Wednesday 18 October 2017

দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

দেবীপক্ষ

 ১
জল ভিজিয়ে দিচ্ছে কাগজ । গজের কল্পনা পিষ্ট করে যায় মন ও দেহ । হয়
যোনি ভাঙা মেয়ে আর রক্তস্রোত
তমসার অসুর আস্ফালন করে । রেখে যায় পেশীশক্তির চিহ্ন দেবীর ছেঁড়া স্তনে । নেশার বোতল এখন টুকরো টুকরো কাচ
চমকে উঠেছে আকাশ । দেবী গর্জন নেই । ঈশ্বরও । ওখানে শুধু অসুরের
মুখ আর অট্টহাসি
শিকার পড়ে আছে নিস্তেজ আর মন্ত্রগুলি নিস্প্রাণ




দেবীর তৃতীয় নয়ন আঁকা হলো বর্ষা
শেষের বিকেলের গৌরী আকাশে । শেষের টান পড়ছে তুলির ও রঙ
রাজরাজেশ্বরী হয়ে উঠেছে ক্রমশ চন্ডীমন্ডপ । পড়ে আছে ক্ষুধার্ত আদিবাসী মেয়ে একধারে । লক্ষ্মী নাম
নিয়েও সে ঐশ্বর্যহীনা
নাকের নথ পরাতে পরাতে কারিগর
মৃত মেয়ের মনোমোহিণীতে ডুবে যায় । বিসর্জনের আগুন জ্বলে ওঠে । চোখে সে দেবী ছিল তবে
বেদখল হয়ে যাওয়া তার সে জমি আর ফেরত আসে  নি দৈবমহিমায়




রাতের কৌশিকী কেটে একরক্ত ভোর
জানালার চোখ খুলে দিলে পাখি সব
রবে রবে নীরবতা পালনে ইতি টানে
নেয়ে ওঠা শিউলি কুমারীর গায়ে প্রথম বালক ছোঁয়া দুঃখেও জানা হয়ে যায় । অপর্ণার তপস্যা সেই তো
ভোলে
লেখাপত্রটি স্পষ্ট হয় স্ত্রী আচারে । চারাটি মাযত্নে জোড়া । আলোকের
স্পর্শ আর জল শক্তি রূপে বৃক্ষটি জাগায় পল্লবে পল্লবে
বেরঙ থেকে সপরিবারে নতুন বেরিয়ে এলে উৎসব সব পেয়েছির দেশে




অপরাজিতার ফুটে ওঠা অ্যাসিড বৃষ্টির পর বিস্ময় । ময়লা সাফ হলে দেবী কল্যাণী । নিহত ক্রোধাসুর । সুরসব অহং বিসর্জন দিলে প্রকৃত সুর
রঙ্গ পায় রৌদ্রার ছোঁয়া । আশাগাছে
তোতাপাখিরা মুখর । খরা কেটে গেলে সিদ্ধি বৌ সংসারের ঘট উপচে । চেতাবনি থেকে ফিরি দুর্গপারায়
পারা নেমে গেলে জ্বরের শান্তি পারাবার । বারবার সে শর্বরী রূপে আসে । সে চলে গেলে দেখি এক বৈষ্ণবী হরি হরি বলে হরণ করেছে তার চোখে
খেলা মহামায়ার আর ঘুঁটি আমরা চালে চালে ক্রমশ অস্থির চালচিত্র আঁকি




বনদুর্গার বেশে গাছটি দাঁড়িয়ে । এখন তাকে কুঠারের মন্ত্র শিখিয়ে উচ্ছেদের কাছে নিয়ে যাবে । অসুরের হাতে নতুন উন্নতমানের অস্ত্র ও উন্নয়ন জপ
পদতল থেকে মাথায় উঠে যায় । যাওয়ার পর লক্ষ্মী তার হাতে । তেতে উঠেছে ধরিত্রী সবুজ বিদায়ে ও নবউষ্ণায়ণে । নেহাত কারো কারো হাতে এখনও চারা
রাতভূষণা দেবী চামুন্ডা হেসে ওঠে বাউল চোখের সরলে । লেলিহান শিখা থেকে নগ্নিকা বেরিয়ে এলে তাকে দেশমা দেশমা লাগে
লাগন হারিয়ে গেলে কোনো রাত্রি আর নবরাত্রি না




কাশফুল তোমার জমিকে অনুর্বর সুন্দরী করে অ্যালবাম । বামা জেগে ওঠা অপেক্ষার । ক্ষার দিয়ে রোধ করা যায় না ক্ষয়
ক্ষয়া মেয়েটি বরফ শীতল । তল কিছুতেই  না পেয়ে  অভয়মুদ্রা খুঁজে দেখি সর্বমঙ্গলার যার নিজের মঙ্গলের সময় নেই
ঈশ্বরী পাটনী আর অন্নপূর্ণার সে দিন
আর নেই আচ্ছে দিনের কোপে । পেয়ে হারানোর সে শ্মশানে  ভীষণা কালিকার অট্টহাসি
শিকল হারিয়ে শিকল পরে বলে যাচ্ছি মা, বন্ধন মুক্ত করো



 ৭


বৃষ্টি সপ্তমী মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলে সে টের পায় ভেজার বয়স । স্তন ছুঁয়ে যায় মেয়েলি হাত । তপ্ত ঠোঁটে প্রথম  মন্ত্র
তুমি দেবী হলে ভান্ডারঘর উপুড় করে দিত নক্ষত্রের দেশ । শাকম্ভরী হয়ে উঠতে তুমি । মিথ্যার সবটুকু আড়াল
সে তো কলাবউ এর ঘোমটা
টাকা উড়ে যাচ্ছে বাজারে চিন্ময়ী কিনে নিতে আর জলের গভীর তল টেনে নিচ্ছে মৃন্ময়ী । ঈশ্বরীর রক্তমাংস খুঁটে দেখছে মর্গের ডোম
মন্দির আসলে এ পোড়া দেহ সে বোঝার আগে পুড়ে গেল গৌরী মেয়ে

 ৮


মায়ার কোনো মহা বসে নি আগে তবুও আগ লেগে যায় পাড়ায় সে
হেঁটে গেলে ৷ লেক থেকে পাখিরা
উঠে ডানা খুলে তাকে দেয়

অসুর সময় আড় চোখে দেখে সেই
মহাসন্ধিস্থান বলির আগে ও পরে 
সতিচ্ছেদ । দক্ষিণ দিক থেকে গড়িয়ে নামছে রক্ত

তমসার ভিতর ভীমা হাহাকার করে
ওঠে ৷ ঠেকের আলোচনা চা এর পেয়ালায় শেষ উপচে তোলে নর্দমার জল ৷ জলীয় জীবনের আশ্রয় অবশেষে মেঘ

ঘন অন্ধকারের খড়্গ কেটে কেটে
সেই জলেই লিখে নেয় দেবীজন্মের ইতিহাস






আগুনের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছেন দেবী৷
বিশোকের পর পড়ে আছে ভস্মাধার মৃত চাঁদের আলোয়
লয়ের পর সৃষ্টি চারা গাছের হাত
ধরে শীতল ছায়াকে চারিয়ে দেয়
আর একশো আট পদ্মের ভিতর
জেগে কুমারী
মারি ও মহামারীর পর এই যে ভিড় আমিকে আমাদের করে নেয়
শরণাগতদিনার্ত পরিত্রাণপরায়নী
কিন্তু ছুঁয়ে যায় শরনার্থী বেদনা
নাম হারিয়ে যায় নবমী নিশি ফুরানোর পর ভোটার তালিকায়


১০


জলের মুখে প্রতিমা মা থাকে না । না জানা সাঁতারে ডুবে শেষে হয় ভিজে
কাঠামো । মোচড় দিলেও এ এক শাশ্বত কলা মোচা ছাড়ানোর পর
রব নিভে গেলে নীরবতার চন্দ্রমুখী পার্বতী খুঁজে হয়রান । রান আছে
চতুর্দিকে । কে রাখে ধরে যে আনন্দ হারিয়ে যায় জলে
লেখে নোলক হারানোর কথা সেই চলে গেলে অনুভবে হার হার লাগে ।
গেল বছরের নাক মুখ চোখ চোখে বসে আছে তবুও হৃদয়
দয়া ভুলে নির্দয় দয়াময়ীর শরীর নদীতে ভাসিয়ে আওয়াজ তোলে
আসছে বছর

No comments:

Post a Comment