়ে
চাঁদ স্পর্শ দাও



জলজ্যান্ত উদাহরণ তারা রা, ফিচকেল হাসি 
ছন্দময় জীবনে ব্যস্ত, সূর্য যখন ঘুমিয়ে, ফ্রেস মুডে সেরে ন্যায় জীবনের হার্ড ওয়ার্ক গুলি 
ম্যাক্সিমাম সময়ে সিলিকন স্বপ্ন দেখায় 
নোংরা জামার স্তুপাকার



তিরতির কাঁপছে কানের লতি, সকালের জলকেলি , কখনো উবু কখনো চিৎ মার্কা
মৈথুনে মৈথুনে আলগা শরীর 
                 মুক্তি  টলমলে
পায়ের ফাঁকে জটিল ডট ডট
সোডিয়াম স্টিয়ারেটে ফাটছে জল

রুমা ঢ্যাং

রুমা ঢ্যাং

অবসন্নতা 

মাস্তুলে আটকে থাকা একখণ্ড কাপড়কে কেউ জিগ্যেস করে নি 
কিসের টানে ত্রিভুজের কোণায় ঝুলিয়েছে শিথিল বাহু। 
নুনের ঝাপটায় তাকেও শিখে নিতে হয় 
মাঝ সমুদ্রে বেঁচে থাকা এবং ভাসা,
ঝড়ের বেগে মরে যাওয়াও।
উত্তাল ঢেউ ভেঙ্গে এগোনোর দায়ভার নিতে নিতে 
বাঁশের আগায় কখনই লেখা হয় না অবসন্নতা!

কুশপুতুল

মুক্তি চেয়ে যেখানেই মিছিলের তোড়জোড় হয়েছে 
একটা করে গারদ-কুশপুতুল পুড়েছে।
রণে ভঙ্গ দিয়ে ছুটেছেন বিপ্লবের জহুরি।

জন্মজয়ন্তী

যদি মিথ্যাভাষণেই হয় লিলিপুটদের জয়জয়কার
তো ঝাণ্ডা নামাও -- 
ধান্দাবাজেরও হোক একটা করে জন্মজয়ন্তী! 

রাহুল গাঙ্গুলী



জিরো গ্রাভিটির রিংটোন





একপেশে বিশুদ্ধতা চুইয়ে পড়লে
০-অভিকর্ষে ধ্রুবকের মান কাল্পনিক
এখন ১১-৩৯ সকাল।খবর অনুযায়ী সূচক
প্রত্যন্ত আচল থেকে ভূ-গর্ভস্থ সিদুর জাতীয়
যে পাখি যন্ত্রণায় অভিশাপ কুড়িয়েছিল
হারানো জতুগৃহের পর - ঠোটেও ধ্রুবকের মান ০




আপাতত।কয়েকমুঠো দেওয়াল তুলে রাখি
এসো।এসো ভার ০-তার খেলায় : খেলা হোক
লোভ আসুক।তাবুর পথ্য জুড়ে অভিযুক্ত মুখোশ
পতন চলছে।আপাত পতন।ঘনতরলে আপাত
লাজুক মেঘ ছুড়ি।তুমি ছুড়েছ সাপের খোলশ
রাস্তায় এলোমেলো দেওয়ালের ছাপ




ঘিয়ে রঙের জানলা থেকে হাজারমতা চোখ
চোখ ঘিরে - নীলচে অরবিট্।অরবিটাল কোলাপ্সে
ডাস্টবিন।ডাস্ট।নীলচে চোখ।আনাচকানাচ 
প্রত্নতাত্ত্বিক তাপ-প্রবাহে নেগেটিভ ছু মন্তর
পেঁয়াজকলি ভিজতে থাকে জৈব ক্ষারে
তুমি বলছো : প্রেমনিষাদ ঝরছে গুড়োগুড়ো




মোবাইলে (কখন) শুষছে ছাই ও ছাই
নিকোটিনের লালায় আমাদের নিত্য মেমব্রেন
এবং ছুঁইছুঁই পিথাগোরিয়াস স্বর্গ ও মন্থন
আবার ৫০০ বছর পর ভূ-ত্বাত্তিক ব্যভিচার
কুকুরের পেটে থাকা তরল পৃথিবী
দেখলাম।অথচ ১/২ তন্ত্রী প্রমাণিত




গ্রাস করেছি কেতুগ্রহী বুদবুদ
হাওয়া শিখিয়েছিল - যা কিছু আছে কালগ্রাস
সময়টাই ইতিহাস : বাড়তে শেখে।চলতে শেখে
পায়ের পাতায় নামে সৌরতা আদিম
আদিম বমি উগরাচ্ছে মগজ।
মগজের হেলান বারান্দা।শুকোচ্ছে অচেনা ত্বক




আনকাট্ শব্দগুলোর হাতছানি
এডিটোরিয়াল নোট - বাচছি আবগারি হিমে
হয়তো ভার বললে : অলীক ব্যস্ততা বোঝো
বেহিসাবি টিকটিকির ল্যাজ।আগামাথা টুংটাং
লাফিং বুদ্ধ হেসে ফেললে : বিপরীত বিপর্যয়
শরীর ঘষলে - ১ অজ্যামিতিক একান্তর কোন


শুভদীপ সেনশর্মা

 বৃষ্টি সিরিজ



যারা বৃষ্টিতে ভেসেছিল



যেদিন বৃষ্টি হবে বলে জানলাম -- সেদিন
আমি মেঘেদের সঙ্গে মেতেছিলাম রং খেলায়

যেদিন বৃষ্টির নৌকা ভেসে এল মনের
ভেতর -- সেদিন অঝোরে শিলা পড়েছিল অবেলায়

যেদিন বৃষ্টি হবে জানলাম -- সেদিন
সূর্যের ছূটি ছিল, আকাশ ছিল চাঁদের

যারা বৃষ্টিতে ভেসেছিল -- কেবল তারাই
ছাতা নিয়ে স্বর্গ ভ্রমণে এসেছিল

বৃষ্টিও এল ছাতা নিয়ে



যাদের জন্য বৃষ্টি এল



বৃষ্টি আসার খবর আমার মনে নেই
তবুও আমায় সে জানিয়েছিল

বৃষ্টি আমার পুরোনো বন্ধু
ও খুব লাজুকে -- আহ্লাদি অশ্রু

যে বৃষ্টিতে আমরা ভিজব বলে
বসে আছি -- এখন তাদের কান্না ভেজায় শরীর

যাদের জন্য বৃষ্ট এল -- তারা তো আনন্দিত মেঘেদের
প্রেমিক -- যারা বৃষ্টির পড়শি...

আরশিনগরের পড়শিরাও বৃষ্টিতে ভিজেছিল



যে বৃষ্টি এসেছিল ঘরের ভিতর



যেদিন আমার মনের ভিতর দেশ উল্টেছিল
সেদিন তো বৃষ্টি পড়েনি...

যেদিন কাবেরী ফুলের ডালে গোলাপ হবে, শুনলাম
পৃথিবী থেকে উড়তে লেগেছে অজস্র গোলাপ

যেভাবে বৃষ্টির বন্ধু আমার কাছে এসেছিল
রাতের স্টেশনে ইয়ার্ডে কিন্তু সেদিন বসন্ত আসেনি

যে বৃষ্টি এসেছিল ঘরের ভিতর -- তাদের হাসি
চোখের জল হয়ে ঝরেছিল শরীরে শরীরে

আমার শরীর সেদিন বৃষ্টিতে ভিজেছিল



যে বৃষ্টি আমার প্রেমিক



যেভাবে দেখা হল বৃষ্টির সাথে -- আমি তখন ছোট
প্রথম দেখায় মনে বৃষ্টি পড়েছিল অঝোরে

যেদিন বৃষ্টির জন্য আমার মনে রোদ উঠেছিল
সেদিন সন্ধ্যায় মেঘেদের নিমন্ত্রণ ছিল বাড়িতে

মেঘেদের কোলে হাসছে এক বৃষ্টি শিশু
আমার যাবার সময় হয়েছে এবার

যে বৃষ্টি আমার প্রেমিক -- ওর জন্য গোলাপ
নেবো বলে হাঁটছি মেঘপথে

যে বৃষ্টি মনে আছে সে আনন্দে ভাসে আকাশে



যে বৃষ্টির কথা বলা হয়নি



বৃষ্টির অনেক কথাই মনে আছে
অনুশোচনার বাক্যে হাসছে বন্ধু বৃষ্টি

যাদের বৃষ্টির দরকার ছিল তাদের কথা
আমার বলা বারোন -- বৃষ্টি রেগে যাবে বলে

বৃষ্টির ঠাণ্ডা মনে গরম গরম কথা
ভাসছে কথার নৌকো -- আমার মনের ভিতর

যে বৃষ্টির কথা বলা হয়নি -- তাদের কথা
আর না বলাই ভালো, বিষণ্ণ পৃথিবীর বুকে

বৃষ্টির শব্দে আমার কথা ফোটে মুখে



যেভাবে বৃষ্টি পড়েছিল



যেদিন মেঘেদের নিমন্ত্রণ ছিল বাড়িতে
সেদিন বৃষ্টি আসেনি

আমার মনে একটা আকাশ এসেছিল
বিনা নিমন্ত্রণে -- বৃষ্টি আসেনি


মনের বাইরে রোদ উঠেছিল
উঠেছিল চেতনার রামধনু

যেভাবে বৃষ্টি পড়েছিল মনে -- সেভাবে
পাথর পড়েনি আগে কোনোদিন

চাঁদের কলঙ্ক বৃষ্টি হয়ে পড়ুক আমি চাই



যেটা বৃষ্টির দেশ



পৃথিবী যখন হালকা থাকে
বৃষ্টি পড়ে -- টাপুর টুপুর শব্দে জমে জল

আমার বন্ধু বৃষ্টি খেলে -- জলের ওপর মেঘের
ছায়া, পড়শিরা সব নৌকো ভাসায়

যাদের কথায় নৌকোর ওপর ভাসছে
সবুজ মেঘের দেশ

যেটা বৃষ্টির দেশ -- সেখানে
থাকে অনেক রোদ্দুর, যারা বৃষ্টি হতে চায়

বৃষ্টি কখনো রোদ্দুর হলে মেঘের হাসি পায়



যে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল



বৃষ্টির সাথে একদিন হঠাৎ দেখা
তার চোখে আমার ছায়া

বৃষ্টির টুকরো কথায় ভিজেছিলান আমি
আমার কথায় ভিজল ম্যালের রাস্তা

বৃষ্টি আমার অন্ধকারের বন্ধু
আমার অন্ধকারের নিঃসঙ্গতা

যে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল -- শহরে
সে রাতে নক্ষত্র আসেনি, এসেছিল মেঘ

আমার নির্জন মনে এখন মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর



সুজিত মান্না

নজরদারি



প্রতিটা রাত্রি আরো কয়েকটা রাত্রির কথা বলে
সফল প্রতিটা শিকারের পর
বনের ঘাস নিজেদের শরীরের যত্নে নজর দেয়

এমনই এক সন্ধ্যায়
কোনো মাটির মাথাকে ছুঁয়ে দিয়েছি পা দিয়ে
মাটির কণ্ঠে সুর নেই , তাই প্রতিটা খাঁচা আমার দুর্ঘটনা মাপে

আমার পুরাতন গাছটার শরীরে
কাক বাজপাখি কোকিল আর সাপের নিয়মিত বাসা
নিজেদের ছন্দ  ভুলে তারা , চতুর্দিকে টহল দিয়ে বেড়ায়

আমি মরা হলুদ হবো কিনা জানিনা
তবুও এই শিশিরে মাঝে মাঝে দমবন্ধ হয়ে আসে ধীরে ধীরে

জোনাকিরা অন্ধকারে তার বাড়ি আমায় উপহার দিলেও
আকাশ থেকে কিছু কিছু আকাশ
রোজ ভাবি নেমে আসবে ডুবিয়ে নেবে বলে

তৈমুর খান


রাতের ব্রিজ 

মাটিতেই শ্রদ্ধা পুঁতে রাখি 
হৃদয় শুধু কেঁদে কেঁদে ফেরে 
বিহ্বল আর্তনাদ নদীতে ভাসাই 
বিবেক কল্পনালতা হয়ে ওড়ে 

আমার কি আকাশ আছে  ? 

রোজ ডান হাতে মেপে নিই খুদ 
জীবিকার মূর্খ অভিলাষ 
সারারাত ধান ভানে বুড়ি 
জবাগাছ বেড়ে ওঠে দেখি 

মানুষের ভেতরে মানুষ থাকে না  ? 
কে তবে থাকে  ? 

লোলমুখ প্রাণীদের বিবাহ বাসর 
বেশ বাজনা বেজে ওঠে 
আগুনের ব্যবহারও শুরু হয় 
কোনো কোনো অনৈতিক সংগমে 

তবুও জলের ফোয়ারার ধারে 
বসে থাকি কোনো কোনো বিকেলে 
আশার পোশাক দেখি রঙিন ঝরোকা 
দুলে দুলে সামনে আসে 

আহা দিন চলে যায় 
আহা আশা চলে যায় 
রাতের ব্রিজ দিয়ে দেখি রাত পার হয়  ! 



বিচ্ছিন্ন মানুষ 

এত শোকের ঝরনা 
আমি জল পান করতে পারিনি 

সারারাত নগ্ন রাত্রি কেঁদে গেল 
গুহায় গুহায় হিংস্র গর্জন উঠল 
মানবসভ্যতার কোনো রাস্তা চোখের সামনে দেখা গেল না 

দূর পাহাড়ের সীমানায় কাদের রংধনু শাড়ি উড়ল 
ফালা ফালা হৃদয়ের প্রতিধ্বনি শোনা গেল 
আর রক্তাক্ত মুচকুন্দ ফুলের বাঁশি 
                       জোনাকির সখ্যতায় জ্বলে উঠল 
                                                             দেখলাম 

কোনো বাজনার কাছে যেতে পারলাম না 
কোনো আহ্বানের কাছে আসতে পারলাম না 
এক অসত্য ভঙ্গুর ধ্বসের তীরভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকলাম 
মেঘমন্ত্রহীন প্রচ্ছায়ার অন্তরালে 
                                    বিচ্ছিন্ন মানুষ এক  ! 

কুমারেশ তেওয়ারী

স্থানাঙ্ক 

মিথোজীবীতার কোনো কপাট নেই
তাই বীণা বাজাতে বাজাতে প্রোটোপ্ল্যাজম 
কাছে এসেও ফিরে যায় দুরে

দৌড় থামিয়ে রেসকোর্স দেখে
জানলার শার্সিতে ঠোঁট ঠুকছে যে নীল পরী 
তার ডানায় জড়িয়ে আছে একতারার ছেঁড়া তার

ঘরের যে দেয়াল তাদের কারও জানা নেই
তথাগতর কোলে সুজাতা নামের এক মেয়ে
যেদিন তুলে দিয়েছিল পরমান্ন 
সেদিন বোধিবৃক্ষের চোখের দিকে কেউ চেয়ে দেখলেই
দেখতে পেত তার চোখের তারায় ভেসে ওঠা এক বনচাঁড়াল
কতটা আকুতি নিয়ে খুঁজে যাচ্ছে তুলসীর বন

আসলে যে সমস্ত রাত মিথ সম্বন্ধীয় কিছু খোঁজখবর রাখে
শুধুমাত্র সেইসব রাতই জানে প্যাঁচা স্বভাবে খেচর হলেও
চাঁদের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে প্রায়শই ভুলে যায় শিকারপ্রতিভা

জয়দীপ চক্রবর্তী


স্ট্যাচু-145

কোনও কোনও জীবন ঝরে যাবে জেনে শেষের মুহূর্তেও রেখে যাই উদাসীনতার প্রতি ক্ষমা।
বুড়িগঙ্গা জানে এমন নির্মমতার প্রাত্যহিক সওদাগরির প্রতি ঈশ্বরের আস্তিনে নেই এতটুকুও করুণা ...

             

আফজল আলি


জর্দাপানের কৌটো
                

ও মনের দালাল , একটু কামরূপ নিয়ে যাবে 
এ সময় রুটি সেঁকছে গৃহিনী 

     দরদাম স্বাগত ছিল না
মনখারাপের সরবত খেয়ে রোজ বিকেলে ঘুরব

যতটা ঘাম বরাদ্দ , ইদানিং দেখছি তারচেয়ে হচ্ছে বেশি 

চামড়া বিষয়ে আমার গ্রহণযোগ্যতা এমনিতেই কম
তার উপর নামের নালিশ তো আছেই

সালিশি সভায় হেলমেট পরেছি
    নীল দিগন্ত নীল দিগন্ত 
মোহিনী  মাতাল যতক্ষণ  ছিলাম
     ততক্ষণ আমি ঘুমের সূচী 

চিরপিপাসা হে গুপ্তধন , ঠিক কতক্ষণে সামাল দেওয়া যাবে জর্দাপানের কৌটো

যতদিন বাঁচবো
            - -  -  -  -  - -  -   -  - 

যখন ঘুম বিদায় নিচ্ছিলো , কিছুটা সুখ আমি বিলিবন্টন করলাম

    পাযের কাছে কাঠবিড়ালি 
হ্যাঁ হ্যাঁ মনসংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এখন প্রবাসী 

কী বলো পিয়ারিরাম , এরচেয়ে ভালো কিছু সমন্বয় যদি পাও , আমাকে দিও

পঞ্চাশ ঝলসে যাচ্ছে , পোড়া রোদের গন্ধ 
তুমি কি চাও , বুক মেরুন পাঞ্জাবি পরে ঘরে ফিরুক মন্দাক্রান্তা ছন্দে ? 

যতদিন বাঁচব ততদিন শিখব 
স্বরবর্ণে ব্যঞ্জনবর্ণে মাত্রা মাত্রা দিয়ে

মধুরেণ সমাপয়তে - - শেষ হচ্ছে না কিছু শুধু খুলে যাচ্ছে ভোর

এখন দেখছি অনেক ভুল করেছি আগে
তা হোক ,  চলো ওপাশে চলি


নিয়তি - প্রাণ
             

মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে কিছু বলবেন স্যার
আমার তো ক্ষরণ অনিবার্য 

পরমায়ুর ডানদিকে হেলে গিয়েছি
দুঃখের সংহার হল না আজও

    যা আমার তাই তো আমার

খুব প্রাচীন থেকে টেনে তুলছি জীবনের বিকেল
      বৃথায় টানাহেঁচড়া  করছো

ভালো থাকতে গিয়ে অবহেলা , দূরত্ব ও জখম
কবেকার মেঘ কবে উড়েছে

না না এ সব ভেবো না 
তোমাকে নিয়তি এখন পেয়েছে প্রাণ

সুকান্ত ঘোষাল

ঝরণাতলা


বাঁ কানের প্রশংসা তোমার জন্য ছিল।
আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে আসা
হাওয়া দিলে আত্মজ্ঞান নড়ে।
           
          দু'চাকার ব্যালেন্স
       মাঝে মধ্যে ঝরণাতলা

বাইরে খালি প্যাকেটের গায়ে
                                  বৃষ্টির শব্দ।
  
যেগুলো পারিনি
ততটা অপরিহার্য ফিরিয়ে দিলাম।
                  
                অবিকল
লেজে পা দেওয়ার মতো
                         গোপন যদি থাকে

অদৃষ্টের আরো পাঁচটি আঙুল।



তর্জনী বিষয়ক




সেই অনেকদিন আগের
কোন এক রাজা

এভাবেই অসামান্যের দিকে
চালিয়ে নিয়ে গেছে ।

আপাতত জলজ্যান্ত-
কীর্তি বুলিয়ে গরম হচ্ছে তর্জনী।



তর্জনী থেকে বীরত্ব পর্যন্ত
দাড়ি কাটার মতো চওড়া
আশ্চর্যের আগে আগে থাকি।

বসানোর জন্য যেগুলো তুলে দিলাম

তাদের কারণে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াই ।