Wednesday 18 October 2017

পরিতোষ হালদার



ঘরোয়া


মা কাগজের নৌকা বানালে, আমরা তা ভাসিয়ে দিতাম।
জল তাকে নিয়ে যেতো-
ভেসে যেতো আমাদের সহজ খেলা।

কখনো দীর্ঘশ্বাস চুরি করে ঘুড়ি বানাতাম আর উড়িয়ে দিতাম আকাশে।
উড়ে যেতো সংসারের বাতাসকণা।

ঘরোয়া শিল্পে মা ক্রমশঃ রূপকথার মতো- একাএকা নৌকা বানাতো, কাগজে দীর্ঘশ্বাস বানাতো।
আমরাও ভাসিয়ে দিতাম, উড়িয়ে দিতাম।

কী জানি, মা তার বেদনাকে এভাবে ভাসাতো কি না, উড়াতো কি না !



আপেল


আপেল পতনে কেঁপে ওঠে দুজন এবং তাদের আত্মদর্শন শরীরদর্শনে এসে দাঁড়ায়।
দেখে আপেলে মাধ্যকর্ষণের মাংস।

কোন এক জন্মে আবার পতনের নিশ্চয়তা দিয়ে আপেলটি ফিরে যায় বোটায়।
ঠায় দাঁড়ানো দুজনার বোধে তখন একজন নিউটন ও একটি পুষ্পহীন গাছ।

তারা ফিরে আসে সংসারে- মেষপালন আর চাষাবাদের কাছে, 
জন্মের বিবিধ ঋণের কাছে।

তবুও স্বপ্নে কিছু আপেলগাছ রোজ বড় হয়, রোজ তারা নতুন করে বুঝতে পারে-
আপেল একটি চুম্বনগামী ফল।


সবুজপাতা


পাতা ঝরে গেলে, বসন্তও লাল হয়ে ওঠে, পাখিদের চৈত্র উড়ে যায়।
আড়ালে কে ছিল একা, হাতের রেখায় তার প্রজাপতি রঙ- 
রঙের মাতৃকাবেলা।

আকাশে জ্যোৎস্না নামে, তারায় তারায় ছায়াপথ আঁকা; মিন ও ময়ূরের মতো নাচুক নন্দন।
কতোটা নির্জন পথে আলোর শেষে নামে অন্ধকার- 
মায়ার উপরে রাখা ঝিকমিক সংসারধারা।

আমরা ভাল আছি, আমাদের মায়েরা সবুজপাতা, ঘরে ঘরে বালিকা বিদ্যালয়।




ত্রিভূজ


তৃতীয়জন প্রেম নিবেদন করলে প্রথমজন তা ফিরিয়ে দেয় কারন সে ভালবাসে দ্বিতীয়জনকে, যে একজন মানুষ।

প্রত্যাক্ষিত তৃতীয়জন উদ্যানটিকে ধ্বংস করে দিতে থাকে এবং মনে করে সে যা সৃষ্টি করেছে
তা ধ্বংস করার অধিকার তার আছে।
এমনকি সে প্রথম ও দ্বিতীয়জনকে সৃষ্টি করেছে অতএব তাদের ভোগ করার মালিকও সে।

একটি ফলবান বৃক্ষের তলে প্রণয়পর্ব শেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয়জন দেখে উদ্যানটি ধ্বংস হয়ে গেছে।
তারা তৃতীয়জনকে অভিশাপ দেয়- সে বীর্যহীন হয়ে পরে।

শাপগ্রন্থ তৃতীয়জন সেই থেকে ব্যাপক সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করে।






সপ্তম


তুমুল ফুটে থাকো- এইসব মুহূর্তরেখার পাশে প্রাচীন জাদু।
বর্শামুখর মৃগয়ায় প্রদীপ্ত হাসি তোমার।
আগুনের পাশে ভায়োলিন বাজাও, একটানা স্বর ও ব্যঞ্জন।

সপ্তমে এসো- উপহাসগুলো গোলগোল একা।

হেমন্তে নুয়ে পড়া শীত, সম-ঈরণে দীর্ঘ করো নিঃশ্বাসধারা।

উত্তরের খুব কাছ থেকে বেঁকে যাওয়া তুমি- শিল্পের আর এক নাম।
আঙুলে ভাসিয়ে দেও রঙ, দশমূদ্রার বাগানবিলাস।

আমাদের কোন সেতু নাই, অথচ প্রতিদিন ভেঙ্গে পড়ে অজ¯্র উড়াল।



শ্রুতি


অজস্র শ্রুতির যোগফল- ভ্রান্ত রোদ্দুরের কাছে হেলে পড়া বিকালবেলা।
কি নামে ডাকো তারে, জন্ম নাকি জলপাই ছায়া।

সারস খুলে দেখো, এক অদ্ভূত বর্ষাকাল।
ডানায় তামাটে মেঘ, অভিনন্দনের মতো অসমাপ্ত বাঁশি।

অন্তিম ফলের কাছে যে স্তব্ধ থাকে তার মোহ পতনেই শেষ। শুধু অন্ধকার ভর্তি শব্দের শৈশব।
ছুঁয়ে যায় পাপ ও পাপ ও পাতার বাঁশি।

আত্মোৎসর্গের শেষে পরে থাকে প্রাচীন অপেরা।
তুমি তার প্রথম মিথ্যুক।
চারদিকে দৃশ্য খোলা, তবু চোখ জুড়ে অনন্ত অপ্সরা।




সাদারঙ


চলো, ফেরার পথে বায়েস্কোপ দেখি, দৃশ্যের দিকে চোখ রেখে বলি-
জয়তু বিন্দু....
জয়তু বিসর্গ....

শুরু ও শেষের মাঝখানে তোমার সন্তান ভাল নেই- দুধভাত ছেড়ে গেছে তারে।

অজস্র বর্ণিল ছিল,শব্দের সিঁড়িপথ ছিল। তোমার অন্ধকারে উড়ে গেছে পাখি-
এক জোনাকি.... 
দুই জোনাকি.... 

আলো অন্ধকারে তোমার সন্তান ভাল নেই- জুঁইফুল ছেড়ে গেছে তারে।

তবু রাত শেষে হাত তুলে থাকি; তুমি এসো, আমাদের হাতে হাতে-
জুঁইফুল দেও....
দুধভাত দেও....

No comments:

Post a Comment