এসো প্রলাপ বকি
এক
এই ধূসর পৃথিবীতে একাই
বৃষ্টি সংরক্ষণের কাজ করি।
কবরের পাশে দাঁড়ায় সাহসী ঘাস
আমি তেলে জলে বড়ো করি জেদ ।
বনজঙ্গল আর আটকে রাখা সম্ভব নয়
এই নিস্তব্ধতায় মিলিয়ে গেল শব-অক্ষর
দুই
বড় বিচিত্র আবহাওয়া আজকাল
মেঘ আসে মেঘ কেটে যায়
কোনো গন্তব্যে পৌঁছায় না বৃষ্টি
কোনো চাহিদা মেটাতে আসে না চিঠি।
তিন
পেন্টাটনিক শব্দ বাজে রাতে,
রাজনৈতিক হাতিয়ার
ধর্মের ঘটে এসে আন্দোলন করে ।
পান্ডবদের খান্ডববন জ্বলে ওঠে ।
বনজঙ্গল পেরিয়ে বসতি পুড়ে ছাই ।
তার পর রাষ্ট্র নামায় সেনা ।
চার
পায়ে পায়ে পাহাড় হাঁটে সেনা
চেপে দিতে আসে আন্দোলনের মুখ ।
একটার পর একটা জনতার মিছিল,
রাষ্ট্রের কাছে জবাব চায়,
রাষ্ট্রের গুলিতে ছিন্ন খুলির জবাব।
অধিকারের লড়াই থামে রক্তাক্ত দেহে।
পাঁচ
এসো প্রেমিকা
আমরা পাহাড় পাহাড় খেলি ।
গরমের ছুটি
আমরা অবসর যাপন খেলি ।
এসো প্রলাপ বকি
কথা ফুরিয়ে আসে একান্তেই
বুঝে নিতে হয় এর পর শুধু মরুভূমি ।
আমরা কেউ উট নই
আমাদের খুব তৃষ্ণা ।
আমরা কেউ পাখিও নই
সহজে উড়ে পার হয়ে যাব ।
আমাদের বুকের ঝড় ওঠে
বৃষ্টি আর ভেতর ভাঙচুর ।
আর একটা ফাঁকা জায়গা
হুহু করে হাওয়া বয়ে যায় ।
মা বলতো তোর ভয় নেই
তুই মানুষ হবি না ।
যত বয়স বাড়ছে
আমি পঙ্গু হচ্ছি ভয়ে ।
আজ মা নেই ।
অসুস্থ ভাই আছে ।
সব দেখে নিজের মত
কিছু বলতে পারে না।
মাঝে মাঝে একার জীবন
অন্ধের মত লাগে ।
মাঝে মাঝে একার জীবন
মায়ের বলা অমানুষের মত লাগে ।
এসো প্রলাপ বকি
(এক )
উড়ন্ত ঘুড়ি নেই
( দুই )
বেপরোয়া দুপুর
খেলার মাঠ
ফেলে রাখা সাইকেল ।
(আড়াই )
বিষবৃক্ষের ডালে আটকে আছে কথা ।
(তিন )
বমি বমি ভাব নিয়ে সেমিনার ।
(চার )
কপচানো বন্ধ হলে
হামাগুড়ি দিয়ে শিলিগুড়ি
বাস থেকে বাসায়
একলা ঘরে অস্থায়ী আবেগ ।
এসো প্রলাপ বকি
যে জীবন নামক কারখানায় আছি
সেখানে দিনমজুরীও পাই না ঠিকমতো
দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছি
ভাবি লিফলেট বিলি করে আসি
সারা শরীর জুড়ে লিখি, আজ হরতাল ।
ন্যায়সঙ্গত দাবি, প্রলাপ বকছি না ।
এসো প্রলাপ বকি
তোমরা পাহাড় ভালোবাসো
ফিরে ফিরে আসো জঙ্গলে
আমরা বিলিয়ে দিতে থাকি
প্রস্তরযুগ থেকে ধরে রাখা আদিম সুখ।
তোমাদের নির্জনতার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকে
বহু যুগের অপেক্ষা নিয়ে সাঁওতাল কিশোরী ।
তোমরা যে নদীর কাছে এসে বসো
তার স্রোতের ছন্দে বাজে প্রাচীন মাদল ।
তোমরা আমাদের সূর্যোদয় দেখে যাও
চা বাগানের সবুজ দেখে যাও
পিডিএফ-এ টুকবে বলে রসদ নিয়ে যাও
বিশাল পাহাড় অভিযোগ নিয়ে দাঁড়িয়ে
তাদের ভাষা বা পরিচয় নিয়ে যাও না কেন?
এসো প্রলাপ বকি
একটা পাহাড় রেখে গেল কেউ
হৃদয় থেকে হৃদয় পর্যন্ত ।
একটা ঝরনা অবিরত ঝড়ে পড়ে
সম্পর্কের উচ্চতা থেকে ।
এক একটা বর্ষাকাল শেষ হয়
শুকনো নীল চোখে ।
মরা উৎসব ফিরে ফিরে আসে
নিয়মমাফিক মেনে নিতে হয় ।
মৃত মানুষের স্রোত হেঁটে যেতে থাকে
শহর থেকে অনুভূতির গভীরে ।
মজুরির দাবিতে বন্ধ ডেকে
লড়াই জারি রাখে সংগ্রামী জীবন ।
দিন বদলের স্বপ্ন বুলিয়ে দিচ্ছে
জীবিকাহীন বিলাসী প্রেম ।
তুমিও আছো এত কিছুর ভীড়ে
ভীষন ভাবে, নিজেকে নিয়ে প্রলাপে ।
এসো প্রলাপ বকি
(1)
চেনা ফ্ল্যাটের পাশ দিয়ে
হেঁটে যাওয়া রাস্তা আর অন্ধকার ।
শীতের রাত সাড়ে বারোটা ।
ট্রেনের শব্দ এখন স্পষ্ট
শীতকালই চেয়েছিল প্রেমিকা ।
গরম কাপড় মোড়ানো একটা পাহাড় ।
বাতাস বয়ে আনে শহুরে অভাব
মানসিক ফাঁক গলে গ্লোবাল গ্লাসে
দেয়ালে দেয়ালে 'গোপনে মদ ছাড়ান' ।
মৃত ব্যক্তির নাম ভুলে যায় শহর
রাস্তার নাম বদলে দেয় ক্ষমতা ।
রাত বাড়ে আর বাড়ে জড়তা ।
বন্ধ ঘরে চলে সারা পৃথিবীর যুদ্ধ
ফ্যানে ঝুলে পড়ে একরোখা জেদ
খবর অনুযায়ী কাজ এগিয়ে সকাল ।
(2)
শহর থেকে রাস্তা এগিয়ে আসে
জঙ্গল আর পাহাড়ের আলিঙ্গনে ।
ভীড় এড়াতে আসি পরদেশী মেঘ ।
হাতে হাত প্রেম মনোটোনি জ্বালাতে
আগুন নিয়ে আসে নিবিড় অরণ্যে ।
নিংড়ে নিতে চায় হিসেবি অবকাশ ।
বিষন্ন বিকেলে এফ.এম বেজে ওঠে
বিদ্যুৎ সংযোগ না পৌঁছেও
পৌঁছে যায় শহুরে উল্লাস ।
ঝড়ো বাতাস হুহু করে ছুটে আসে
জঙ্গলে ফুল খুঁজে ক্লান্ত প্রজাতি
ঘরে নিয়ে আসে বেকারত্ব ।
হোটেলে হ্যেলোজেনে হাসির শব্দ-
কাঁচা রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে থাকে-
বন্ধ কারখানার শ্রমিকের নিথর দেহে ।
No comments:
Post a Comment