Friday 1 September 2017

সম্পাদকীয়

নির্জনে সোনার হরিণ...





" কথাওয়ালা এসেছে চাতুর্য নিয়ে
আমাকে দেখাচ্ছে দিকবদলের প্রলোভন
ঘন মেঘের ভেতর ঢুকে পড়েছে মনুষ্যত্ব
নদীর দীর্ঘ রেখা জানে কান্নার ইতিহাস
পোস্টার খুঁজছে শ্রমজীবী মানুষের হাত
আমি খুঁজছি অনাবিষ্কৃত ভূখন্ড পবিত্র "



                 (কবিতা: শূন্যতার লাথি-৪ ,তনুময় সরকার)


◻◻

যুগের হাত ধরে বাংলা কবিতা অনেক জাতের কবিকে প্রত্যক্ষ করেছে..। এই মুহূর্তে আমি যেটুকু উপলব্ধি করতে পারি তার ব্যাপারটা যদি খুলেই বলি তো তাহলে এই কবির জাতকে দুটো ভাগে ভাগ করছি ।

              (১) যান্ত্রিক কবি ,
              (২) সাধক কবি  ।

প্রথমেই বলি রাখি , এই দুটোর সাথে কোনোভাবেই রাজনীতি কিংবা ধৰ্মকে টানবেন না..। এই দুটো বিষয়কে আলাদা ভাবে দূরে সরিয়ে রেখেই অন্তহীন চলছে..। আসলে চলতে চেষ্টা করছে..। এই দুই ধরণের কবির ভাগটি নিতান্তই আমার নিজস্ব উপলব্ধি । আমি জানিনা এটা কার কথা , কেউ বলেছে কিনা । সে বিষয়ে আমি যাচ্ছি না , যেতেও চাইনা । আমি ওপেন একটা স্পেস রাখছি শুধু...
                 প্রলোভন । বিশ্বায়ন চারিদিকে । প্রতিটা কবিতা লিখিয়ে মানুষই কিছু না কিছু নতুন করার আশায় নিজেকে উজাড় করার কারিগর গড়ে তুলতে চাইছে । কেউ পারছে কেউ পারছে না । যারা পারছে , তাদের কেউ সঠিক কেউ বা হয়তো আগামীতে সঠিক প্রমাণিত হলেও হতে পারে । আমাদের কাজ আমাদের দায়িত্ব এই দুয়ের ডেডিক্যাশনকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া । যে বিশেষ কারণে দুই প্রকার কবির জাত টানলাম সেটা একটু খুলে বলি..। এখানে যান্ত্রিক কবি বলতে কী বলতে চাইছি না সেটা বলে নিই ।  যান্ত্রিক কবি মানে এটা তাকে বলছি না যিনি মেশিনের মতো লিখেই চলেছেন । তাকে বোঝাচ্ছি যিনি নিজের একটা কবিতা লেখার জন্য অন্য কোনো তথাকথিত বড়ো কবির ওপর নির্ভরশীল । যিনি স্বজ্ঞানে না , লিখে চলছেন নিজের গোঁড়ামি নিয়ে । যিনি উত্তরণের কথা না ভেবে, চান নিজেকে একটা মেশিনের মতো ,যিনি চান লেখা লেখাই । উত্তরণ , সময়ের উপযোগী , নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা , লেখার জন্য পরিশ্রম করা যার কাছে ঠিকঠাক গ্রহণযোগ্য না । উল্লেখযোগ্য একটা কথা বলি , অন্তহীন এমন কবিকে প্রশ্রয় দিতে চায়না । এমন আরো অনেক গুণাবলী এই বিশেষ জাতের কবির রয়েছে । যারা প্রলোভন দেখিয়ে রোজ রোজ আগামীর বীজকে নিজের স্বার্থে, প্রকাশ্য ঝংকারের ছন্দে মেতে উঠতে শেখায় তাদেরও প্রশ্রয় দেয়না ।  কবি হয়ে ওঠার পথে অন্য কবিকে পাঠকমহলে অপদস্থ করার পক্ষপাতিত্ব করার জন্যও প্রশ্রয় দেয়না ।
                    কবি একজন সাধক । কবি একজন আবিষ্কারক । আমি নিজে মন থেকে বিশ্বাস করি । কবিতা লেখা হয় নির্জনে । একাকিত্বে । তার জন্য আক্রমন ,অন্যকে নিঃশেষিত করার সঙ্গতি যারা দেয় ওই মুহূর্তে তাদের অনেকগুলো সত্ত্বার জন্ম দেয়। আমি বিশ্বাস করি কবি কবিই । কবিতা লেখার মুহূর্তে কবির একটাই সত্ত্বা । সে কবি । কারো সমালোচনা করতে পারি , অবশ্যই করতে পারি কিন্তু প্রত্যেকের একটা ডেডিক্যাশন থাকে সেটাকে সম্মান জানিয়ে । আমি ঠিক জানিনা ওভাবে কবিতা হয় কিনা ! কিংবা হতে পারে আমি পুরোপুরি ভুলভাল বকে চলেছি । আমি ছোট একজন সাহিত্য কর্মী । যার চর্চাটা কয়েকবছরের , কয়েক জায়গায় সীমিত । তবে যেটুকু অধ্যায়ন করে জেনেছি , তাতে কোনোদিন কোথাও পড়িনি জীবনানন্দ দাশ বুদ্ধদেব বসু এদের মতো কবিরা কারো ব্যক্তিত্বে আঘাত করেছে (রবীন্দ্রনাথের কথা ছেড়েই দিলাম)। আমি এদেরকেই মানি কবি , কবি...। কবি সমালোচনা করবে কবিতা দিয়ে । উত্তর দেবে কবিতা দিয়ে । কবি তার ভেতরের আলোড়ন বাইরে আনবে কাব্যশক্তির উৎসমুখ নিয়ে । আমি বিশ্বাস করি না এর বাইরে আর কিছু দরকার বলে । আমারা  কবিতার কারিগর , আমরা কবিতার শিল্পী । শিল্পে সাধনা লাগে তাবেদারী লাগেনা । তাই এটাই বলা ,আমরা কি পারি না নিজেদের সুস্থ করে সুষ্ঠ একটা কবিতার পরিবেশ তৈরি করতে যেখানে পাঠকরা কবি বলতে খারাপ চরিত্রের মানুষ বলবে না , কবিরা একে অপরকে সম্মান না করতে পারলেও আক্রমণ করবে না ? পারি না ? সত্যিই পারি না...



       এবার আসি অন্য দিগন্তে । অন্তহীন আগের বছরের জুলাই মাসে প্রথম অনলাইন সংস্করণ বের হয় । উল্লেখ্য বলে রাখি , অন্তহীন প্রথম আত্মপ্রকাশ করেছে মুদ্রণ সংস্করণে..। মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিল মে মাস নাগাদ..। এই দীর্ঘ সময়ে পেয়েছি অনবদ্য কিছু কবিদের ,পেয়েছি এমন কিছু কবিতা যাদের জন্য বিশেষ কোনো বিশেষণের দরকার পড়েনা । একবছর পেরিয়ে আজ ভাবতে বসলে পেছনটা একটা নস্টালজিক গন্ধ ভেসে আসে..। অন্তহীনের মুদ্রণ প্রাকলগ্ন থেকে যারা রয়েছে তাদের কিছু কিছু নাম এখনো একইভাবে সাথে আছেন যেমন শ্রীকান্ত ভট্টাচার্য সৌমিত্র রায়..। অন্তহীন প্রকাশকাল থেকেই যে কবি সর্বশেষ সংখ্যা পর্যন্ত কোনোরকম আভিজাত্য না দেখিয়েই মাটির মানুষের মতো সম্পাদকের সাথে থেকেছেন তাদের মধ্যে কিছু কবির নাম না করলেই নয়..। এমন কিছু কবি যেমন - তৈমুর খান দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ।
                অন্তহীন অনলাইনে যখন প্রথম আত্মপ্রকাশ করে সেই সময় থেকে যারা সাথে আছেন তাদের কিছু নাম না বললেই নয় , সৌম্যদীপ রায় , দীপ রায় , বিশ্বজিৎ দাস, মহাদেব নাথ । এক্ষেত্রে বলে রাখি , দীপদা প্রথম থেকেই সাথে থেকেছে । একটা অনলাইন পত্রিকা কেমন ভাবে গড়ে উঠতে পারে কেমনভাবে লেখা নির্বাচিত করা যায় সে বিষয়ে সতর্ক করেছে । আমি অনেক কৃতজ্ঞ এমন অনেকের কাছে । অন্তহীনের পথ চলায় সাথে পেয়েছি কুমারেশ তেওয়ারী ,সুবীর সরকার ,রাহুল গাঙ্গুলী, রুমা ঢ্যাং ,পার্বতী রায় , দীপ্তি চক্রবর্তী, সুকান্ত ঘোষাল, রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়,শুভদীপ সেনশর্মা । এনারা প্রথম থেকে অন্তহীন পত্রিকার পরিবার। পরে পরে আরো অনেককে পেয়েছি সবার নাম হয়তো এই সীমিত পরিসরে আনা সম্ভব হলো না..। তাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা । পেয়েছি অয়নকে । সহ-সম্পাদকের আসনে বসানো কোনো ভুল যে নয় সেটা প্রমাণিত । ভালো মতোই বুঝতে পারছেন সচেতন ভাবে দুজনের নাম না বলে এগিয়ে এসেছি  , বললাম এতগুলো কথা । দুজন । মুরারি সিংহ , আফজল আলি । অন্তহীনে যারা যুক্ত আছেন সবাই জানেন আর বেশি কিছু বলতে হবে না..। কোনো বেশি বলছি না।মুরারিদাকে মেদিনীপুরে কয়েকবার সামনাসামনি পেয়েছি । বুঝেছি ,শিখেছি অনেক । আফজলদা তো দ্বিতীয় সংখ্যা থেকেই সরাসরি একটা অন্যমাত্রায় অন্তহীনের সাথে যুক্ত আছেন..। সাহস জুগিয়েছেন । এই দুজনের কাছ থেকে যা পেয়েছে অন্তহীন কিংবা অন্তহীনের সম্পাদক তা অনস্বীকার্য । সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ এভাবে একবছর আমাকে সহ্য করে লেখা দিয়ে সাহায্য করার জন্য..। অন্তহীন কবিদের আগে নয়..। কবিদের সাথে , কবিদের অন্তরে থাকতে পছন্দ করে..।



কিছু কথা বলি , প্রথম কয়েকটা সংখ্যায় হয়তো ঠিকঠাকভাবে মনোনয়নের কাজ খোলামনে করতে পারিনি । কারণ সেভাবে লেখা জমা হয়নি । মাঝে কয়েকমাস বন্ধ রাখি । তারপর নতুন করে শুরু করি । এখন সত্যি বলছি , বহু বহু লেখা দিয়েছেন আপনারা । দিয়ে চলেছেন আপনারা । আগামীতেও দেবেন এমন আশা রাখি । কিন্তু কোনোভাবেই অন্তহীন চায়না ,লেখা নিম্নমানের অথচ পত্রিকার পাতায় সুযোগ পেয়ে যাবে..। আমাদের সমস্ত লেখা প্রকাশ করতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই..। আমরা চাই নিরেট একটা কবিতার পরিবেশ তৈরি করতে । প্রায় ৫০এর কাছাকাছি আমন্ত্রিত কবিদের কাছ থেকে লেখা চেয়েছি আগ্রহ জানিয়েছিলাম । কিন্তু লেখা পৌঁছতে পৌঁছতে সেই সংখ্যাটা ৪০এর কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে...। যারা দিয়েছেন তাদের সমন্ধে আর কীই বা বলতে পারি..। অনেক অনেক শুভকামনা রাখে অন্তহীন । যারা দিলেন না তাদের অনেকে হয়তো অন্তহীনকে সেভাবে আপন করতে পারেননি..। কিংবা আমারই ব্যর্থতা সেভাবে আপনাদের মনের মধ্যে অন্তহীনকে জায়গা করে দিতে পারিনি..। সে বিষয়ে অত্যন্ত দুঃখিত আমি..। আগামীতেও সবাই সাথে থাকবেন..। এভাবে একবছর যেন শত বছর পর্যন্ত আপনাদের লেখা প্রকাশের অঙ্গীকার হয়ে উঠতে পারে আপনাদের অন্তহীন ।  কৃত্যজ্ঞতা স্বীকার করি সব অলংকারিককে..। এই সংখ্যায় পত্রিকার সমস্ত লেখায় থাকছে রুমা ঢ্যাং এর অলংকরণ..। এতক্ষণ আমার বকবকানি পড়ছেন আমি কৃতজ্ঞ..। সবাইকে অন্তরের গভীর থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা । সবাই ভালো থাকবেন..।
                 

4 comments:

  1. রুমা ঢ্যাং1 September 2017 at 00:51

    দারুন সম্পাদকীয় হয়েছে। সুজিত মান্না যে খুব ম্যাচুয়র হচ্ছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও ভালো হবে আশা আছে ভরসা আছে। এভাবেই এগিয়ে চল।

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর লেখা।আন্তরিক ভালোবাসা।যতদিন লিখবো অন্তহীন ও পাঠক ও নিজেকে প্রতিবার ভিন্ন স্বাদের লেখা দেবো

    ReplyDelete
  3. অনেক অনেক ধন্যবাদ...

    ReplyDelete
  4. অন্তহীনের পাশে আছি সর্বদা। খুব ভালো কাজ করছো সুজিত এবং অয়ন। প্রতিমাসে যথাসময়ে একটা পত্রিকা প্রকাশ করতে সত্যিই দম লাগে।

    ReplyDelete