Sunday 23 December 2018

এই মাসের কবিতা

অন্তহীন সংখ্যা - ১৫






Saturday 17 November 2018

১৪তম সংখ্যায় প্রকাশিত স্বর্ণমুদ্রা

গৌরাঙ্গ মন্ডল

উজাড় 



কী তাণ্ডব দেখালে, তৃতীয়া
কী তাণ্ডব শুনিলাম

তুমিই সে গুরুপত্র
নিম্নে লিখিলাম

নাও বৃক্ষ, নাও টুপ্, অলভ্য সঞ্চয়
ভরে ওঠো হানিতে হানিতে

এ ভাণ্ড ফুটিয়া যাক গড়ন ঢালিতে

অন্যতমা



অন্যতমা, ধোঁয়ায় ভেতর, নুনের ভেতর একশো দুশো বছর চলা লবণজলে ধূলোবৃষ্টি ভিজিয়ে গেল বিকেল-প্রাতঃ নিরাসক্তির অনুষঙ্গে। এখন তো ভোর-স্নানের জন্য ডেটল, ওয়াশ কিছুই তেমন কেনা হয় না। কিন্তু, ঘুমে স্তব্ধ যখন তোমায় নিয়ে তোমায় দিয়ে তোমায় ছাড়া সমস্ত রাত এলবেলে ভুল স্বপ্ন বিছোয় গায়ের গন্ধে শূণ্যতারা। এখন না সেই এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ভাবতে ভাবতে, ভাবতে মোটে ভাল্লাগে না। সেদিন ছুটি। ফাঁকাই ছিলাম। ঘুরতে যাওয়া বন্ধু বাড়ি টবের কাদা-সারের মাঝে, সত্যি বলছি-- দ্রবীভূত তোমার রেণু, পাপড়ি, কথা , দৃষ্টিকুচি কুড়িয়ে পেলাম। মূহুর্তে নীল আঁতের থেকে, ঘাতের থেকে জিভ অবধি রক্তবমন, সত্যি বলছি এক নিমেষে ঘেন্না ভাঁটায় গুটিয়ে নিলাম, ইচ্ছে মতোই কোনো তত্ত্বে জীবনধারণ সহজ হলেও জীবন ধরা বেশ অ্যাবসার্ড। সব মেয়েরাই প্রথম রাত্রি শোয়ার খাটে কাছিম হয়ে গুটিয়ে যায়..গুটিয়ে যায়.. লুটিয়ে যায়

বিশ্বজিৎ মাহাত



ভিক্ষুক 

শহরে আধুলি ওড়ে,
অসাড় দোকানি থেকে ভিখিরির ঝুলিতে নেমেছে

সে ঝুলিতে কত আলো,
আধুলি, গায়ক দল প্রতিপলে কোলাকুলি হয়

জ্বালামুখো, গান শোনে আদুল শরীরে
স্নেহ কাকে বলে বোঝে

এ স্নেহে মানুষ তুমি,
লাউ ডাঁটা হয়ে ঘরে ফিরো



সর্বনাশ 

সর্বনাশ বেহালা বাদক
অগণিত তার হাত। নিরঙ্কুশ সুরে সিক্ত
জন্ম নেয় সীমান্তের পাশে, দূর-ক্ষেতে, শহরেও

অসহায় ভেকধারী ভ্যাংচানো যুবক

কোনো মায়া পুষে পুষে
আমিও মুছব একদিন

নচেৎ পৃথিবী পালটাবে না

অয়ন মন্ডল


পাঁজরের ব্যথা


চারিদিকে মৃত্যু স্বপ্ন
টেলিফোন বুথে দাঁড়িয়ে অশরীরী আত্মা

ফিরে এসো ভালোবাসা
পুরানো অভিমান ব্যালকনি থেকে নামিয়ে দাও

কাপড়ের নীচে
ব্রা শুকানোর দিন শেষ
খুলে ফেল সমস্ত বিষাদ
কাছে এসো
সুগন্ধী চুল বিছিয়ে দাও

শেষবারে দেখে নাও
কপালের তিলক
কবিতার খাতা
মনখারাপের কাজল

ভালোবাসো!
চন্দন কাঠের অপেক্ষা...

এসো! চুমু অপশন জামার বুক পকেটে
তোমার স্তন থেকে একফোঁটা দুধ বাঁচিয়ে রাখো

খিদে খিদে অভাবের সংসারে


চোখের আড়ালে



বরং আমাকে ভুলে যাওয়ার আগে
জামার হাতা গুটিয়ে নাও
গায়ে ছিটিয়ে নাও সুগন্ধী আতর
রবিবারের মৃত সবজি
প্র্যাকটিক্যাল খাতা
গাঢ় নীল রঙের লিপস্টিক
অবসাদের আকাশ চুঁইয়ে চুঁইয়ে এগোচ্ছে
কবিতার বাঁকে বাঁকে...

যে মানুষ ভালোবাসতে জানে না
তার একলা থাকার ঘরে টিকটিকির সঙ্গম দৃশ্যও বেমানান
তুমি চাইলেই শীতের বিছানার নীচে লুকিয়ে পড়তে পারো
টুকরো টুকরো করে দিতে পারো মোমের আলো

গ্রিলের ফাঁকে জমে থাকা আকাশ প্রদীপ নিভে গেলে
চোখের পলক সরিও না!

আফজল আলি

কলকাতার ঘুলঘুলি


যা হতে পারত বা যা হয়নি এ সব নিয়ে
উৎকণ্ঠার উপকূলে আলমারি খুলে লাভ নেই
চলো মালকিন , টেলিভিসন  দেখতে দেখতে কলকাতার ঘুলঘুলি ঘুরে আসি

গভীর উদ্বেগ সিমকার্ড চুরি করেছে
সেই ভদ্রলোকের গায়ে হলুদ  পাঞ্জাবি
যার পাযে হাওয়াই চপ্পল ছিল পরবর্তী  অর্ধেক জীবন
কোনো না কোনো বিবেচনার কাছে হেরে গিয়ে ঝিমঝিম করছে মাথা

ফাল্গুন মাস এসো , ঘুরে আসি কিছুটা অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে
লড়াইটা ঠিক সামনাসামনি বা সামনে পিছনে নয়
একটি ক্লান্ত জীবনের ব্যাকরণ ওষুধ  ভেবে খেয়েছিল
তখন বেহেস্তের খাঁচা আরো আড়ষ্ট হতে হতে
জীবন দেখছিল আমাদের আঙুলের  পরিমাপ

ভেবে দেখো ভাইসব , এই দহন থেকে মুক্তি পেতে ঠিক কতদূর যাওয়া  দরকার
যাতে নাম  উজ্জ্বল আকারে থাকবে

ভাষার অতীত থেকে

   

অন্ধকার প্রতিস্থাপিত  হতে চাইছে
কোথাও  আর একটু ভালোবাসার  কথা
আর একটু ধৈর্যের উত্তরণ
চেনা পাখির গায়ের রঙ , কখনো হলুদ হয়ে যায়
কখনো ভরসা খুঁজতে আসা অচেনা ঠোঁট

কবিতার সে সব শব্দ অনর্থক নয়
যাবতীয় লজিক ভেঙে বিড়াল দৌড়াচ্ছে
অন্তরঙ্গ যা ছিল তাদের শক্তি উধাত্ত  আজ

ভাষার অতীত থেকে প্রতিদিন-ই ভাবি ভুলে যাব
কথার উসকানিতে ধোঁয়া উঠছে মনে
সামান্য শব্দের নেশা
  অসম্ভব জেনেই কাটালাম
যতটা যন্ত্রণা ব্যবহার করেছি , ছাঁকনি হিসেবে তা গ্রহণযোগ্য কিনা

Friday 16 November 2018

কুমারেশ তেওয়ারী



পাঠ-প্রতিক্রিয়া 


পাঠ-প্রতিক্রিয়া নিতে প্রস্তুত ছিল যে কবিতাটি
তার শরীরী গঠন ছিল নান্দনিক
ক্ষীণ তটি পীণ পয়োধরা
তবে কোনো সাপগন্ধি বাঁক ছিলোনা সেখানে

পাঠকের জন্য ছেড়ে রাখা স্পেসে যে রহস্য ছিল
খুব স্বাভাবিক, যার থাকার মধ্যেই কবিতার উত্তরণ
যে কোনো পাঠক পড়তে শুরু করলে তাকে
অসম্ভব মগ্ন এসে করে দেবেই তাকে স্থিতধী সাধক

কবিতাটির ভেতরে এক আগুনও ছিল
তবে তার রূপ দাউদাউ নয়
নম্র এবং শান্ত স্বভাবে এক গা সওয়া আঁচ
বের হয়ে আসছিল তার নাভিকুণ্ড থেকে
সেই আঁচ ছড়াতে ছড়াতে কবিতাটি স্বাভাবিক নিয়মেই
প্রস্তুত করেছিল নিজেকে, পাঠ প্রতিক্রিয়া নিতে

কথকতা


কথকতা থেকে নীরবে শোষণ করি যাপনের আলো
গেরস্ত প্রদীপ জ্বেলে পার হই উৎপাদনের মাঠ
দেখি, শস্যকণা মুখে মেঠো ইঁদুরেরা
প্যারেডে নেমেছে এক আলোকিত মাঠে
তাদের চলার পথে শব্দ নেই কোনো পতনের
র‍্যাম্পের জটিল কিছু শর্তাবলী নেই

মাথায় মুকুট পরে চাঁদ দেখতে দেখতে
যে মেয়ে পাগল হয়ে যায়
যে ছেলেটি বাৎসায়ন কোলে
বেঁধে ফেলতে চায় চাঁদের কুসুম
তারা কি দেখেনি কেউ ফসলের মাঠ?
স্বপ্নে দেখে শুধু নীল হরিণ-হরিণী চেটে খায়
                                               রাতের পতন?
যাদের অলীক ডানা মেখে রাখে পরাবাস্তবতা

এসবই আসলে এক জটিল অসুখ
সোহাগকুসুম ছেড়ে আম্রপালি ভ্রম

যেখানে অলাতচক্র ঘোরে বনবন সেখানেই
বিপুলের ঘাড়ে পা রেখে ক্রমশ উঠে যায়
স্বপময় এক স্পাইরাল আর নষ্ট মিথকথা

Thursday 7 June 2018

সুজিত মান্না

গুঞ্জন

১।

অনায়াসে কাছের বাগানফুল মুখ নামিয়ে নিচ্ছে । গাছেরা নামিয়ে রাখছে ডানা । দেখতে দেখতে বাগানমাটির একদম কাছে পৌঁছে যাই । বাগানে কি কোনোদিন আয়না পাওয়া যায় ! কিন্তু প্রতিবারই যখন মাটি ছুঁই , চোখের মধ্যে হাজারো ধুলো ঢুকে যায় ।

ঘরের মধ্যে আসি । জামারা হাত নামিয়ে রাখে । সমস্ত দেওয়াল মুখ সরিয়ে নেয় । ঠিক উল্টোদিকে ঘুরে যেন আমায় বিদায় জানাবে । আমি হয়তো এতটাই অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছি !

আমি তারপর আর মানুষমুখো হইনি । মানুষের মুখ ফিরিয়ে রাখা আমার কাছে ঝরে যাওয়া গাছের জীবনপ্রীতির মতো । আমিও দিনদিন কেমন ঝরে যাচ্ছি । এই হাঁটাপথে কোনো সূর্যজোনাক নেই । এই রাস্তা শুধু মুখ ঘুরিয়ে আমায় চোখ বুজিয়ে নিতে বলে । নীরবতা তাহলে কি এতটাই আমার প্রয়োজন হয়ে পড়লো !

২।

কোনোদিনই বৃষ্টি একা আসে না । আমাদের খেয়াল করতে হয় কোথায় না জানি কীভাবে রোজ ঘটে চলেছে হাজারো ঘরে ফেরা । তুলে রাখি সমস্ত সুখের পায়রাদানা । কাকতলীয় মুহূর্তদের ঘাঁটতে ঘাঁটতে পৌঁছে যায় আমার শেষপ্রান্তে । হয়তো এভাবেই আমিও শুধু নীরবে শ্বাস নেওয়ার জন্য একাধিক শব্দ করে যাবো ।
     
                  আমার ডুবে যাওয়া হয়তো একটা ধর্ম লেখা আছে । প্রতিবার ডুবে যাই আর বালি খুঁজে খুঁজে তুলে আনি জীবনপাথর ।

অন্যমনস্ক রাত বলে কিছু নেই । যেগুলো আমায় দেখে রোজ লোকে চোখ বন্ধ করে , সবই মর্মান্তিক কোনো এক বজ্রপাতের নৈঃশব্দ্য পালন । খুঁজে চলি হাত , ঠিক যেভাবে শেষমুখ একটু জল চেয়ে খায় ।

৩।

ভিজতে থাকা মনের গভীর দিয়ে যে রাস্তা চলে গেছে তার প্রান্তে দাঁড়িয়ে একদিন জোর করে চিৎকার করেছিলাম ― কেন এত চলাফেরা , কেনই বা এত নিজেকে খাদমুখী করে তোলা । কেউ উত্তর দেওয়ার মতো ছিল না । কেবল হেঁটে যাওয়াই যে মানুষের ধর্ম হওয়া উচিত , খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আবিষ্কার করেছিলাম ।
 
                      এক শিশুমুখ রাস্তা পেরিয়ে বসে যায় ফুটপাথ জুড়ে , আমি কান বন্ধ করে হাঁটার চেষ্টা করি । এই দুনিয়ায় শুধুমাত্র শুনে শুনে কোনো পাহাড়জয় হয় না ।

হাঁটতে হাঁটতে সেদিন এতটাই এগিয়ে গেছিলাম , লাল হলুদ সবুজ রঙ মিশে গিয়ে যেন আমায় আহবান করতে থাকে । আমি হাত বাড়িয়ে দিই , ক্রমশ সেই মুখ আমায় ভেতরে টেনে নেয় । তারপর আর ফেরা হয়নি বহুকাল ।